পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ১০ থেকে ১৯ বছরের নীচে রয়েছে ১.৭৩ কোটি মানুষ। এর মধ্যে ৪৮.১১ শতাংশ মহিলা। ডিএলএইচএস-৩ সমীক্ষা অনুযায়ী, শিশু বিবাহের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চম স্থানে রয়েছে। রাজ্যের ৫৪.৭৪ শতাংশ সদ্য বিবাহিত মহিলার বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের কম বয়সে (২০০৭-০৮-এর তথ্য অনুযায়ী)। গ্রামাঞ্চলে এই হার ৫৭.৯ শতাংশ। এ ব্যাপারে অগ্রগণ্য জেলাগুলি হল, মুর্শিদাবাদ (৬১.০৪ শতাংশ), বীরভূম (৫৮.০৩ শতাংশ), মালদা (৫৬.০৭ শতাংশ), পুরুলিয়া (৫৪.০৩ শতাংশ)। দ্য সিলেকটেড এডুকেশন্যাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০১০-১১ (মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক, ভারত সরকার) অনুযায়ী,পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুটের হার প্রথম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে ৬৩.৫ শতাংশ। ছাত্রদের মধ্যে ৬৪.৯ শতাংশ। ছাত্র বা ছাত্রী উভয় ক্ষেত্রেই এই গড় জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি। এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রীদের স্কুলে ধরে রাখতে এবং বাল্যবিবাহ রুখতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ২০১৪-এর ১৪ আগস্ট কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১২০০ স্কুলের ১৬ লক্ষ ছাত্রী এই প্রকল্পে নথিভুক্ত হয়েছে। এই প্রকল্পের নোডাল এজেন্সি নারী ও শিশু কল্যাণ দফতর।
১৮ বছরের নীচে যাতে মেয়েদের বিবাহ না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রকল্প চালু করেছে। গরিব ঘরের মেয়েদের যাতে টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ না হয় তা দেখাও এই প্রকল্পের লক্ষ্য। এই প্রকল্প থেকে বছরে এক বার পাঁচশো টাকা করে বৃত্তি পাওয়া যাবে। ১৮ বছর পর্যন্ত বিয়ে না করে থাকলে ও পড়াশোনা চালিয়ে গেলে এককালীন অনুদান পঁচিশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।
১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে এবং পারিবারিক আয়ের সীমা বছরে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বা তার কম, তারা এই বৃত্তি পাবে। শুধুমাত্র বয়সই অনুদান পাওয়ার একমাত্র যোগ্যতা নয়। যে সব মেয়ে অষ্টম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করছে বা বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যুক্ত একমাত্র তারাই এই বৃত্তি পাবে।
অবিবাহিত যে সব মেয়ের ১ এপ্রিল ২০১৩ বা তার পরে বয়স ১৮ বছর কিন্তু ১৯ বছরের কম তারা এই অনুদান পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে, তাদের সরকারি বা সরকার অনুমোদিত বিদ্যালয়ের বা মুক্ত বিদ্যালয়ের অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরতা হতে হবে। অথবা তার সমান কোনও বৃত্তিমূলক\কারিগরি শিক্ষায় নাম লেখানো থাকতে হবে বা প্রশিক্ষণ নিতে হবে। অনুদানগ্রহণকারীর বার্ষিক পারিবারিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কম হতে হবে। জে.জে হোমে থাকা (জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের আওতাধীন হোম) মেয়েরা এই অনুদান পেতে পারে কিন্তু বার্ষিক পারিবারিক আয়ের শর্ত তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আবেদনকারীর পিতামাতা শারীরিক ভাবে ৪০ শতাংশ বা তার বেশি অসমর্থ হলে এই শর্ত প্রযোজ্য নয়।
সমস্ত মাধ্যমিক - উচ্চমাধ্যিমক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় কন্যাশ্রীর ফর্ম পাওয়া যাবে। মহকুমা শাসকের অফিস, ব্লক অফিসেও এই ফর্ম লভ্য। বিধাননগরের সমাজকল্যাণ দফতরের কমিশনারেট থেকেও ফর্ম তোলা যেতে পারে। কলকাতা পুরসভার কার্যালয়গুলিতেও কন্যাশ্রীর ফর্ম লভ্য। গ্রামাঞ্চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, আশা কর্মীদের কাছ থেকেও ফর্ম নেওয়া যেতে পারে। ফর্মের জন্য কোনও দাম লাগে না।
আবেদনপত্র বা ফর্মের সঙ্গে মেয়েটির পাসপোর্ট সাইজের ছবি, বয়সের প্রমাণপত্র, যে প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী তার প্রমাণপত্র, পারিবারিক আয়ের প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়।
