স্বর্ণ জয়ন্তী শহরি রোজগার যোজনার লক্ষ্য শহরাঞ্চলের বেকার, স্বল্প রোজগারের যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করে জীবিকার নিজস্ব উদ্যোগ বা চাকরি পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। এই যোজনার কাজ হয় পৌরসভা বা পৌরনিগমের মতো স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থার মাধ্যমে। এর তহবিল কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ৭৫:২৫ ভাগে বণ্টিত। অর্থাৎ প্রকল্পের ৭৫ ভাগ অর্থ মঞ্জুর করে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকি ২৫ ভাগ দেয় রাজ্য। এই যোজনার আওতায় দু’টি প্রকল্প রয়েছে —
এই যোজনা মূলত গোষ্ঠীনির্ভর স্বনির্ভরতার ভাবনাকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় গোষ্ঠীগুলিকে উৎসাহ দিয়ে তাদের উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রকল্প দু’টির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই কারণে এই যোজনার রূপায়ণে প্রতিবেশী গোষ্ঠী বা নেবারহুড গ্রুপ (এনএইচজি), সম্প্রদায় উন্নয়ন সমিতি বা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (সিডিএস), প্রতিবেশী কমিটি বা নেবারহুড কমিটি (এনএইচসি) গঠন করার কথা বলা হয়েছে। কারা এই প্রকল্পের সুযোগ পাবে, কী ভাবে সুযোগ গ্রহণ করবে তা ঠিক করে সিডিএসগুলি। প্রকল্প রূপায়ণে দেখভাল করার কাজ করে তারা। নির্দিষ্ট এলাকায় কোন ধরনের কাজ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা খুঁজে বের করাও সিডিএসের কাজ। গোষ্ঠীনির্ভর কাজকর্ম, সঞ্চয়ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সিডিএসগুলি ক্রেডিট সোসাইটিও গঠন করতে পারবে। এরা এক দিকে যেমন স্থানীয় ভাবে তহবিল গঠন করবে আবার আর্থিক সংস্থাগুলির সঙ্গেও সম্পর্ক রেখে চলবে। এই সোসাইটিগুলিকে সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট বা অন্য সমমানের আইন অনুযায়ী নথিভুক্ত হতে হবে।
এই প্রকল্পে তিনটি সুনির্দিষ্ট দিক রয়েছে:
সম্ভাব্য উপকৃতদের তালিকা তৈরি হয়ে গেলে তা পুরসভার অফিসে এবং উদ্দিষ্ট এলাকায় টাঙিয়ে দেওয়া হবে। মহিলারাই পরিবারের প্রধান এমন পরিবারগুলিকে উপকৃতদের তালিকায় সব চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। যে সব পরিবারের শীর্ষে বিধবা, বিবাহ বিচ্ছিন্না, একক ভাবে জীবনযাপনকারী মহিলা বা মহিলাই প্রধান রোজগারকারী, এমন পরিবারগুলি মহিলা-প্রধান পরিবারের আওতাভুক্ত।
এই গোষ্ঠীগুলি ১,২৫,০০০ টাকা বা মোট প্রকল্প খরচের ৫০ শতাংশ অনুদান হিসাবে পাবে। যেখানে গোষ্ঠীগুলি স্বনিযুক্তি প্রকল্পের পাশাপাশি ক্রেডিট সোসাইটি চালু করতে পেরেছে সেখানে তারা চক্র-তহবিল হিসাবে এককালীন ২৫ হাজার টাকা অনুদান পাবে। (প্রতি সদস্য পিছু সর্বোচ্চ ১০০০টাকা)।
চক্র-তহবিল কাজে লাগিয়ে যে কাজ করা যায়
সেবাকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা দেওয়া হয়। এই সেবাকেন্দ্রগুলি কাজের জায়গা বা উপকৃতদের পণ্য বাজারজাত করার স্থান হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। স্থানীয় সিডিএস এই সেবাকেন্দ্রগুলি নিয়মিত নজরদারির মধ্যে রাখবে। সেবাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমির ব্যবস্থা করবে কোনও স্থানীয় স্বশাসিত প্রশাসন (পুরনিগম বা পৌরসভা) বা অন্য কোনও এজেন্সি। আরবান ওয়েজ এমপ্লয়মেন্ট প্রকল্পভুক্ত বিধি মেনে এগুলিকে নির্মাণ করতে হবে। স্বনিযুক্তি প্রকল্পের জন্য মঞ্জুর করা অর্থের দশ শতাংশ সেবাকেন্দ্রগুলির নির্মাণে কাজে লাগো যাবে।
প্রশিক্ষণ
