“যতদিন পল্লী গ্রামে ছিলেম, ততদিন তাকে তন্নতন্ন করে জানবার চেষ্টা আমার মনে ছিল। ... ক্রমেই ই পল্লীর দুঃখ দৈন্য আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠল ... তারপর থেকে চেষ্টা করতুম — কী করলে এদের মনের উদ্বোধন হবে। আপনাদের দায়িত্ব এরা আপনি নিতে পারবে। আমরা যদি বাইরে থেকে এদের সাহায্য করি, তাতে এদের অনিষ্টই হবে। কী করলে এদের মধ্যে এখানে হয়ত তার একটি জীবন সঞ্চার হবে, এই প্রসঙ্গই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল” এই উপলব্ধি রবীন্দ্রনাথ ব্যক্ত করেছিলেন শ্রীনিকেতনের কর্মযজ্ঞ শুরু হবার কিছু পরে, এক কর্মী সভায়।(১)
উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের সূচনা পর্বে (১৮৯১ থেকে ১৯১৫) অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী জেলার কালীগ্রাম এবং নদীয়া জেলার বিরাহিমপুরে পূর্বপুরুষের জমিদারির তদারকি করতে গিয়ে গ্রামীণ জনজী খুব কাছ থেকে দেখার সুবাদে গ্রামীণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার স্বরূপকেও রবীন্দ্রনাথ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন অত্যন্ত নিবিড়ভাবে। ফলে - তাঁর সৃজনশীল হৃদয়ের আহ্বানে নিজস্ব জমিদারির মধ্যেই স্থানীয় মানুষকে যুক্ত করে তিনি হাত দিয়েছিলেন তাঁর প্রথম পর্বের গ্রামীণ পূণর্গঠনের কাজে। কিন্তু একাধিক কারণেই রবীন্দ্রনাথের কাছে এই অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। এর কারণ তিনি নিজেই ব্যক্ত করেছেন তাঁর বিভিন্ন লেখায়, আলোচনায় এবং চিঠিপত্রে। এই আপাত ব্যর্থতার গ্লানি তিনি বহন করেছিলেন দীর্ঘ প্রায় আট কিন্তু আশাহত হননি। সম্ভবত তিনি এমন একটি কর্মক্ষেত্রের অনুসন্ধান করছিলেন যার অবস্থান হবে তাঁর সমস্ত ভাবনার প্রাণ কেন্দ্র বিশ্বভারতীর খুব কাছাকাছি। সেই সুযোগ এসেছিল বিশ দ্বিতীয় দশকে শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি শ্রীনিকতেন গঠনের মধ্যে দিয়ে, প্রথমদিকে যার নামকরণ করা হয়েছিন “সুরুল ফাৰ্ম” কিংবা “সুরুল সমিতি” হিসাবে। উদ্যোগ প্রথম পর্বে নিজস্ব জমিদারির মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অঙ্গ হিসাবে পুত্র রথীন্দ্রনাথ, বন্ধু পুত্ৰ সত্তোষ মজুমদার এবং জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে বিদেশের কৃষি বিদ্যায় দীক্ষিত করে এবং নিজের নোবেল পুরস্কারের টাকা থেকে বিরাহিমপুর এবং পাতিসরে সমবায় ও কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেও যে সাফল্য তিনি পাননি, দ্বিতীয় পর্বে কবির সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে আরও দুই নিরলস কর্মী। একজন আমেরিকা নিবাসী লিওনার্ড কে, এলমহাস্ট, অন্যজন বঙ্গসন্তান কালীমোহন ঘোষ।
প্রথম পর্বের অভিজ্ঞতায় নিরাশ নন, কিন্তু কিছুটা মৰ্মাহত কবি শ্রীনিকেতন গঠনের মধ্যে দিয়ে ঠিক কী কবি শ্রীনিকেতনর মধ্যে দিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেদিন, সে বিষয়ে নিজেই লিখেছেনঃ
“আমার জীবনের যে দুটি সাধনা, এখানে হয়ত তার একটি সফল হবে। কবে হবে, কেমন করে হবে তখন তা জানতাম না। অনুর্বর ক্ষেত্রেও বীজ পড়লে দেখা যায় হঠাৎ একটি অঙ্কুর বেরিয়েছে কোনও শুভ লগ্নে। কিন্তু তার কোনও লক্ষণ দেখ যায় নি। সব জিনিসের তখন অভাব। তারপর আস্তে আস্তে বীজ অঙ্কুরিত হতে চলল, ...আমি একলা। সমস্ত ভারতবর্ষের দায়িত্ব নিতে পারব না। আমি কেবল জয় করব একটি বা দুটি গ্রাম। আমি যদি দুটি তিনটি গ্রামকে মুক্তি দিতে পারি অবজ্ঞা, অক্ষমতার বন্ধন থেকে, তবে সেখানেই সমগ্র ভারতের একটি ছোট আদর্শ তৈরি হবে”। (২)
