গত ২৭ জানুয়ারি ২০১৫-এ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতা এবং বিকাশপিডিয়া টিমের যৌথ উদ্যোগে আইডিএসকের সল্টলেক স্থিত দফতরে সমাজকল্যাণের ক্ষেত্রে বিকাশপিডিয়ার অভিমুখ সংক্রান্ত এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। এই আলোচনাসভার লক্ষ্য হল কোন কোন বিষয়ে বিকাশপিডিয়াতে আলোচনা হওয়া উচিত এবং সমাজ কল্যাণের ফোরাম গঠনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা স্থির করা। বিকাশপিডিয়া মনে করে, সমাজকল্যাণ বিভাগে এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার যা থেকে মানুষ সরাসরি উপকৃত হন। যেমন মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার যোজনায় কোথায় টাকা পেতে অসুবিধা হচ্ছে, কেন অসুবিধা হচ্ছে, অসুবিধা হলে কী করা উচিত তা নিয়ে যেন বিস্তৃত আলোচনা থাকে। এবং একই সঙ্গে এই প্রকল্পটির প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষা করা প্রয়োজন। মানুষের নিজস্ব অভিজ্ঞতা এবং ক্ষেত্রসমীক্ষার ফলাফল ধরে আগামী দিনে কী করা উচিত তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে।
এ দিনের আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন মানবী মজুমদার (সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্স), দিলীপ ঘোষ (প্রতীচী ট্রাস্ট), নন্দিনী রায় (সাংবাদিক), জয়শ্রী রায় (অধ্যাপক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (ফ্যাকাল্টি, আইডিএসকে), অজিতাভ রায়চৌধুরি (অধ্যাপক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়), বিধানকান্তি দাস (ফ্যাকাল্টি, আইডিএসকে), জিনিয়া মুখোপাধ্যায় (ফ্যাকাল্টি, আইডিএসকে), শুভনীল চৌধুরী (ফ্যাকাল্টি, আইডিএসকে), নন্দিনী ঘোষ (আইডিএসকে), গোর্কি চক্রবর্তী (আইডিএসকে), প্রসেনজিৎ বসু (অর্থনীতিবিদ), অচিন চক্রবর্তী (ডিরেক্টর, আইডিএসকে), সন্ধি মুখোপাধ্যায় (প্রাক্তন আইজি, রাজ্য পুলিশ), শৈবাল বিশ্বাস (সাংবাদিক), প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, আইআইআইএম-এর সদস্য সচিব সৌম্যব্রত দাস এবং বিকাশপিডিয়ার তরফে অর্পিতা কাঞ্জিলাল ও অতনু মণ্ডল।
আলোচনার একেবারে শুরুতে কেন এই সভার আয়োজন সে সম্পর্কে স্পষ্ট দিশা দেখান আইডিএসকের ডিরেক্টর অচিন চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, এই আলোচনাসভা থেকে সমাজকল্যাণ সম্পর্কিত অনেক আইডিয়া উঠে আসবে এবং বিকাশপিডিয়া সেইমতো যদি এগোতে পারে তা হলে বহু অজানা তথ্য বা অভিজ্ঞতার কথা মানুষ জানতে পারবে। কী ভাবে সেই লক্ষ্যে এগোনো যায় তা স্থির করার ভার নেবেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা নিজেরা বিকাশপিডিয়াকে তাঁদের মূল্যবান মতামত দিতে পারেন। অথবা দিশা দেখাতে পারেন।
সূত্র : আলোচনাসভা, আইডিএসকে, বিধাননগর, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫
আলোচনাসভায় আইআইআইএমের সচিব সৌম্যব্রত দাস বিকাশপিডিয়ার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, এই পোর্টালটির উদ্দেশ্য হল একটি পারস্পরিক আলোচনা মঞ্চ তৈরি করা। এই আলোচনা মঞ্চে এক দিকে যেমন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি অংশগ্রহণ করবে, ঠিক তেমনই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বিভিন্ন শিল্প সংস্থা, ব্যক্তিও অংশ নিতে পারবে। একই সঙ্গে যাঁদের উদ্দেশ্যে এই পোর্টাল করা হয়েছে তাঁদেরও সংবেদনশীল করে তোলার বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে।