মিউনিসিপালিটি বা গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে নেওয়া মেয়েটির জন্ম সার্টিফিকেট গেজেটেড অফিসার বা গ্রুপ-এ অফিসার বা এলাকার সাংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলারকে দিয়ে প্রত্যয়িত করাতে হবে।
বৃত্তির জন্য আবেদন করার সময় মা বা বাবা বা অভিভাবক বা মেয়েটি যাঁর কাছে থাকে তিনি একটি ফর্মে লিখে দেবেন যে মেয়েটি অবিবাহিত এবং সেটি গেজেটেড অফিসার বা গ্রুপ - এ অফিসার বা এলাকার সাংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলারকে দিয়ে প্রত্যয়িত করাতে হবে। এককালীন অনুদান নেওয়ার সময়ও একই পদ্ধতি অনুসৃত হবে।
মা বা বাবা বা অভিভাবক যদি স্বরোজগারী হন তা হলে তিনি লিখে দেবেন কোথা থেকে কত টাকা বছরে রোজগার করেন। কাগজটি গেজেটেড অফিসার বা গ্রুপ - এ অফিসার বা এলাকার সাংসদ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলারকে দিয়ে প্রত্যয়িত করাতে হবে।
মেয়েটি যদি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয় অথবা মেয়েটির মা বা বাবা দু’জনেই মারা গিয়ে থাকেন তা হলে আয়ের ক্ষেত্রে ছাড় আছে।
ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুটের প্রবণতা ক্রমশই কমছে। শুধু তা-ই নয়, স্কুলছুটের অসুখ কাটিয়ে দেশের সেরা ৬-৭টি রাজ্যের মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছে এ রাজ্যের পড়ুয়ারা। তাদের মধ্যে বেশি সাফল্য মেয়েদের শিক্ষার মাপকাঠিতে। সেখানে রাজ্যে স্কুলছুটের হার আরও কম। তামিলনাডু, কেরালা, মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশের পরেই। গোটা দেশের নিরিখেও বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। জাতীয় স্তরে ৩.২৩% ছাত্রী স্কুলছুট হয়। ছেলেদের হার (২.৭৭%) কিছুটা কম। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ৩.৫১% ছেলে ও ১.২৮% মেয়ে স্কুলছুট। অনেকের মতে, এই সাফল্যের অন্যতম কারণ কন্যাশ্রী প্রকল্প। কন্যাশ্রী প্রকল্প অনুসারে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা নাম নথিভুক্ত করলেই বছরে ৫০০ টাকা মেলে।
২০১৩-১৪ অর্থ বর্ষে এই বার্ষিক বৃত্তি পেয়েছে ১৬,৬৪,৪৩৯ জন। অন্য দিকে দ্বাদশ শ্রেণির পর কলেজে ভর্তির নথি পেশ করলে পাওয়া যায় ২৫,০০০ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থ বর্ষে এই এককালীন বৃত্তি পেয়েছে ১,০৮,১৯৩ জন।
দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ২০১৪ সাল ধরে এই সমীক্ষা করা হয়েছিল। দেশে স্কুলছুটের হার কমলেও সংখ্যার নিরিখে তা কম নয়। সব মিলিয়ে ২.৯৭% বা ৬ থেকে ১৩ বছরের ৬০ লক্ষ ৪০ হাজার শিশু স্কুলছুট। সর্বশিক্ষা অভিযানের আওতায় ২০০৫ ও ২০০৯ সালে এই নতুন সমীক্ষায় দেশে স্কুলছুটের হার ছিল যথাক্রমে ৬.৯৪ ও ৪.৫৩ %। তবে দেশে স্কুলছুটের হার সব থেকে বেশি পূর্বাঞ্চলে (৪.০২%), তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওড়িশায় (৬.১০%)। সব চেয়ে কম দক্ষিণ ভারত (০.৯৭%)। পশ্চিমবঙ্গে ২০০৯ সালে স্কুলছুট ছিল ৪.২৭ শতাংশ। তার মধ্যে ছাত্র ১.৮৯% এবং ছাত্রী ২.৩৪%।
রাজ্যের শিশু ও নারী উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ২০ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া কন্যাশ্রী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা আরও দশ শতাংশ কমিয়ে ফেলার লক্ষ্যে এগোচ্ছে রাজ্য সরকার।
মন্ত্রী বলেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা আরও দশ শতাংশ কমিয়ে ফেলার লক্ষ্যে এগোচ্ছে রাজ্য সরকার।
দূর থেকে ভেসে আসছিল ধামসা -মাদলের আওয়াজ৷ ঝাড়গ্রামের কদমকানন এলাকার ঘুটঘুটে অন্ধকার গলি ধরে সেই শব্দ বেয়ে এগোতেই আচমকা হ্যালোজেনের ঝলকানি বনবাদাড় ঘেরা উঠোনে৷ ঘরের কোণে মুখ লুকিয়ে বসে লাজুক কনে৷ আদিবাসী বিয়ের নাচগান এড়িয়ে তখন তিন -চার জন কিশোরী -তরুণী ধৈর্য ধরে বসে পাড়ার শিল্পীদির দাওয়ায়৷ ফেসিয়াল, ভ্রু-প্লাক , হেয়ার -ড্রেসিংয়ের পর্ব মিটিয়ে রুজ -পাউডারের ফাইনাল টাচে সেজে উঠতে তারা মশগুল৷ বর যে এসে পড়ল প্রায় !