এই পরিপ্রেক্ষিতেই অন্যত্র তিনি বাইরে থেকে গ্রামের উন্নয়ন না ঘটিয়ে গ্রামেরই আত্মশক্তির উদ্বোধনের ওপর বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন। সাম্প্রতিককালে একেই আমরা বলছি অংশভাগী উন্নয়ন বা Participatory Development। প্রথমটি রাষ্ট্রক্ষমতা এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ বিবর্জিত এক দুঃসাহসীক অভিযান, যেখানে স্বেচ্ছাশ্রমের মানসিকতাই প্রধান সম্বল। দ্বিতীয়টি বছর, রাষ্ট্রক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের ক্ষমতায়ন, যেখানে জড়িয়ে রয়েছে রাষ্ট্রীয় অর্থ এবং তার কর্মীবৃন্দকে ক্রমশ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তরের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়নে এই কর্মীবৃন্দকে যুক্ত করার রাষ্ট্রীয় মানসিকতা। এখন প্রশ্ন হল, প্রথম পর্যায়ে নিজস্ব জমিদারীর মধ্যে বহুবিধ এবং শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত ব্যর্থতা সত্ত্বেও দ্বিতীয় পর্বে কেন তিনি বেছে নিয়েছিলেন শ্রীনিকেতনের মতো জায়গা। এর একটাসম্ভাব্য উত্তর রয়েছে এক সময় উত্তর ভারতে YMCA -এর কর্মী এবং পরবর্তীতে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিজ্ঞানে পাঠ নেওয়া লিওনার্ড কে এলমহাস্টের সঙ্গে ১৯২১ সালে নিউইয়র্ক সফররত কবির এক সাক্ষাৎকারের মধ্যে। পরবর্তীতে এলমহাস্ট এই কথোপকথনের বিষয়টিকে ব্যক্ত এসেছিলেন একজন আমেরিকা নিবাসী করেছেন এইভাবে:
‘Mr. Elmhirst, I have established an educational enterprise in India which is almost wholly academic. It is situated well out in the countryside of West Bengal at Santiniketan. We are surrounded by villages, Hindu, Muslim, Santali. Except that we employ a number of these village talk for various menial task in my school. We have no inmate contact with them at all inside their Own Communities. For some reason, these villages appear to be in a steady decline. In fact they are still in decay. Some year ago, I bought from Sinha family a farm just outside the villages of Surul, a little over a mile from my school. I hear that you might be interested in going to live and Work On Such a farm in Order to find Out more clearly the cause of this decay.'(৩)
শুধু এখানেই নয়, সমসাময়িক অন্যান্য বক্তব্যেও তিনি ব্যক্ত করছেন যে, আশেপাশের গ্রামগুলিকে অজ্ঞতা, অক্ষমতার অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে বিশ্বভারতীর সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয়। কিন্তু কবির এই অভিপ্রায়কে কীভাবে গ্রহণ করেছিলেন সেদিনের প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর এক বিদেশি তরুণ ? এর একটা সম্ভাব্য উত্তর রয়েছে ১৯২১ সালের এপ্রিল মাসে রবীন্দ্রনাথকে লেখা এলমহাস্টের একটি চিঠিতে ;
“What exactly awaits me in India, I do not know clearly, but I feel that the key to the situation Out there is to be the kind of man who can go and live among the villagers and take health and science, happiness and knowledge to the men on the land in such a way that cultivators will welcome everything that such a man can give them. He will have to be a man of intense devotion and of great selflessness, he will have to be a School teacher, extension Worker and agriculturist, and he will have to have enough real sympathy with suffering and poverty to be able to win confidence".(8)
এলমহাস্টের এই অনুভূতি এবং কবির অভিপ্রায়ের একটা গোপন যোগসূত্র সম্ভবত কোথাও স্থির হয়েইছিল, যা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে শ্রীনিকেতন অভিজ্ঞতার নিবিড় বিশ্লেষণের মধ্যে। হয়তো তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় এলমহাস্টের পরিচয় ছিল: “Not merely as a friend, but as a sharer in the intimacy of a conjoint creation”.