তিনি বলেন, যাঁদের জন্য এই পোর্টালটি করা অর্থাৎ একেবারে প্রান্তিক মানুষ এর দ্বারা কতটা উপকৃত হবেন ? সন্দেশখালিতে এ ধরনের সংবেদনশীলতার অনুষ্ঠান করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ৩০০ জন মহিলার মধ্যে বেশির ভাগের বাড়িতেই মোবাইল ফোন রয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহিত করা যায় তা হলে অনেকটাই উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয়। তিনি বলেন, মোবাইল অ্যাপসের ব্যবহারের মাধমে বেশ কিছু একেবারে সাধারণ পর্যায়ের তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। দেশে যে সমস্ত জন সুরক্ষা প্রকল্পগুলি রয়েছে তার ৮০ শতাংশই হল বিপিএলের জন্য। অথচ তাঁরা জানেন না কী ভাবে প্রকল্পর সুবিধা নেওয়া যায়। খুব সহজে যাতে তাদের কাছে প্রকল্পগুলির খবর বা কী ভাবে প্রকল্পর সুবিধা নেওয়া যায় তা ব্যাখ্যা করা হয় তাতে অসংখ্য মানুষের উপকার হবে।
সন্ধি মুখোপাধ্যায় বলেন, কোনটা কী ভাবে করলে উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয় সেটা দেখাই সব চেয়ে বেশি জরুরি। অর্থাৎ কোন প্রকল্পর খবর পৌঁছে দেওয়া দরকার, কী ভাবে সেই খবর পৌঁছে দেওয়া যাবে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। সে দিকে তাকিয়েই প্রকল্পের যাবতীয় তথ্য পরিবেশন করা হোক।
বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, এই পোর্টালটিকে প্রাণবন্ত করে তোলার কথা বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু প্রাণবন্ত করা মানে কী? আসলে আমরা চাইছি যাঁরা প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করতে অক্ষম তাঁরা এটিকে একটি মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করে নিজেদের অসুবিধার কথা জানাক। গোটা দেশ জানুক কোথায় কী অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। উন্নয়ন তো কখনও একমুখী হতে পারে না। যাঁরা উন্নয়নের সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁদের অনেক কিছুই বলার রয়েছে।
সূত্র : আলোচনাসভা, আইডিএসকে, বিধাননগর, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫
আগামী দিনে সমাজকল্যাণ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বিকাশপিডিয়া কী ভূমিকা নিতে পারে সে সম্পর্কে প্রাণবন্ত আলোচনার সূত্রপাত করেন আইডিএসকের ডিরেক্টর অচিন চক্রবর্তী। তিনি বিকাশপিডিয়া পোর্টালটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, সমাজকল্যাণ বিভাগে অনেকগুলি প্রোগ্রাম বা কর্মসূচি তুলে ধরা হয়েছে দেখলাম। এত অল্প সময়ের মধ্যে এতগুলি কর্মসূচি তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে তা নিশ্চয়ই খুবই ভালো। শুধু প্রকল্পগুলির পরিচয় দিলেই কিন্তু হবে না। একই সঙ্গে সরকারের নীতি ভাবনাগুলিরও পরিচয় দেওয়া দরকার ।অর্থাৎ বৃহত্তর অর্থে সরকার নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন চিন্তাগুলিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সেটিও পোর্টালের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার। এর ফলে নীতি ভাবনা নিয়েও দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। সাধারণ মানুষ তাঁদের মতামত দিতে পারেন।