সাঁওতাল মেয়ের চুলে গোঁজা পিয়াল বা জবাফুল , চোখে পুরু কাজল আর রুপো বা দস্তার গয়না পরা পাথরকোঁদা রূপের বর্ণনা বাংলা সাহিত্যে ভূরিভূরি৷ কিন্ত্ত কলাবনির জঙ্গলঘেরা গ্রামগুলোয় বিজলিবাতি , পাকা রাস্তার সঙ্গেই পৌঁছে গেছে কৌটো ভরা ফেসক্রিম , ফ্রুটপ্যাক বা শাওয়ার জেল৷ আদিবাসী অধ্যুষিত কাজলা গ্রামে তা না -হলে মহামাড়ো পুজো উপলক্ষে কেনই বা এমন সাজগোজের ঢল ষষ্ঠীদের বাড়িতে! বেলপাহাড়ির ওদলচুয়া গ্রামেও এক ছবি৷ পাড়ার মেয়ে কুহেলির হাতেও তাই কাজের চাপ বিস্তর৷ গল্প হলেও সত্যি!
জঙ্গলমহলের আদিবাসী, উপজাতি এলাকাগুলোয় শহুরে ফ্যাশনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে সানন্দে৷ স্থানীয় মেয়েদের অযত্নে লালিত ত্বকে লালিত্য ফেরাতে, জটপাকানো চুল ছাড়িয়ে হালফ্যাশনের কেশসজ্জায় সাজিয়ে তুলতে, ধুলোমাখা হাত -পা ঘষে -মেজে পরিষ্কার করে ম্যানিকিয়োর -পেডিকিয়োরে ধোপদুরস্ত করতে গিয়ে নিজেরাও আজ স্বনির্ভর, স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন শিল্পী শিট, ষষ্ঠী হাঁসদা , কুহেলি মুর্মু, বনু পাতর, শকুন্তলা কিস্কু, সালমা সোরেন, সুলেখা ডেহুরি, রাইমণি বাস্কে, আশা হেমব্রম, সোহাগী টুডুরা৷ সৌজন্যে , সরকারি প্রকল্প- এথনিক বিউটিশিয়ান কোর্স৷
নিছক সাজগোজের কোর্স নয়৷ সাবেক ‘স্পিরিট ’ বজায় রাখাই চ্যালেঞ্জ এই কাজের৷ কালো -হরিণ চোখে মাস্কারার জাদু ছড়িয়ে , গাল আর থুতনির নীচে ত্বকের মসৃণ জৌলুস টানটান করে আদিবাসী গোল খোঁপাকে আধুনিক রূপ দেওয়া কি চাট্টিখানি ব্যাপার ! রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দন্তরের পরিচালনায় শেহনাজ হুসেনের এই কোর্সের হাত ধরেই জঙ্গলমহলের তফসিলি জাতি /উপজাতির তরুণীরা অন্যকে সাজানোয় এখন পটু৷ আর সেই সূত্রেই সফল পেশাদার হিসেবে ধীরে ধীরে তাঁরা রং ঢেলেছেন নিজেদের বিবর্ণ সংসারগুলোয়৷
আর্থিক ক্ষমতায়নই বটে৷ সংসারে যাঁদের প্রায় কোনও গুরুত্বই ছিল না এককালে, আজ তাঁদের ঢের মর্যাদা রোজগেরে সদস্য হিসেবে৷ মান বেড়েছে সমাজেও৷ ঝাড়গ্রাম মহকুমার প্রান্তিক এলাকাগুলোয় কখন যে নিঃশব্দে ঘটে গিয়েছে আদিবাসী রমণীদের সামাজিক নবজাগরণ, কেউ সে ভাবে খেয়াল করেনি৷ ঝাড়গ্রাম, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, বিনপুর, জামবনি, বেলপাহাড়ির কত নিভু-নিভু ঘরে যে আজ রূপটানের এই তালিম আলো জ্বেলেছে শিল্পী -ষষ্ঠী -কুহেলি -বনু-অসীমা -ঝুমা -রঙ্গিনীদের হাত ধরে , তার ইয়ত্তা নেই৷
‘ভাগ্যিস কোর্সটা করেছিলাম ,’ বলছিলেন কাজলা গ্রামের ষষ্ঠী৷ তাঁর মনে পড়ে যায় ধূসর দিনগুলোর কথা৷ ২০১২ -তে ক্যান্সার যখন ছিনিয়ে নিয়ে গেল বাবাকে , তখন মা -আর দুই মেয়ের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর চেয়েও খারাপ দশা৷ ষষ্ঠী তখন ষোড়শী , সবে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছেন৷ মায়ের জন্য বিএলআরও অফিসের বিধবা পেনশন ফুরিয়ে যেত ফি মাসের ১৫-১৬ তারিখেই৷ পড়াশোনাটা অবশ্য ছাড়েননি ষষ্ঠী৷ গত বছরের গোড়ায় তিন মাসের এথনিক বিউটিশিয়ান কোর্স শেষ করার পর তিনি ইঙ্গিত পেতে শুরু করেন , জীবনের চাকাটা এ বার বোধ হয় ঘুরতে চলেছে৷
