সাধারণ মানুষকে আইনি সহায়তা দিতে দিন দিন সক্রিয় হচ্ছে লিগাল এইড ফোরাম। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সবক’টি জেলায় ফোরামের অফিস রয়েছে। সেখানে পূর্ণ সময়ের জন্য সচিব রয়েছেন। রাজ্যের মানুষকে নানা ভাবে আইনি সাহায্য দেওয়া এবং ফোরামের কাজকর্ম সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার কাজে এখন সদাই ব্যস্ত লিগাল এইড ফোরাম। গত ২ মার্চ ২০১৫-য় দক্ষিণ কলকাতায় আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে রাজ্য লিগাল এইড ফোরামের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিকাশপিডিয়ার একটি বৈঠকে ফোরামের প্রতিনিধিরা ফোরামের কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত করেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে দুই প্রতিষ্ঠান কী ভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে তার দিশা ঠিক করা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে তা নির্ধারণ করা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বম্বে ও কলকাতা হাইকোর্ট প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য লিগাল এইড ফোরামের চেয়্যারম্যান বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়। লিগাল এইড ফোরামের সদস্য সচিব অভিজিৎ সোম ও উপসচিব অঞ্জন সেনগুপ্ত এবং বিকাশপিডিয়া তথা আইআইআইএম-এর প্রতিনিধিরা।
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে গড়ে তোলা বিকাশপিডিয়া ইতিমধ্যেই তথ্যকোষ হিসাবে বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রম সম্পর্কে এখানে বিস্তারিত পরিচয় দেওয়া আছে। কী ভাবে সরকারি প্রকল্পের সাহায্য পেতে হবে, কোথায় যেতে হবে, অসহায় মানুষ কোন কোন প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বিকাশপিডিয়ায় দেওয়া আছে। বাংলা মাধ্যমে বিকাশপিডিয়ার কাজ একটু দেরিতে শুরু হলেও ইতিমধ্যে বহু তথ্য তাতে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। রাজ্য লিগাল এইড ফোরাম সংক্রান্ত কিছু তথ্যও বিকাশপিডিয়াতে দেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে রাজ্য লিগাল এইড ফোরামের বিস্তারিত কার্যক্রম এই পোর্টালটিতে তুলে ধরার ইচ্ছা রয়েছে। ফলে মানুষ বুঝতে পারবেন আইনি জটিলতার মাধ্যমে পড়লে কী ভাবে লিগাল এইড ফোরামের সাহায্য নেওয়া যায়। সেই জন্য পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন।
বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৯৮৭ সালে দেশে লিগাল এইড আইন করা সত্ত্বেও তার বিভিন্ন ধারা কার্যকর হতে সময় লেগেছে। আগে এই ফোরাম তেমন মান্যতা পেত না। তবে এখন সাবঅর্ডিনেট জুডিশিয়ারির মাধ্যমে ফোরামের কাজকর্ম হয়। কর্মকর্তারা সবাই জুডিশিয়াল সার্ভিসেসের অফিসার। এসডিজেএম পর্যায়ের বিচারপতিদের ফোরামের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র : বিকাশপিডিয়া ও লিগাল এইড ফোরামের আলোচনা সভা, ২ মার্চ ২০১৫
বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ১৯টি জেলায় পুরো সময়ের জন্য এক জন করে সচিব রয়েছে। তাঁরা সারাক্ষণ লিগাল এইড ফোরামের কাজই করে থাকেন। কলকাতায় রয়েছেন এক জন সদস্য সচিব ও এক জন উপসচিব। মোট ২১ জনের টিম নিয়ে লিগাল এইড ফোরাম কাজ করে।