এলমহাস্টের দিনলিপি এবং অন্য যায়, এলমহাস্ট সম্পূর্ণ নিজ খরচে এবং এমনকী নিজের অভিভাবকদের কিছুটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ভারতে আসেন ১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে এবং ১৯২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সুরুলে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেন, পরবর্তীতে যার নামকরণ করা হয়েছিল পল্পী সংগঠন কেন্দ্র বা Institute of Rural Reconstruction। প্রথমদিকে এ সবই ছিল “সুরুল সমিতি” নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে। পরে ১৯২৩ সালে এই সমস্ত কর্মকাণ্ড চলে আসে শ্রীনিকেতন সমিতির মধ্যে। এমনকী নকেতন নামের প্রথম উল্লেখও পাওয়া যায় ১৯২৩ সালেই।
রবীন্দ্রনাথ শ্রীনিকেতনের কর্মকাণ্ড শুরু হবার আগেই লিখেছিলেন : “The object of Sriniketan is to bring back life in its completeness into the villages making them self reliant and self respectful, acquainted with the cultural tradition of their own country and competent to make an efficient use of modern resources for the improvement of their physical, intellectual and economic conditions"(৫)
প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথের পল্লী পরিকল্পনায় গ্রামীণ পুনর্গঠন কোনও বিচ্ছিন্ন সমস্যার মোকাবিলা নয়, বরং গ্রামীণ জনজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সমস্যাগুলির একটি সার্বিক এবং সুসংহত সমাধানের প্রয়াস। দেশজ সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, প্রগাঢ় ইতিহাস চেতনা এবং পশ্চিমী সভ্যতার নিবিড় সংস্পর্শে আমার ফলশ্রুতি হিসাবে এক সুদৃঢ় বিজ্ঞানমনস্কত সমস্যাগুলিকে বিশ্লেষণ করেছিলেন একেবারে ভিতর থেকে। ফলে গ্রাম স্তরে কর্মরত কর্মীদের (যাদের তিনি সমাজ কর্মী হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন) এবং শ্রীনিকেতনের পুনর্গঠন কেন্দ্রে বরিষ্ঠ কর্মীদের (যাদের পরিচয় ছিল কেন্দ্র কর্মী হিসাবে) তিনি বরাবর সচেতন করেছেন যাতে তারা তাদের কোনও সিদ্ধান্তই গ্রাম মানুষের ওপর চাপিয়ে দেন। পরিবর্তে পরামর্শ দিয়েছেন যে কর্মীরা যাতে নিজেদের বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার গ্রামীণ মানুষের কাছে তুলে ধরেন এবং গ্রামীণ জননেতৃত্বকে নিজেদের সংগঠিত প্রয়াসে এই ফলাফলগুলির প্রতি মনোনিবেশ করতে সহায়তা করেন।
ফলে যেখানেই গ্রামীণ মানষ বিচ্ছিন্নভাবে কোনও কর্মপ্রয়াসে মনোনিবেশ করেছে, শ্রীনিকেতনের কর্মীরা তাদের সংগঠিত হতে সাহায্য করেছে। আবার যেখানে গ্রামীণ মানুষের নিজস্ব সংগঠন তৈরি হয়েছে, কর্মীরা সেই সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করেছে।
এইভাবে শ্রীনিকেতনের কর্মীদের দায়িত্ব ছিল গ্রামীণ মানুষের নিজস্ব সমস্যা তাদের নিজেদের দ্বারা চিহ্নিত করা। বৈজ্ঞানিক উপায়ে তার বিশ্লেষণ করা এবং স্থানীয় সম্পদ ও গ্রামীণ পুনর্গঠন কেন্দ্রের সহায়তায় তাদের সমাধানের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করা। সাম্প্রতিক কালে প্রক্রিয়াকেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নয়নের সামাজিক তত্ত্ব হিসাবে বলা হচ্ছে অংশভাগী গ্রামীণ মূল্যায়ন বা Participatory Rural appraisall।