রোজগার শুরু দিদিমণি শুক্লা পালের বিউটি পার্লারে৷ সেখানে হাতেখড়ির পর নিজেও এখন সরাসরি বিভিন্ন বাড়ি থেকে ডাক পান কনে সাজানো থেকে শুরু করে আর পাঁচটা রূপসজ্জার চাহিদা মেটাতে৷ ‘পড়াশোনার খরচ সামলে এখন যে মায়ের পাশেও অনেকটা দাঁড়াতে পারছি , সেটাই বড় কথা ,’ আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রীর গলায়৷ জায়গা দেখা হয়ে গিয়েছে৷ পুজোর আগেই দহিজুড়িতে পার্লার খোলার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন তিনি৷
বার বার হোঁচট খেয়েও পড়াশোনা থামাননি বেলপাহাড়ির ওদলচুয়ার মেয়ে কুহেলি কিস্কু৷ দিনমজুরি আর ভাগচাষ করে কোনও ক্রমে সংসার টানেন বাবা৷ অনটন যখন একটু একটু করে শুষে নিচ্ছে মা -ভাই -সহ চার জনের জীবনীশক্তি , তখনই খবর পান বিউটিশিয়ান কোর্সটার ব্যাপারে৷ নতুনডিহিতে পিসির বাড়িতে থেকে কোর্সটা করার পর থেকেই কুহেলি ঠিক করে নিয়েছেন, মরতে দেবেন না নিজের স্বপ্নকে৷ বিয়ের মরসুমে এক -একজন কনে সাজিয়ে দেড় হাজার টাকা আর ফেসিয়াল -হেয়ার ড্রেসিং -ভ্রু প্লাক করে আরও কয়েক হাজার টাকা রোজগার শুরু হতেই স্নাতকোত্তর পড়ার পুরোনো ইচ্ছেটা ফের ডানা মেলতে শুরু করেছে গত বছর রাজ কলেজ থেকে ইংরেজির স্নাতক কুহেলির৷ বিউটি পার্লারকে তাই এখনই কেরিয়ার হিসেবে নয় , কেরিয়ারের সিঁড়ি হিসেবেই দেখতে চান তিনি৷
বাছুরডোবা এলাকার বাপ -মরা মেয়ে শিল্পী শিটের জীবনেও আলো জ্বেলেছে বিউটিশিয়ান কোর্স৷ মা -বোনের অভাবী সংসারে থেকেও রূপটানের প্রতি বরাবরের টান ছিল শিল্পীর৷ তাই সুযোগ পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করতে দু’বার ভাবেননি তিনি৷ বাড়ি -বাড়ি সাজানোর ডাক পেয়ে রোজগার শুরু হতে না হতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাঁকে মাস চারেক আগে৷ দমে যাননি শিল্পী৷ জেলা পরিষদ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শ্বশুরবাড়ির এককোণেই খুলে ফেলেছেন আড়ম্বরহীন একটা পার্লার৷
শিল্পীর স্বামী প্রীতেন্দু সামান্য বেতনে কাজ করেন ঝাড়গ্রামের একটা কাপড়ের দোকানে৷ তাই গোড়াতেই নতুন বৌমার উদ্যোগকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করায় কার্পণ্য করেননি শ্বশুর -শাশুড়ি৷ দিনের ৮ -১০ ঘণ্টা সময় পুত্রবধূর ব্লিচ -ফেসিয়াল-ভ্রু প্লাক -হেয়ার কাটিং -অয়েল ম্যাসাজিংয়ের দুনিয়ায় কেটে গেলেও হেঁসেল সামলানো নিয়ে তাই এতটুকু আপত্তি নেই অরবিন্দ-জ্যোত্স্নার৷ শিল্পীর একটাই আক্ষেপ - মাঝপথে যতিচিহ্ন পড়ে গিয়েছে পড়াশোনায়৷ এ বার অবশ্য ‘গ্র্যাজুয়েশনটা শেষ করবই ’ বলে জানাচ্ছেন তিনি৷