তিনি বলেন, আগে লিগাল এইড ফোরামের সঙ্গে সংযুক্ত ব্যক্তিদের কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু এখন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। লিগাল এইড ফোরামের সঙ্গে যুক্ত অফিসারদের সল্টলেকের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইনিস্টিটিউটে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লিগাল এইড ফোরাম এখন যে কাজটি গুরুত্ব দিয়ে করছে সেটি হল পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মেয়েদের স্কুলে মেয়েদের সশক্তকরণের কাজ করা। মেয়েরা যাতে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং অন্যকেও সে ব্যাপারে সচেতন করতে পারে সেটাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য। এই কারণে মেয়েদের স্কুলে লিগাল লিটারেসি ক্লাব খোলা হয়েছে। প্রায় ১৫০ স্কুলে এই কাজ চলছে। ধীরে ধীরে অন্য স্কুলগুলিকেও এই কর্মসূচির আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে। মেয়েরা যেমন তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছে, তেমনই আশপাশের এলাকার সমস্যা নিয়েও তারা মাথা ঘামাচ্ছে। আশপাশের বহু লোক লিগাল লিটারেসি ক্লাবের সাহায্য পাওয়ার জন্যও যোগাযোগ করছেন। আপাতত নবম ও একাদশ শ্রেণির মেয়েরা এই ক্লাবের সঙ্গে জড়িত। তার কারণ দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির মেয়েরা পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত থাকে। তারা এ ব্যাপারে ততটা সময় দিতে পারে না। উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি, উত্তর দিনাজপুর জেলার একটি স্কুলে সকাল দশটায় লিগাল লিটারেসি ক্লাবের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। তাদের এতটাই ভাল লেগেছ যে লাঞ্চের সময়ও এগিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছে। সমস্যাগুলি লিখে নিয়ে আমরা সেই সম্পর্কে কথা বলেছি।
সূত্র : বিকাশপিডিয়া ও লিগাল এইড ফোরামের আলোচনা সভা, ২ মার্চ ২০১৫
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, লিগাল এইড ফোরাম জুভেনাইল হোমগুলিরও দায়িত্ব নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এখন অতিরিক্ত জেলা বিচারপতিদের এক জন নিয়মিত জেলার হোমগুলি পরিদর্শনে যান। আমাদের জেলার সচিবরাও নিয়মিত হোমগুলিতে যাচ্ছেন। সেখানে কী ধরনের সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন এবং সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করছেন।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পটি খুবই ভালো কাজ করছে। এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার ফলে মেয়েদের মধ্যে স্কুল থেকে ড্রপ আউটের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। মেয়েদের মুখে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার কথা তেমন শোনা যায় না। সরাসরি ব্যাঙ্কে তাদের নামে টাকা জমা পড়ছে। ফলে বিয়ে নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগও খানিকটা কমেছে। সৌম্যব্রত দাস এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের প্রকল্প কেন্দ্রীয় সরকার আগেই চালু করেছিল তবে তেমন ভাবে প্রচারিত হয়নি। কন্যাশ্রী প্রকল্প দারুন ভাবে প্রচার করা হয়েছ। তা ছাড়া সক্রিয় ভাবে প্রকল্প রূপায়ণের কাজটিও হচ্ছে।
লিগাল এইড ফোরামের ভালো কাজের নিদর্শন দিতে গিয়ে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পশ্চিম মেদিনীপুরে আদিবাসী মহিলাদের মধ্যে লিগাল এইডের ব্যাপারে একটি কর্মসূচি করা হয়েছিল। সেই মহিলারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফিরে গিয়ে সেখানে আবার সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য নিজেরাই শিবিরের উদ্যোগ করেছে। এ ব্যাপারে জেলার সচিবরাও বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। ১৯টি জেলা সচিবের মোবাইল নম্বর এবং লিগাল এইড ফোরামের ই-মেল অ্যাড্রেস ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টোল ফ্রি নম্বরও রয়েছে। ফলে প্রয়োজন আছে এমন ব্যক্তি যে কোনও সময় ফোরামের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রতিটি জেলায় বিকল্প বিবাদ নিষ্পত্তি কেন্দ্র বা এডিআর তৈরি করার চেষ্টা চলছে। হাওড়া ছাড়া বাকি সব জেলায় ইতিমধ্যেই এই কেন্দ্র গড়া হয়েছে।