শ্রীনিকেতনের আদিপর্বে কাজ শুরু হয়েছিল অত্যন্ত সীমাবদ্ধ এলাকায়, মাত্র তিনটি গ্রামকে কেন্দ্র করে। কারণ কবি শ্রীনিকেতনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি এই পথে পা রেখেছিলেন অত্যন্ত সন্তপণে, নানা গ্রহণ বর্জনের এইভাবে গ্রামীণ সমস্যাগুলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের কর্মীদের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে। ক্রমশ স্বাধীন ভারতের সূচনাপর্বে এই গ্রামস্তরে কাজ করার উপযোগী হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়তা কর্মকাণ্ড বিস্তুত হয়েছিল প্রায় ৮৫টি গ্রামে যার আয়তন ছিল করত। গ্রামগুলিকে দেখা হত গবেষণাগার হিসাবে যেখান থেকে প্রায় ৬০ বর্গমাইল। শ্রীনিকেতনের এই কর্মযজ্ঞকে ভাগ করা হয়েছিল মূলত তিনটি এলাকায় - সুসংহত ও নিবিড় এলাকা, সম্প্রসারিত এলাকা এবং প্রান্তবর্তী এলাকা। সুসংহত ও নিবিড় এলাকা হিসাবে চিহ্নিত গ্রামগুলিতে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ অন্যান্য সকল পরিষেবা সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা সংগঠিত হত শ্রীনিকেতনের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে, অবশ্যই গ্রামীণ মানুষের উদ্যোগে ও অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে। অন্যদিকে সম্প্রসারিত এলাকায় শ্রীনিকেতনের কর্মীরা গুরুত্ব দিতেন বিচ্ছিন্ন সমস্যাগুলির ওপর যার প্রধান লক্ষ্য কোনও একটি বিশেষ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ মানুষকে সংগঠিত করা। একেবারে প্রান্তবর্তী এলাকায় গ্রামীণ মানুষ সংগঠিত হতেন অপর দুই এলাকার অভিজ্ঞতা শোনা ও তা দেখার মাধ্যমে শিক্ষা নিয়ে। কখনও কখনও শ্রীনিকেতনের উন্নয়নের কর্মীরা আকস্মিকভাবে প্রান্তবর্তী গ্রামগুলি পরিদর্শন করতেন এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করতেন।(৬)
শ্রীনিকেতনের পল্লী পুনর্গঠন কেন্দ্র তার কাজ শুরু করেছিল প্রধানত দুটি বিভাগের মাধ্যমে। শ্রীনিকেতনের প্রধান প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হত কৃষি, প্রাণী সম্পদ, ক্ষুদ্র ও কুটার শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং গ্রামীণ সংগঠন এই সমস্ত পরিষেবার মূল চর্চা কেন্দ্র হিসাবে। এর প্রতিটি বিভাগের পক্ষ থেকে আবার একবারে গ্রাম স্তরে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হত যার মূল উদ্যোক্তা ছিলেন স্থানীয় মানুষ । এইভাবে মূল চর্চা কেন্দ্রের উদ্যোগে একটি খামার , একটি দুগ্ধ ও গোপালন বিভাগ, বহির্বিভাগীয় চিকিৎসা কেন্দ্র, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিভাগ, গ্রামীণ বিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিভাগের একটি মডেল প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকত শ্রীনিকেতন ।
সংগঠনের সূচনাপর্বে কাজকর্মপরিচালিত হত মূলত তিনটি এই ধারায় : (ক) হাতে কলমে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা (খ) সম্প্রসারণ এবং (গ) প্রশিক্ষণ। শ্রীনিকেতনের প্রধান কেন্দ্রে গবেষণার কাজ পরিচালিত হত প্রধানত গ্রামস্তরে কৃষি প্রযুক্তি সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে। এর পরবর্তী পর্যায়ে সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে গ্রামগুলিকে প্রশিক্ষিত করা হত। অন্যদিকে গ্রামের মানুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে শ্রীনিকেতনের কর্মীরা গ্রামের সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হতেন। শ্রীনিকেতনের কর্মীরা এইভাবে গ্রামীন সমস্যাগুলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের কর্মীদের গ্রাম স্তরের কাজ করার উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করত। গ্রামগুলিকে দেখা হত গবেষণাগার হিসেবে সেখান থেকে সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করা হত এবং তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে পুনরায় গ্রামস্তরের কর্মীদের মাধ্যমে গ্রামের কাছেই সমাধানসূত্র হিসাবে ফেরত পাঠানো হত। পারস্পারিক এই আদান-প্রদান এবং তার সমন্বয় সাধনই ছিল শ্রীনিকেতনের উন্নয়ন কর্মের মূল সূত্র।
সমাজকর্মীরা ছিলেন গ্রামস্তরে শ্রীনিকেতনের প্রধান একেবারে ছিল প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র। এই কর্মীরা গ্রামে বসবাস করতেন ঠিকই কিন্তু কখনই বিচ্ছিন্নভাবে গ্রামের উন্নয়নের বহিরাগত কর্মী হিসাবে নয়। এই কর্মীদের দায়িত্ব ছিল মানুষকে সংগঠিত করা যাতে তার নিজেদের নেতৃত্ব এবং প্রতিষ্ঠান নিজেরাই চিহ্নিত করতে পারেন এবং শ্রীনিকেতনের প্রধান কেন্দ্রের পরিষেবাগুলিকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে পারেন।
কবির সতত সতর্ক দৃষ্টি ছিল যে গ্রামকর্মী যেন সমস্ত মানবিক আবেদন নিয়ে গ্রামের মানুষের একজন হিসাবে নিজেকে তৈরি করতে পারেন এবং গ্রামের মানুষের পরিপূর্ণ আস্থা অর্জন করতে পারেন। ফলে গ্রামকর্মীর দায়িত্ব ছিল কোনও কর্মসূচির সুবিধাগুলি সরাসরি বিতরণ না করে গ্রামের মানুষকে আধুনিক সম্পদের সুদক্ষ ব্যবহারে পারদর্শ করে তোলা। ঠিক একইভাবে গ্রাম পরিকল্পনার সার্বিক লক্ষ্য ছিল ওপর থেকে চাপিয়ে না দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভিতর থেকে তুলে আনা।
কবি তাঁর সমাজকর্মীদের ভাগ করেছিলেন প্রধানত চার ভাগে। সার্বিক সংগঠনের কথা মাথায় রেখে, যাদের তিনি নাম দিয়েছিলেন “গ্রামকর্মী”, তারা কাজ করতেন একেবারে তৃণমূল স্তরে, এক একটি সুসংহত ও সম্প্রসারিত এলাকায়। কয়েকটি গ্রামের দায়িত্বে ছিলেন “কেন্দ্রকর্মী”। তৃতীয় একদল কর্মবাহিনী ছিলেন আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞ হিসাবে, যাদের বিভিন্ন সময় কবি তাঁর গ্রামীণ পুনর্গঠন কর্মযজ্ঞে আহ্বান জানাতেন। এরা ছিলেন কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য কিংবা সম্প্রসারণ পরিষেবার বিশেষজ্ঞ। চতুর্থ দলের ছিলেন এই কর্মসূচির সহযোগী গ্রামীণ নেতৃত্ব, যারা গ্রাম সমাজের নেতৃত্ব, যারা গ্রাম সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে সংশ্লিষ্ট গ্রামেই বসবাস করতেন। এই স্বেচ্ছাসেবী নেতৃত্ব এগিয়ে এসেছিলেন আংশিক বেতনভুক কর্মী হিসেবে এবং তারা সর্বক্ষণের বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ কর্মীদের বহুমুখী কর্মযজ্ঞকে গ্রামস্তরে ফলপ্রসূ করার জন্য সর্বতোভাবে সহায়তা করতেন।
এই প্রক্রিয়ায় সমাজকর্মী এবং গ্রামীণ মানুষের মধ্যে সহভাগী পদ্ধতিতে সার্বিক গ্রামোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বয়ের যে ধারাগুলি অনুসরণ করা হত তা এইরকম :
এইভাবে নিঃশব্দে অথচ ধারাবাহিকভাবে গ্রামীণ মানুষের হৃদয় জয় করে সমাজকর্ম গ্রামীণ সংগঠন তৈরি করতেন এবং তাদের বোঝাতেন কীভাবে শ্রীনিকেতনের পল্লীচর্চা কেন্দ্রের সহায়তায় তারা নিজেরাই নিজেদের সমস্যা মোকাবিলার পথে অগ্রসর হতে পারেন। ফলে যে সমাধানসূত্র তৈরি হত তা এইরকম :