শিল্পী-ষষ্ঠী -কুহেলিদের কল্যাণে আদিবাসী সমাজের মেয়ে -বৌদের একেবারে হাতের নাগালেই এখন রয়েছে বিউটি পার্লার৷ সরকারি বিউটিশিয়ান কোর্স করে পাড়ার মেয়েই যখন হেয়ার ড্রায়ার আর ফেসপ্যাক নিয়ে তৈরি, তখন ব্যয়বহুল শহুরে বিউটি পার্লারে যাওয়ার সঙ্কোচ আর ঝক্কি পোয়ানোর দরকারটাই বা কী! চূড়ামণি হাঁসদা, পুষ্পা মান্ডি, ডুলি সোরেনরা তাই বাজারের অর্ধেক রেটে এখন ‘শিল্পী ’দের দ্বারস্থ৷ অবশ্য আদিবাসী, উপজাতি সমাজের মহিলারাই শুধু নন, এঁদের কাছে আজকাল ভিড় বাড়ছে সকলেরই৷ ‘এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য এ কোর্সের, যে পেশাদার হিসেবে ওই মহিলারা জাতপাতের সঙ্কীর্ণ গণ্ডির ঢের ঊর্ধ্বে এখন,’ বলছেন এই প্রকল্প যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, রাজ্যের সেই প্রাক্তন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস৷
একদিনেই অবশ্য পেশাদার হয়ে ওঠেননি আনকোরা এই বিউটিশিয়ানরা৷ যে বিউটিশিয়ানের কাছে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ঝাড়গ্রাম , গোপীবল্লভপুরের মহিলারা, সেই শুক্লা পাল (চট্টরাজ)-এর অশেষ স্নেহ তাঁর ‘মেয়ে’দের উপর৷ শুক্লার কথায়, ‘যাদের মধ্যে সম্ভাবনা দেখি , তাদের বাছাই করে নিজের সঙ্গে রাখি৷ ওরা আমার কাজ দেখে , তার পর কাজ করতে করতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে৷ আজ এদের অনেকেই ষোলো আনা স্বাবলম্বী৷’ সরকার নিযুক্ত যে বেসরকারি সংস্থা পশ্চিম মেদিনীপুরে এই প্রকল্প পরিচালনা করেছে, তার পক্ষে তন্ময় সিংহ জানান, আপাতত ঝাড়গ্রাম মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় চারটি সেশন হয়েছে৷ কোর্স শেষের পর , আয়না আর চেয়ার বাদ দিয়ে অন্তত মাস তিনেক পার্লার চালানোর মতো সব জিনিসপত্রও সরকারি তরফে দেওয়া হয়েছে সম্বলহীন মহিলাদের৷ তাতে ভর করেই জঙ্গলমহলের প্রান্তিক মহিলারা আজ সম্বল খুঁজে পেয়েছেন নিজেদের , পরিবারেরও ।
পড়াশোনায় বড় ভালো ছিল মেয়েটা৷ মাধ্যমিকে দারুণ রেজাল্ট করেছিল৷ কিন্ত্ত অনটনের সংসার তার পড়াশোনার খরচ আর টানতে পারেনি৷ বেলপাহাড়ির বৈষ্ণবপুরের তাপসীকে তাই বিয়ে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন হতদরিদ্র বাপ-মা৷ দিনমজুরি আর ভাগচাষ করে কোনও ক্রমে সংসার টানেন তাপসীর বাবা লালমোহন মাহাতো৷ আর জঙ্গলের পাতা কুড়িয়ে আর খসলা (এক ধরনের তিল) মাড়াই করে তাঁকে যতটা পারেন সাহায্য করেন মা কনকলতা৷ উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ার খরচ টানার সাধ্য কই! তাই বছর পাঁচেক আগে, বাঁকুড়ার খাতড়ায় সম্বন্ধ দেখে মাত্র ১৬ বছরেই তাপসীকে শ্বশুরবাড়ি পার করে দিয়েছিলেন অভাবী বাপ-মা৷