সূত্র : বিকাশপিডিয়া ও লিগাল এইড ফোরামের আলোচনা সভা, ২ মার্চ ২০১৫
বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জেলায় জেলায় বিকল্প বিবাদ নিষ্পত্তি কেন্দ্রগুলি খুবই ভালো ভাবে কাজ করছে। এই কেন্দ্রগুলিতে ঢুকলেই একটি ফ্রন্ট ডেস্ক দেখা যাবে। সেখানে সর্বক্ষণ এক জন কর্মী বসে থাকেন। তাঁকে গিয়ে সমস্যার কথা বললে তিনিই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ করে দেন। বিকল্প বিবাদ নিষ্পত্তি কেন্দ্রগুলির সঙ্গে অনেক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমনকী জেলা জজ পর্যায়ের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরাও যুক্ত হচ্ছেন। তাঁরা অসহায় মানুষকে প্রয়োজনমতো আইনি পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়া লিগাল এইড ফোরাম প্রতিটি বিকল্প কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক জন প্যারা লিগাল ভলেন্টিয়ার তৈরি করেছেন। অর্থাৎ যে সমস্ত ব্যক্তি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেননি কিন্তু এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে তাদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী গড়ে তোলা। স্কুল শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরেরা এই ধরনের প্যারা লিগাল ভলেন্টিয়ার হচ্ছেন।
বিচারপতি মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, সংশোধনাগারগুলিতে লিগাল এইড ফোরাম কী ধরনের কাজ করছে? এক সময় স্বামী দিব্যানন্দ এ ব্যাপারে অভিনব ভাবনাচিন্তার ছাপ রেখেছিলেন। তিনি সংশোধানাগারে বেশ কিছু সংস্কার করেছিলেন।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সংশোধনাগারে কয়েদিদের সঙ্গে যাঁরা দেখা করতে আসেন তাঁদের কাছে এক শ্রেণির দালাল দেখা করিয়ে দেওয়ার নাম করে প্রচুর টাকা আদায় করেন। আপাতত লিগাল এইড ফোরাম মালদা সংশোধনাগারে এই সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। সেখানে হেল্প ডেস্কে লিগাল এইড ফোরামের লোকজন বসে থাকেন। ভিজিটররা এলে তাঁরাই ফর্ম ফিলাপ করিয়ে কয়েদিদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। এই ব্যবস্থা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে সারাক্ষণ ওই হেল্প ডেস্কে ভিড় লেগে থাকে। এই প্রক্রিয়ার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যতে লিগাল এইড ফোরাম রাজ্যের অন্যান্য সংশোধনাগারেও এ ধরনের হেল্প ডেস্ক চালু করার কথা ভাবছে। খুব শীঘ্রই আলিপুর সংশোধনাগারে এ ধরনের হেল্প ডেস্ক চালু করা হবে।
সূত্র : বিকাশপিডিয়া ও লিগাল এইড ফোরামের আলোচনা সভা, ২ মার্চ ২০১৫
উত্তর দিনাজপুরে লিগাল এইড ফোরামের জেলা সচিব সংশোধনাগার পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেন মহিলা ইনমেটদের সঙ্গে যে সব বাচ্চা রয়েছে তাদের গায়ে গরম জামা নেই। অথচ সেটা শীতকাল। অনেকের আবার সাধারণ জামাপ্যান্টেরও অভাব। সঙ্গে সঙ্গে এই তথ্য লিগাল এইড ফোরামের কেন্দ্রীয় দফতরে জানানো হয় এবং সেখান থেকে ওই বাচ্চাদের জামা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। উত্তর ২৪ পরগনাতেও জামাকাপড় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগে গরিব মানুষরা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারতেন না। সত্তরের দশকে এক বার জাস্টিস কৃষ্ণ আয়ার বলেছিলেন, ভারতের গরিবরা মন্দিরে আর সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশাধিকার পায় না। এখন কিন্তু অবস্থা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। এখন লিগাল এইড ফোরামকে সুপ্রিম কোর্টে এসএলপি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যদি ফোরাম মনে করে কারও জন্য সুপ্রিম কোর্ট অবধি দৌড়নো দরকার তা হলে সে স্বচ্ছন্দে তা করতে পারবে।