এই প্রকল্প রূপায়ণে যে সব ব্যক্তি নিযুক্ত হবেন (রাজ্য সরকারি কর্মচারী, পৌরসভা বা পৌরনিগমের কর্মচারী, সিডিএস কর্মী) তাঁদের প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ৫ শতাংশ খরচ করা যাবে। ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের অন্তর্গত জাতীয় প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজ্য সরকারকে এ ধরনের প্রশিক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
প্রশিক্ষণের সময় যাতে সাম্প্রতিক তথ্য পরিবেশন করা হয় সে দিকে নজর দিতে হবে। রাজ্যগুলিকে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে নেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের ‘সুডা’ (এসইউডিএ) বা ‘ডুডা’র (ডিইউডিএ) আওতায় রাজ্যগুলি বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে যাতে তারা পরবর্তীকালের প্রশিক্ষক হিসাবে তৈরি হন। বাইরের এজেন্সির উপর নির্ভর না করে একটি নির্দিষ্ট সংস্থাকে আগে থেকে প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিলে প্রশিক্ষণের মধ্যে অনেকটা হাতেকলমে শিক্ষার আবহ তৈরি করা সম্ভব।
তথ্য, শিক্ষা এবং সংযোগ সংক্রান্ত
মোট প্রাপ্ত তহবিলের ২ শতাংশ রাজ্যগুলি উপরোক্ত খাতে খরচ করতে পারে। সংশ্লিষ্ট জাতীয় এজেন্সিগুলি এবং ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কাছে প্রাপ্ত যাবতীয় তথ্যর যাতে পূর্ণ সদ্ব্যাবহার হয় সে দিকে রাজ্যগুলিকে নজর রাখতে হবে।
প্রশাসনিক ও দফতর সংক্রান্ত খরচ
রাজ্যগুলিকে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হবে। এ ব্যাপারে মোট বরাদ্দকৃত অর্থের পাঁচ শতাংশের বেশি খরচ করা যাবে না। স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাকে এই প্রকল্পের আওতায় যে তহবিল দেওয়া হয়েছে তার পাঁচ শতাংশের বেশি তারা প্রশাসনিক ও দফতর সংক্রান্ত খরচে ব্যবহার করতে পারবে না। বাকি টাকা যদি প্রয়োজন হয় তা হলে তা স্থানীয় ভাবে সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। এর উপর স্থানীয় সংস্থাগুলি বরাদ্দ অর্থের ৩ শতাংশ তাদের কাঠামো উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে তবে সে ক্ষেত্রে তাদের অতি অবশ্যই আলাদা উইপিই সেল গঠন করতে হবে।
কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট সোসাইটি বা সিডিএসগুলি তাদের এলাকায় সমীক্ষা করে কী কী ন্যূনতম পরিষেবা রয়েছে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করবে। যে পরিষেবাগুলি তালিকাভুক্ত নয় সে দিকে প্রথমে জোর দিতে হবে। এর পর কী নির্মাণ পরিকাঠামো নেই (ফিজিকাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার) তা চিহ্নিত করা হবে। ইআইইউএস প্রকল্পে ন্যূনতম পরিষেবা বলতে যা চিহ্নিত করা হয়েছে এখানে সেগুলিই গুরুত্ব পাবে। গুরুত্ব অনুযায়ী সিডিএসগুলি পরিষেবাগুলিকে তালিকা ‘ক’, তালিকা ‘খ’ নামে দু’টি তালিকায় নথিভুক্ত করতে পারে। অন্য কোনও এজেন্সি এই তালিকা বদলাতে পারবে না। এই তালিকাকেই চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে হবে। ন্যূনতম পরিষেবা, যা ওই এলাকায় নেই তার নাম নথিভুক্ত করে ‘ক’ তালিকা প্রস্তুত করা হবে। ‘খ’ তালিকায় অন্যান্য পরিকাঠামোগত নির্মাণ যা ওই এলাকায় প্রয়োজন তা নথিভুক্ত হবে। বছরের প্রথমে এই তালিকাগুলি এবং তার সঙ্গে সিডিএসগুলির মন্তব্য একত্র করে স্থানীয় টাউন পভার্টি ইরাডিকেশন সেল বা শহর দারিদ্র্য দূরীকরণ সেলকে জানাতে হবে।
এই সেল গোটা শহরের জন্য প্রাপ্ত তালিকাগুলি একত্র করবে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুমিত খরচের হিসাব বানাবে। প্রথমে ন্যূনতম পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করা হবে। পরে ‘খ’ তালিকা অনুযায়ী হিসাব তৈরি করা হবে। শহরের জন্য মোট বরাদ্দকৃত অর্থ কত সেটা মাথায় রেখেই সেল হিসাব প্রস্তুত করবে।
রাজ্য প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য ইউএলবি বা ডুডাকে ক্ষমতা দেবে।