‘আমাদের ছোট মেয়ে মীনাক্ষীর অবশ্য কপাল ভালো,’ বলছিলেন লালমোহন৷ কেন? সে উত্তরটা দিতে তিনি নারাজ৷ এখন কি অবস্থা শুধরেছে? আয় বেড়েছে সংসারে? ঘোমটা টেনে কনকলতার জবাব, ‘না গো, না৷ কন্যাশ্রী৷ তার ভরসাতেই তো পড়াচ্ছি ছোটটাকে৷ তখন তো আর কন্যাশ্রী ছিল না৷ থাকলে কি আর বিয়ে দিতাম গো বড় মেয়েটার? গত দু’বছর ৫০০ টাকা করে পেয়েছে মীনাক্ষী৷ এ বছর পেয়েছে ৭০০ টাকা৷ সে টাকায় বই-খাতা কেনা হচ্ছে বটে, কিন্ত্ত সবচেয়ে বড় ভরসা ২৫ হাজার টাকা, যা মীনাক্ষী পাবে আরও ক’টা বছর পরে৷
কন্যাশ্রীতে ভরসা রেখে আবার মেয়ে আদরির বিয়ের তোড়জোড়ও সেরে ফেলেছেন বামনডিহার ভবানী কর্মকার৷ ২০১১ -তে আদরির পড়াশোনাটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বাবা ভজহরি আচমকা মারা যাওয়ায়৷ সংসারের রোজগার অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল৷ রোজগার বলতে অবশ্য পাথর ভাঙার কাজ৷ স্বামী -স্ত্রী মিলে তা-ও অবশ্য শ’দুয়েক টাকার আয় ছিল দৈনিক৷ নিজের খাবারের পয়সা বাঁচিয়ে মেয়েকে পড়াতেন ভজহরি৷ কিন্ত্ত ঘোর অপুষ্টি সঙ্গী করে দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনির জেরে একদিন জবাব দিয়ে দিল হার্টের ব্যামো৷
‘মরদটা মরে যেতে সংসারটা ভেসে গেল আমাদের৷ মেয়েকে পড়াব কী করে ! যা আয় হয়, তাতে তো দু’বেলা খাবারই জোটে না,’ পুরোনো কথা মনে পড়লে এখনও চোখ ভিজে যায় ভবানীর৷ সুখ -দুঃখের অভিভাবক পড়শি নরহরি বর্ধন বলছিলেন, ‘এই পরিবারটাকে দেখে মনে হয়, এদের জন্যই বোধ হয় কন্যাশ্রী৷ এই প্রকল্পটা না-থাকলে কপাল পুড়ত আদরির৷’ কপাল পোড়েনি৷ কন্যাশ্রীর ভরসাতেই ফের বামনডিহা স্কুলের খাতায় নাম লেখানো৷ এ বছর ১৯ -এ পা দিতেই এপ্রিলে ২৫ হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে আদরির অ্যাকাউন্টে৷ তার ভরসাতেই ঘাটশিলায় বিয়ে ঠিক হয়েছে আগামী ২৪ আষাঢ় (৯ জুলাই)৷ ৭০ হাজার টাকার বাজেটে সে টাকা যে যথেষ্ট বড় ভরসা, সে কথা নিজেই জানাচ্ছেন ভবানী৷
মীনাক্ষী -আদরিদের মতো কন্যাশ্রী আলো জ্বেলেছে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার বহু পরিবারেই৷ বছরে ৫০০ কিংবা ৭০০ আর সাবালিকা হয়েই ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার গুরুত্ব শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণি বুঝবে না৷ সেটা বুঝতে গেলে এ তল্লাটের দারিদ্র্যের বহর ঠিক কতটা মর্মান্তিক, তা উপলব্ধি করতে হবে,’ মন্তব্য বেলপাহাড়ি(বিনপুর-২)-র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশীবদন মাহাতোর৷ তাই জামবনি মোড়ের চায়ের দোকানি শিবু পরামানিক গত বছর গরমে সানস্ট্রোকে মারা গেলেও হোঁচট খেতে খেতেও শেষ পর্যন্ত থমকে যায়নি লক্ষ্মীর পড়াশোনা৷ যদিও তাঁর মা গীতার আক্ষেপ, ১৯ -এ পা দিলেও ২৫ হাজার টাকা এখনও ঢোকেনি লক্ষ্মীর অ্যাকাউন্টে৷ পাবেন, সেই আশাতেই বুক ঠুকে অবশ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর এ বছর শিলদা চন্দ্রশেখর কলেজে ভর্তি হয়েছেন লক্ষ্মী৷ তাঁরই মতো কন্যাশ্রীর ভরসায় পড়াশোনা চালিয়ে এ বছর একই কলেজে ভর্তি হয়েছেন বনশোলের লাবণী মুর্মু৷