প্রতীচী ট্রাস্টের দিলীপ ঘোষ বলেন, মোটামুটি তিনটি দিক নিয়ে বিকাশপিডিয়া ভাবনাচিন্তা করতে পারে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তথ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের যাবতীয় তথ্য যেমন আপলোড করা হয় তেমনই সরকারি তথ্য বা পরিষেবা সংক্রান্ত খবরও পাওয়া যায়। এই তথ্যকেন্দ্রগুলির সঙ্গে সংযোগ রেখে চললে সাম্প্রতিকতম বহু তথ্য এই পোর্টালে আপলোড করা সম্ভব। যেমন হাসপাতাল সংক্রান্ত তথ্য আমরা তথ্যকেন্দ্রের মারফত জোগাড় করতে পারি। কোথায় গেলে বেড পাওয়া যাবে, কোথায় জায়গা খালি আছে সেই তথ্য আপলোড করলে পোর্টালটি উদ্দেশ্য সিদ্ধ করবে। জন হপকিন্সের সঙ্গে মিলিত ভাবে একটি এনজিও এই কাজটি করছে। নাম দেওয়া হয়েছে মিশন আরোগ্য। বিকাশপিডিয়াও সেই কাজে শরিক হতে পারে। যদি ব্লক স্তরের বা জেলা ও মহকুমা স্তরের তথ্য পেতে অসুবিধা হয়, তা হলে গোড়ায় কেবলমাত্র মেডিক্যাল কলেজগুলি নিয়েও এই কাজ শুরু করা যেতে পারে।
দিলীপবাবু আরও বলেন, এই পোর্টালের মাধ্যমে জনগণের সমস্যার সমাধানের আলাদা ব্যবস্থা করা যায়। অর্থাৎ পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার সম্প্রতি আইন করলেও কোথায় কে পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত তা সাধারণ মানুষ জানেন না। যদি আমরা তালিকা করে সংশ্লিষ্ট অফিসারের নাম দিই তা হলে বিকাশপিডিয়া দেখেই মানুষ বুঝে নিতে পারবে কোন কাজের জন্য কার কাছে যেতে হবে, তার নাম, ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর কী। যেমন ওল্ড এজ পেনশনের ব্যাপারে স্থানীয় স্তরে কার কাছে আবেদন করতে হবে, যদি তাতে কাজ না হয় তা হলে কার কাছে যেতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ নাম টেলিফোন নম্বর সহ জমা দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া মোবাইল অ্যাপস ব্যবহারের উপরও দিলীপবাবু বিশেষভাবে জোর দেন।
সূত্র : আলোচনাসভা, আইডিএসকে, বিধাননগর, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫
অচিনবাবু বলেন, সব ব্যাপারেই ক্ষেত্র সমীক্ষার একটি আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। ক্ষেত্রসমীক্ষার ফলগুলি যদি ঠিকমতো প্রকাশিত হয় এবং কী পদ্ধতিতে ক্ষেত্রসমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ যদি দেওয়া সম্ভব হয় তা হলে বাস্তব চিত্রটা স্পষ্ট হয়ে যায়। মানবী মজুমদার এই কথার খেই ধরেই বলেন, আমরা নিজেরাই একটি ওয়েবসাইট করেছি। সেখানে প্রতীচীর যে অভিজ্ঞতা সেগুলি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ঠিক এরকম ভাবেই অন্যরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরবে এটাই কাম্য। এই ধরনের ওয়েবসাইট বা পোর্টাল যতগুলি আছে তাদের একটি লিঙ্কেজ দিলে খুবই ভালো হয় ।আসলে আমাদের এখানে তথ্যের অধিকার বিষয়টি আমরা উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তা তো নয়, আসলে এই দাবিটি তলা থেকেই উপরে আসার কথা। সুতরাং এ ব্যাপারে ‘ফ্রিকোয়েন্টলি আস্কড কোয়েশ্চেনের’ মতো করে কিছু কথা বলা থাকলে সাধারণ মানুষ তা দেখে নিজেদের পরবর্তী কর্তব্য স্থির করতে পারবেন। তথ্য চাওয়া এবং তথ্য পাওয়ার মধ্যে যদি একটি সংযোগসূত্র স্থাপন করা যায় তাহলে একটি অভিনব বিষয় হবে। দিলীপবাবু বলেন, কিছু জিনিস রয়েছে যা সোশাল মিডিয়ায় এলে সত্যিই খুব উপকার হয়। সুতরাং ‘ইউনিক’ তথ্যগুলি যদি সোশাল মিডিয়ার মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সে দিকে নজর দেওয়া উচিত।
অজিতাভ রায়চৌধুরি বলেন,একটা বড় অংশের মানুষই তথ্য জানার ব্যাপারটিতে খুবই গুরুত্ব দেন। সেই কারণে পোর্টালটিকে দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এক ভাগে থাকবে তথ্য অন্য দিকে কিছু সাফল্যের খবর। এ রকম ভাবে চললে অভিনবত্ব অর্জন করা সম্ভব হবে। তাঁর পরামর্শ, কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বক্স আইটেম হিসাবে পরিবেশন করলে সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করানো যায়। যেমন পহল কর্মসূচি। গ্যাস নিয়ে এই প্রকল্পের খুঁটিনাটি অনেকে জানেন না। সেই বিষয়গুলি বক্স আইটেম করে দিলে সাধারণ মানুষের স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করা সম্ভব।