যেহেতু কবির সতত সজাগ দৃষ্টি ছিল একটি সুদক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তোলার দিকে, ফলে সর্বস্তরের সমাজকর্মীদের জন্যই ছিল সৃষ্টি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। শ্রীনিকেতনের সূচনাপাঠ থেকেই কৃষি, প্রানীপালন, অগ্নিনির্বাপণ, ব্রতিবালক সংগঠন, বয়স্ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। যদিও এই প্রশিক্ষণগুলি ছিল দশ থেকে পনেরো দিনের জন্য কিন্তু প্রতি বছরই পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল । কারণ কবি বিশ্বাস করতেন গ্রামীণ পুনর্গঠনের শিক্ষা কখনও কোনও প্রান্তে এসে থেমে থাকে না ফলে তিনি প্রশিক্ষণ ও পুনঃপ্রশিক্ষণের মাধ্যমেই চেয়েছিলেন এক সুদক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে।
শ্রীনিকেতনের কর্মীরা যে যে সূত্র থেকে উৎসাহ এবংঅনুপ্রেরণা লাভ করত তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল। কর্মী সভাগুলিতে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন বক্তৃতা এবং গ্রামীণ পুনর্গঠন বিষয়ক তাঁর লেখাগুলি। কর্মসভাগুলি সংগঠিত হত একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নিয়মিত। এছাড়াও গ্রাম কর্মীদের নিয়মিত ডায়ারি এবং প্রতিবেদন লিখতে হত। এগুলি বরিষ্ঠ কর্মীরা নিয়মিত পর্যালোচনা করতেন। কখনও কখনও কবি নিজেও সেগুলি পর্যালোচনা করতেন এবং তার মতামত প্রদান করতেন। একাধিক সমস্যা যেখানে একত্রিত হত, অধিকাংশ সময়ে নিজেই সেখানে হস্তক্ষেপ করতেন এবং সঠিক পথের দিশার অনুসন্ধানে সহায়তা করতেন। এই পদ্ধতিতে গ্রাম কর্মীরা এক ধরনের বিজ্ঞানসম্মত মানসিকতা নিয়ে গ্রামীণ মানুষের সমস্যা নিরসনে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হতেন।
কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় কবি তার কর্মীবাহিনীকে বারে বারে সতর্ক করেছেন, তাঁরা যেন মানুষের নিজস্ব জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ওপরে নিজেদের মতামত চাপিয়ে না দেন; বরং গ্রামীণ মানুষ সহায়তা চাইলে তবেই যেন তাদের একজন পরামর্শদাতা হিসাবে সহায়তা দেওয়া হয়। ফলে শ্রীনিকেতনের প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী এবং গ্রামীণ মানুষের এই নিজস্ব উদ্যোগের সমন্বয় যেখানেই সার্থকতা পেয়েছে, কবির কর্মপরিকল্পনাও সেখানেই পেয়েছে অভাবনীয় সাফল্য।
এভাবেই কবির দ্বিতীয় পর্বের গ্রামোন্নয়ন পরিকল্পনায় উঠে এসেছিল এক সুবিশাল অথচ সুসংহত কর্মকাণ্ড, যার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাওয়া যাবে নীচের সারণি থেকে।
ক্ষেত্র |
বিষয় |
কর্ম পরিকল্পনা ও প্রয়োগ |
অর্থনৈতিক |
কৃষি |
ক) পরীক্ষা-নিরীক্ষা খ) প্রশিক্ষণ গ) কৃষি সম্প্রসারন ঘ) গরুপালন ঙ) মুরগি পালন চ) মাছ চাষ ছ) মৌমাছি পালন |
গ্রামীণ শিল্প |
ক) বায়ন খ) চামড়া পাকা করার কাজ গ) চর্ম শিল্প ঘ) দারু শিল্প ঙ) মৃৎ শিল্প চ) গালার কাজ ছ) বই বাঁধানো জ) হাতের তৈরি কাগজ ঝ) বাঁশ ও বেতের কাজ ঞ) বাটিক ও আন্যান্য কারু শিল্প ট) মেসিন সপ ও পাওয়ার হাউস |
|
সমবায় |
ক) পল্লী উন্নয়ন সমিতি খ) সমবায় স্বাস্থ্য সমিতি গ) ধর্ম গোলা ঘ) কৃষি ঋণদান সমিতি ঙ) সেচ সমবায় চ) সমবায় মৎস চাষ ছ) সমবায় বয়ন সমিতি জ) বিশ্ব ভারতী সমবায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক |
|
সামাজিক |
শিক্ষা |