কন্যাশ্রীর টাকাই শুধু নয় , সবুজসাথীর সাইকেলের প্রভাবও যে কতটা গভীর, তার আন্দাজ মেলা দুষ্কর জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকা চাক্ষুষ না -করলে৷ ‘বেলপাহাড়ি, শিলদা, দহিজুড়ি, বিনপুরের অসংখ্য এলাকা থেকে নিকটতম স্কুলের দূরত্ব পাঁচ -সাত কিলোমিটার৷ গ্রীষ্মে যখন পশ্চিমাঞ্চলের এ সব তল্লাটে লু বয়, তখন এতটা পথ হেঁটে স্কুলে আসা যে কী শাস্তি, তা বলে বোঝানো যাবে না,’ মন্তব্য শিলদার ব্যবসায়ী অক্ষয় টিকাদারের৷ বেলপাহাড়ির গীতা পরামানিকের কথায়, ‘মেয়েটা পড়তে যেত বাঁকুড়ার শুশুনিয়া ইস্কুলে৷ সাইকেল না -পেলে ইস্কুলেই যেতে পারত না মেয়েটা৷’ একই কথার অনুরণন গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের নিগুই গ্রামের বাসিন্দা অসীম বাস্কের গলায়৷ তিনিও দশ বার ভাবতেন মেয়ে চন্দনাকে চাঁদাবিলা এসসি হাইস্কুলে পাঠাতে৷ ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী রায়শোল গ্রামের সুষমা মান্ডি কিংবা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বনকাঁটা গ্রামের রঞ্জিতা কিস্কুরও বক্তব্য, ‘এত পথ হেঁটে আসতে খুব কষ্ট হত৷ ইস্কুল কামাই হত প্রায়ই৷ সাইকেল পেয়ে ইস্কুলে আসাটা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে৷’
নিছক পড়াশোনাতেই নয়, পড়ুয়াদের পারিবারিক জীবনও যে গতি পেয়েছে সবুজসাথীর সাইকেলে চড়ে, তার হাতেগরম প্রমাণ কেশিয়াড়ি উত্তর ডেমোরবেলার বাসিন্দা ত্রিলোচন বেরা কিংবা বেলপাহাড়ির অজয় মাহাতোর৷ ত্রিলোচনের ছেলে সুব্রত নছিপুর হাইস্কুলে পড়ে৷ ছেলে স্কুল থেকে ফিরলে ছেলের সাইকেলই জীবিকা নির্বাহের একমাত্র বাহন ফেরিওয়ালা ত্রিলোচনের৷ তাঁর কথায়, ‘অনেক আগে আমারও সাইকেল ছিল৷ কিন্ত্ত সেটা সারানো সম্ভব নয়৷ নতুন কেনাও অসম্ভব৷ ছেলের স্কুল থেকে পাওয়া সাইকেলটাই ভরসা৷’ আর শিলদা কলেজের ছাত্র অজয়ের বোন সুমিতা পড়ে বেলপাহাড়ি হাইস্কুলে৷ ‘শিলদার একটা কোচিংয়ে সন্তাহে তিন দিন পড়তে যাই৷ যাতায়াতে ঢের খরচ হত৷ কিন্ত্ত এ বছর থেকে সে সমস্যা মিটেছে৷ বোন স্কুল থেকে ফেরার পর ওর সাইকেল নিয়েই আমি পড়তে যাই শিলদায়৷
আন্তর্জাতিক সংগঠন ইউনিসেফের রিপোর্টে শিশুশিক্ষায় প্রথম স্থান দেওয়া হল পশ্চিমবঙ্গকে। ‘দি স্টেট অব দি ওয়ার্ল্ড চিলড্রেন ২০১৬ এ ফেয়ার চান্স ফর এভরি চাইল্ড’ রিপোর্টটি মঙ্গলবার একটি পাঁচতারা হোটেলে প্রকাশ করেন সংস্থার কর্মকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিশু, নারী ও সমাজকল্যাণ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী শশী পাঁজা (তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীও বটে)। রিপোর্টে উঠে এসেছে, সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ এবং শিক্ষার অধিকার আইনের মাধ্যমে সমস্ত স্তরের শিশুদের মধ্যে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে এ রাজ্য। শুধুমাত্র তাই নয়, ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের কন্যাশ্রী প্রকল্পেরও। বলা হয়েছে, আর্থিক অনুদানের ফলে শিশুকন্যাদের স্কুলশিক্ষা আরও বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে। তারা উচ্চশিক্ষার দিকে বেশি করে এগিয়ে যাচ্ছে। আরও বেশি বেশি করে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে এবং বাল্যবিবাহের সংখ্যাও উল্লেখজনকভাবে কমে গিয়েছে। সবমিলিয়ে স্কুলে অন্তর্ভুক্তির হার প্রায় ১০০ শতাংশ ছুঁয়েছে। ড্রপ আউটের সংখ্যাও কমে গিয়েছে।
শশী পাঁজা যোগ করেন, শুধু কন্যাশ্রী প্রকল্পই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর সাইকেল দেওয়ার পরিকল্পনাও নারীশিক্ষায় দারুণ উন্নতি সাধন করছে। শহরের বাইরে পা রাখলে দেখা যায়, সবুজ সাথি প্রকল্পের সাইকেলে চেপে মেয়েরা দলে দলে স্কুলে যাচ্ছে। একইসঙ্গে সবলা প্রকল্পের মাধ্যমে বয়ঃসন্ধির সময়কার মেয়েদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি, তাদের শারীরিক সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষাদান করা হচ্ছে। এর ফলে মেয়েদের সার্বিক উন্নতি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিহারের অনেক পরিবার ছ’মাস পশ্চিমবঙ্গে থাকে, আর বাকি ছ’মাস থাকে নিজের রাজ্যে। এর ফলে ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষার নিরন্তর প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে। সেখান থেকেই ড্রপ আউটের প্রবণতা বাড়ে। তিনি বিহারে গিয়ে আবেদন জানিয়েছেন, এই পরিবারগুলির কথা মাথায় রেখে তারা যেন পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি পাঠ্যসূচি বিকল্প হিসাবে তৈরি রাখে। বিহারের তরফে ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে বলে তিনি জানান।
প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে থমকে রয়েছে আইনি জটিলতায়। এ নিয়ে বিধানসভাতেও তোলপাড় করছেন বিরোধীরা। মনে করা হচ্ছে, রিপোর্টটি সরকারকে অনেকটাই স্বস্তি দেবে এই অবস্থায়। শিক্ষক নিয়োগ না হলেও রাজ্য সরকার অবশ্য ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই, জুতো দেওয়ার মতো উদ্যোগ নিয়ে চলেছে। যেসব স্কুলে মাঠ রয়েছে, সেগুলিতে দোলনা, স্লিপ, বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের খেলনা, ঢেঁকি প্রভৃতি দেওয়ার কথাও ভাবছে রাজ্য সরকার। সরকারের আশা, এর ফলে স্কুলের পরিবেশ আরও বেশি আকর্ষক হবে খুদে পড়ুয়াদের কাছে। স্কুলে আসার প্রবণতাও বাড়বে।
উৎস : বিকাশপিডিয়া বাংলা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/12/2020
আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের আর্থিক ব্যবস্থ...
আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের আর্থিক ব্যবস্থ...