শুধু গরিব মানুষ নয়, মধ্য আয়ের লোকজনের জন্যও লিগাল এইড ফোরাম ব্যবস্থা নিতে পারে। এখন থেকে সেই উদ্যোগ চালু হয়েছে।
কিছুদিন আগে দু’ জন অধ্যাপক তাঁদের চাকরি সংক্রান্ত একটি মামলার জন্য লিগাল এইড ফোরামের দ্বারস্থ হন। লিগাল এইড ফোরাম তাঁদের জন্য এক জন আইনজীবীরও ব্যবস্থা করে দেয়। সেই আইনজীবী মামলা চালাতে ইতস্তত বোধ করছিলেন। তাঁর বক্তব্য, হল অধ্যাপকদের তো টাকা দিয়ে আইনজীবী নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে। তা হলে কেন লিগাল এইড ফোরামকে এর মধ্যে জড়ানো হবে। বলা বাহুল্য এই যুক্তি সম্পূর্ণ অসার। আইনে বলা হয়েছে, যে কেউ প্রয়োজনে লিগাল এইডের সাহায্য নিতে পারে। কে গরিব কে বড়লোক সব ক্ষেত্রে বিচার করে কাজ করাটা জরুরি নয়।
সূত্র : বিকাশপিডিয়া ও লিগাল এইড ফোরামের আলোচনা সভা, ২ মার্চ ২০১৫
লিগাল এইড ফোরামের রাতদিনের একটি টোল ফ্রি নম্বর আছে। যার মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এই নম্বরটি হল — ১৮০০৩৪৫৬০৪০। এ ছাড়া সদস্যসচিবের ফোন নম্বর হল - ৯৮৩০৬৫১৮২৭। উপসচিবের নম্বর -৯৪৩৪৪০১৪৯৩।
লিগাল এইড ফোরামের একটি ওয়েবসাইটও রয়েছে-wbstatelegal@gmail.com বিচারপতি মুখোপাধ্যায় বলেন, জেলায় জেলায় ফৌজদারি মামলা শেষ করাটা একটা বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রচুর পরিমাণে মামলা পড়ে থাকছে। এমন অনেক মামলা পড়ে থাকছে যেখানে নিপীড়িত ব্যক্তি এক জন অসহায় মহিলা। এই ধরনের মামলাগুলির একটি তালিকা করা উচিত। মামলাগুলি যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া উচিত। এই সব মামলা ঘাঁটতে গিয়ে দেখা গেছে, কোথাও পাবলিক প্রসিকিউটার আসেন না, কোথাও কেসের আইও বদলি হয়ে গিয়েছেন। তাঁর পক্ষে আদালতে আসা সম্ভব হচ্ছে না।
বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, পুলিশের অভিযোগ, অনেক সময় আসামি ধরে আদালতে নিয়ে এলেও ঠিকমতো বিচার করা যাচ্ছে না। ফলে আসামির জামিন হয়ে যাচ্ছে। সব চেয়ে অসহযোগিতা করে পাবলিক প্রসিকিউটর বা পিপিরা। এখন অবশ্য অবস্থাটা পাল্টাচ্ছে। একটা সময় দেখা যেত অনেক পিপি বিচারপতিকে বলছেন, সাক্ষী এনে দিয়েছি এ বার আপনি বুঝে নিন। বিচারপতি মুখোপাধ্যায় বলেন, অনেক আইনজীবীকে দেখি কেবলমাত্র বেলের ব্যাপারে আগ্রহী। মামলার কী ভাবে নিষ্পত্তি হবে সে ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখান না। এই পরিস্থিতির বদল করা দরকার। লিগাল এইড ফোরাম উদ্যোগ নিলে আইনজীবীদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়বে।
লিগাল এইড ফোরামের বিভিন্ন প্রচারমূলক কর্মসূচি সম্পর্কে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একটি তথ্যচিত্র বানানো হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় দেখানোর জন্য। সচরাচর কোনও পঞ্চায়েত দফতরের পাশে পর্দা টাঙিয়ে ফিল্মটি দেখানোও হয়। ভিড় জমে গেলে ওই তথ্যচিত্রটি বিশ্লেষণ করে আইনি সচেতনতার পাঠ দেওয়া হয়। লিগাল এইড ফোরামের প্রযোজনায় পাঁচটি নাটকও চলছে। কন্যাভ্রূণ হত্যা, শিশুশ্রম, শিশু পাচার, পণপ্রথা নিয়ে। বিভিন্ন মেলায় নাটকগুলি অভিনীত হয়। বইমেলাতেও লিগাল এইড ফোরাম স্টলের ব্যবস্থা করে।
সূত্র : বিকাশপিডিয়া ও লিগাল এইড ফোরামের আলোচনা সভা, ২ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020