ক) শিক্ষা সত্র খ) প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয় গ) শিক্ষা চর্চা ঘ) লোক শিক্ষা সংসদ ঙ) বয়স্ক শিক্ষা ও সমাজ শিক্ষা চ) ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার ছ) শিক্ষা শিবির জ) ব্রতীচালক সংগঠন ঝ) গ্রামীণ প্রদর্শনী ঙ) গ্রামীণ বিবাদের নিষ্পত্তি |
স্বাস্থ্য |
ক) জনস্বাস্থ্য সমীক্ষা খ) ক্লিনিক গ) সমবায় স্বাস্থ্য সমিতি ঘ) ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি ঙ) কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র |
|
গবেষণা ও প্রশিক্ষণ |
ক) গ্রাম্য সমীক্ষা |
|
গ্রামীণ উৎসব উদযাপন ও সম্মিলিত |
ক) শ্রী নিকেতন প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন |
কিছুটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে কবির এই গ্রামীণ পুনর্গঠনের প্রয়াস তার জীবনবোধের মতোই সার্বিক। ফলে একটি ক্ষুদ্র এবং সীমিত পরিসরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেও তা নিয়ে বিচলিত হননি কখনও। কারণ যে কোনও কর্ম পরিকল্পনায় তাঁর কাছে বিচার্য ছিল গুণগত উৎকর্ষের নিরিখে, কিন্তু কখনই পরিমাণগত ফলাফলের নিরিখে নয়। যদি এই ক্ষুদ্রতম পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোনও কার্যকারী ফলাফল দেয়, তবে তার গ্রহণযোগ্যতা উন্মুক্ত থাকবে সমগ্র ভারতের গ্রাম কর্মীদের জন্য এটাইছিল তার অন্তরের দৃঢ়বিশ্বাস। এই জাতীয় উদ্যোগকেই কি আমরা পরবর্তী সময়ে “পাইলট প্রকল্প” বলিনি ? বাংলার আরও যে বিষযটি লক্ষণীয় তা হল কবির এই সুসংহত ১৩৪৫ সালে শ্রীনিকেতনের “শিল্প ভান্ডার” উদ্বোধন করতে গিয়ে তাই রবীন্দ্রনাথের অভিব্যক্তি ছিল এইরকম :
“Those who worship physical quantity often say that the field of our operation is very circumscribed and therefore, as against the need of the entire country, the result will be insignificant. But we should remember that truth establishes itself on its own dignity and not on its quantitative measurements in terms of length and breadth. In whatever part of the country we establish ourselves through discovery of truth, we establish ourselves over the whole of India।” (৭)
আরও যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হল, কবির এই সুসংহত গ্রামোন্নয়নের প্রয়াস সমকালীন ভারতে একান্তভাবেই তার নিজস্ব দর্শনের বহিঃপ্রকাশ। কারণ তাঁর মতে একজন পরিপূর্ণ মানুষের সার্বিক বিকাশ এই সুসংহত উন্নয়ন প্রয়াসের মাধ্যমেই সম্ভব। অন্যদিকে বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতির প্রয়োগের পাশাপাশি যদি সনাতন গ্রামীণ সংস্কৃতিরও পুনরুজ্জীবন ঘটানো সম্ভব হয় তবে তা হবে গ্রামকর্মীর মেধা ও বুদ্ধির প্রয়োগের ক্ষেত্রে তার ভাবাবেগেরও চালিকা শক্তি। তাই তার পর্যবেক্ষণ ছিল এই রকম:
“The welfare of the community is a combination of many components. They are intimately linked up with one another. If any one of them to kept separate, we miss the result. Only when health, intellect, knowledge, work and feeling of enjoyment are mixed up together, man's welfare attains fulfilment". (৮)