ইউএলবির ক্ষেত্রে তারা সিডিএসের প্রদেয় তালিকা খতিয়ে দেখবে এবং প্রয়োজনীয়তার নিরিখে অনুমোদন দিয়ে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার জন্য ডুডার কাছে পাঠিয়ে দেবে। ডুডা প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে আগে ন্যূনতম পরিষবাগুলির উপর জোর দিয়ে তালিকা বিচার করে দেখে অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। সাধারণত মোট প্রাপ্ত তহবিলের ২০০ শতাংশের বেশি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয় না।
কাজগুলি রূপায়িত হবে সিডিএসের মাধ্যমে। তবে তার উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইউএলবিগুলির হাতে। ইউএলবি নির্মাণের গুণাগুণের উপর তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখবে। কাজ করতে হবে বিভাগ অনুযায়ী এবং কাজের নির্দেশিকাগুলি মেনে চলতে হবে। যেমন, পুঙ্খানুপুঙ্খ মাস্টার রোল তৈরি করা ইত্যাদি। যেখানে কাজের আলাদা বৈশিষ্ট্যের জন্য বিভাগের মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব নয়, সেখানে আলাদা এজেন্সিকে সরকারি বিধি ও টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োগ করা যেতে পারে। মোদ্দা কথা হল যে কাজে হাত দেওয়া হচ্ছে তা যেন সময়মতো শেষ হয় এবং কোনও কাজ যেন অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে না থাকে। যদি কাজ করতে গিয়ে বরাদ্দ টাকার চেয়ে বেশি টাকা লাগে সে ক্ষেত্রে স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থা (ইউএলবি) বা ডুডাকে কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে হবে। দরকার পড়লে অন্য প্রকল্পের টাকা এই খাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
২ হাজার চিহ্নিত পরিবার পিছু একজন পাড়া ভিত্তিক সংগঠক নিয়োগ করা হবে। সচরাচর এ ধরনের পাড়া ভিত্তিক সংগঠক হন মহিলারা। তাঁকে সর্বক্ষণের কর্মী হতে হবে। হয় তাকে ইউএলবি বা সরকারি কোনও অফিস থেকে ডেপুটেশনে নেওয়া যেতে পারে নয়তো তাকে কাজে পূর্ণ সময়ের জন্য নিয়োগ করতে হবে অথবা তাঁকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা যেতে পারে। এঁদের কাজ হল ---
শহর ভিত্তিক প্রোজেক্ট অফিসারের আওতায় একটি শহর দারিদ্র্য দূরীকরণ সেল স্থাপন করতে হবে। সিডিএসগুলির কাজকর্মের দায়িত্ব বর্তাবে এই প্রজেক্ট অফিসারের উপর। তিনিই তাদের কাজকর্মের মধ্যে সমন্বয়সাধান করবেন। তিনিই তাদের কাজকর্মের মধ্যে সমন্বয়সাধান করবেন। বিভিন্ন বিভাগীয় দফতরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার কাজটিও তাঁকেই করতে হবে।
এই প্রকল্পের আওতায় শহরের পৌরসভা বা পৌরনিগমের এলাকাভুক্ত অঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে কার্যকর জনসম্পদ তৈরির জন্য দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা ব্যক্তিদের মজুরি নির্ভর কাজে লাগানো হবে। ১৯৯১ সালের জনগণনা অনুযায়ী যে সব স্থানীয় প্রশাসনের আওতায় পাঁচ লক্ষের কম নাগরিক বাস করে সেখানে এই প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে। এই প্রকল্পে উপাদান এবং শ্রমের অনুপাত হবে ৬০:৪০। নিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যেকটি অঞ্চলের জন্য সময়ে সময়ে নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি প্রদান করা হবে। এই প্রকল্পটি রাজ্যস্তরের এআইইউএস প্রকল্প এবং এনএসডিপির সঙ্গে সংযুক্ত ভাবে রূপায়িত করা হবে। এটি অবশ্য উপরোক্ত প্রকল্প বা অন্য কোনও প্রকল্পকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চালু করা হয়নি।
উৎস : পোর্টাল কন্টেন্ট দল
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020
স্বর্ণ জয়ন্তী শহরি রোজগার যোজনা সম্বন্ধে জানানো হয়...