এখানে আরও যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হল, এই যে গ্রামীণ সমস্যার মোকাবিলা বাইরে থেকে না করে গ্রামীণ মানুষদের সংগঠিত করে তাদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার নিরিখেই তিনি সেগুলির সমাধান চাইছিলেন অথচ একদল বিশেষজ্ঞকে রাখছিলেন শ্রীনিকেতনের মূল কেন্দ্রে, যাদের দায়িত্ব ছিল বিশেষ বিশেষ সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করা, তাদের সমাধানের পথ মূল চর্চা কেন্দ্রে বিশ্লেষণ করা এবং তার ফলাফল গ্রাম স্তরে পৌঁছে দেওয়া, স্বাধীন ভারতের প্রথম পরিকল্পনার মাধ্যমে সমষ্টি উন্নয়ন চর্চা করতে গিয়ে একেই আমরা বলেছি সম্প্রসারণ পরিষেব পদ্ধতি। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের মাটিতে এই নিদর্শন থাকা সত্ত্বেও, এই পদ্ধতি আমাদের আমদানি করতে হয়েছিল সুদূর আমেরিকা থেকে।
হয়তো তাই স্বাধীন ভারতের প্রথম পরিকল্পনার দলিলে সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচির ওপর একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় লেখা হলেও এবং তার উৎস সন্ধানে মধ্যপ্রদেশের সেবাগ্রাম, মাদ্রাজের ফিরক উন্নয়ন (Firka Development) কর্মসূচি, বোম্বাই-এর সর্বোদয় কেন্দ্র কিংবা উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া (Etwa) এবং গোরখপুরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার উল্লেখ থাকলেও আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিত থেকে গেছে শ্রীনিকেতনের অভিজ্ঞতার কথা। পরবর্তীতে অবশ্য সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচির মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ লিখেছেন :
“The essential features of the C.D. Programme at present in operation in India are common with the programme evolved at Sriniketan in the twenties of the present century. On the other hand, the older programme had certain features which are missed in the present programme . . . A closer scrutiny will perhaps confirm that the weak points of the present programme stem from the absence of these missing features... unfortunately, the C.D. Programme as introduced by the Central Government Lacks emotional appeal" (৯)
মূলত সমাজ নির্ভর পল্লী চর্চার রবীন্দ্রদর্শনের সঙ্গে রাষ্ট্র নির্ভর গ্রামীণ পুনর্গঠন প্রয়াসের সম্ভবত এখানেই বিরোধ। তবু রবীন্দ্রনাথ বলবেন :
“The villagers are waiting for the living touch of creative faith and not for the cold aloofness of science”. (১০)
এখানেই তার নিজস্বতা এবং প্রাসঙ্গিকতা। আজ এবং আগামীতেও। সাম্প্রতিককালের কিছু মিশন ধর্মী গ্রামোন্নয়ন কর্মসূচিতে (যেমন পশ্চিমবঙ্গের শক্তিশালী গ্রামীণ বিকেন্দ্রীকরণ বা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ) সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের পাশাপাশি বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনীর উপস্থিতি তাই আজও শ্রীনিকেতন মডেলকেই যেন সামনে এনে দেয় বার বার।
লেখক ঃউৎপল চক্রবর্তী,প্রাক্তন অনুষদ সদস্য, রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন সংস্থা, কল্যাণী,নদীয়া
(বর্তমান নিবন্ধটি আকাশবাণী কলকাতার পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নের আসরে লেখকের আলোচনার পরিমাজিত রূপ।)
তথ্য সঙ্কলনঃ পঞ্চায়েত রাজ, মে ২০১৬ সংখ্যা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020