সূত্র : আলোচনাসভা, আইডিএসকে, বিধাননগর, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপিকা জয়শ্রী রায় বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যওয়ারি, জেলাওয়ারি এমনকী এনজিওওয়ারি তথ্য নিয়ে তা সব সময় বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত কে কতটা অগ্রসর হয়েছে। তথ্য তুলনামূলক ভাবে বিচার করলে বোঝা যাবে দুর্বলতার জায়গাগুলি কী? দ্বিতীয়ত, এই পোর্টালে মন্তব্য পোস্ট করার জায়গা থাকা দরকার। অর্থাৎ এই মন্তব্যগুলিকে যাতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া যায় সে দিকে নজর রাখতে হবে। জয়শ্রীদেবীর পরামর্শ, বিপিএলদের জন্য সরকার বেশ কয়েকটি প্রকল্প চালু করেছে। তার মধ্যে একটি হল আবাসিক স্কুলে পড়ানোর ব্যবস্থা। লোকে এ ব্যাপারে বহু প্রশ্ন করে। বিকাশপিডিয়ায় যদি তথ্য দিয়ে বলা থাকে কোন জেলায় ক’টা হোম রয়েছে বা সেখানে কতগুলি আসন রয়েছে, আসন খালি রয়েছে কি না তা হলে মানুষের বহু অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ইদানীং কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটি নিয়েও চর্চা হচ্ছে। অর্থাৎ বড় বড় শিল্পসংস্থাগুলি সামাজিক দায়বদ্ধতা দেখানোর জন্য টাকা খরচ করতে বাধ্য। তারা আলাদা বিভাগও খুলেছে। সেই বিভাগের কাজ হল বাজেট নির্ণয়, কোথায় টাকা খরচ করা হবে তার পরিকল্পনা তৈরি করা ইত্যাদি। কী ভাবে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিভিন্ন শিল্পসংস্থার এই তহবিলের সহায়তা পেতে পারেন তার গাইডলাইন দেওয়ার জন্য এই পোর্টালটি ব্যবহার করা যেতে পারে। শিল্পসংস্থাগুলির তালিকা এবং তারা কোন খাতে টাকা দিতে ইচ্ছুক তার একটা বিবরণ দিতে পারলে খুবই ভালো হয়। তা হলে শিল্পসংস্থাগুলির যেমন সুবিধা হবে তেমনই যে সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই তহবিল থেকে টাকা পেতে ইচ্ছুক তাদেরও সাহায্য করা হবে। জয়শ্রী বলেন, কৃষিক্ষেত্রেও এখন তথ্যের চাহিদা খুবই বেড়ে গিয়েছে। এখন কৃষকরা বুঝেসুজে পা বাড়াতে চাইছেন। সুতরাং কোনও চাষ বা সহায়তা প্রকল্প সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারলে তাদের খুবই উপকার হবে। এর জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করা প্রয়োজন। তাঁরাই বলে দেবেন, কোন তথ্য কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয়। এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, এখন তথ্যের এবং জ্ঞাপনের ‘মাল্টিপল কোজেনারেশন’ হচ্ছে। অর্থাৎ একই তথ্য বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বিকাশপিডিয়ায় কী আছে তা যদি ফেস বুকের মতো অন্য সোশাল মিডিয়াতেও দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় তা হলে বিস্তারিত জানার জন্য অনেকেই বিকাশপিডিয়ার দ্বারস্থ হবেন। আইডিএসকের সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা একটি ক্ষেত্র সমীক্ষার কাজে খুব শীঘ্রই পান্ডুয়ায় যাচ্ছি। সেখানে কৃষি থেকে শুরু করে অন্য সব ধরনের সরকারি প্রকল্প নিয়ে কথা হবে। সেই অভিজ্ঞতার কথা বিকাশপিডিয়াতে শেয়ার করা যেতে পারে।
সূত্র : আলোচনাসভা, আইডিএসকে, বিধাননগর, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫
কী ভাবে বিকাশপিডিয়া ভবিষ্যতে কাজ করবে তার একটি রূপরেখা পরামর্শ হিসাবে তুলে ধরেন প্রসেনজিৎ বসু। তাঁর বক্তব্য, এই পোর্টালটি যেন কখনওই একমুখীন না হয়। অর্থাৎ সরকার যা জানানোর জানাবে আর কেউ কিছু বলতে পারবে না — এমনটা হলে পোর্টালের ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো হবে না। এই পোর্টালে যাতে সাধারণ মানুষও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে তথ্যও শেয়ার করতে পারেন তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আসলে ইংরেজিতে ভালো পোর্টাল প্রচুর আছে, কিন্তু বাংলা ভাষায় যে ধরনের কাজ বিকাশপিডিয়া করছে তা অভিনব। ইতিমধ্যেই বিকাশপিডিয়া টিম একটি ভালো আর্কাইভ তৈরি করতে পেরেছ। কিন্তু শুধু তথ্যের আর্কাইভ হলে চলবে না। উন্নয়নের বিভিন্ন ইস্যুগুলি নিয়ে বিতর্কের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন ধরুন, একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক রয়েছে। এক দল বলছেন প্রকল্পটির কোনও গুরুত্ব নেই, এটি তুলে দেওয়াই ভালো। আবার এক দল বলছেন, প্রকল্পটি যাতে আরও বেশি করে কাজে লাগানো যায় তার ব্যবস্থা করা উচিত। কেউ বা আবার বলছেন, মডেল হিসেবে কোনও জায়গা বেছে নিয়ে দেখা যাক এই ধরনের প্রকল্প চালিয়ে আদৌ কোনও উপকার করা যায় কিনা। এই সব প্রকল্পকে এক জায়গায় এনে একটি বিতর্ক মঞ্চ তৈরি করতে পারলে সব চেয়ে ভালো হয়। আসলে পোর্টালের মাধ্যমে তো বিতর্কের সবটা ধরা সম্ভব হবে না, কিন্তু মূল বিতর্কের একটি রূপরেখা যদি তুলে ধরা সম্ভব হয় তা হলে ভবিষ্যতে এই নিয়ে আলোচনার মঞ্চটা অনেকটাই প্রসারিত হতে পারে। সেখানে, অর্থাৎ এই আলোচনা মঞ্চে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি দেবাশিস কোনার বলেন, মাসে অন্তত এক দিন করে আমরা সবাই মিলিত হয়ে বিতর্ক করতে পারি। এর ফলে বিকাশপিডিয়ার কনটেন্ট অনেকটাই বাড়বে। প্রসেনজিৎ সেই কথার রেশ টেনে বলেন, বহু বিষয় রয়েছে যা নিয়ে নিরন্তর তর্ক চলতে পারে। যেমন ধরা যাক মুসলমানদের উন্নতিকল্পে সাচার কমিটি রিপোর্ট। এই রিপোর্টকে অনেকেই মান্যতা দিয়েছিলেন। কিন্তু রিপোর্ট বের হওয়ার পরে আদৌ কি অবস্থার কোনও উন্নতি হয়েছে? নাকি মুসলমানরা সেই অন্ধকারেই পড়ে রয়েছেন? এই নিয়ে কোনও সমীক্ষা কিন্তু চোখে পড়েনি। এই নিয়ে হয়তো কিছু কিছু ফিল্ড ওয়ার্ক হয়েছে, কিন্তু তার ‘আউটকাম অ্যানালিসিস’ বা প্রাপ্ত তথ্যকে বিশ্লেষণ করার কাজটা থমকে রয়েছে। অচিন চক্রবর্তী বলেন, ক্ষেত্রসমীক্ষার রিপোর্ট হয়তো জানিয়ে দেওয়া হল কিন্তু তার মূল্যায়ন হল না — এটাই অসুবিধার দিক। এই নিয়ে বিকাশপিডিয়ার ভাবা উচিত।
বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, যদি আপনারা লেখা দেন, তা হলে সে সবে কাজ হবে। দেখতে হবে মানুষের সমস্যার সমাধান হচ্ছে কিনা। সেটাই আসল ব্যাপার। কোথায় গরিব মানুষ অসুবিধায় পড়ছেন সেটা সর্বস্তরের মানুষ যদি জানতে না পারেন তা হলে গণতন্ত্রই বলুন আর উন্নয়নই বলুন — সবটাই থমকে যাবে।
সূত্র : আলোচনাসভা, আইডিএসকে, বিধাননগর, ২৭ জানুয়ারি ২০১৫
যদিও এখনও অনেক কাজ বাকি, তবু অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পে শিশু ও নারীর উন্নয়নে বাংলা ও বিহারের কিছু অংশে যে কাজ হয়েছে তা আশার আলো জাগিয়েছে৷ আমরা চাই এই দিকটা আরও ব্যাপক হোক৷ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন সোমবার একথা বলেছেন৷ এদিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে প্রতীচী ট্রাস্টের দ্বিতীয় রিপোর্টটি তিনি প্রকাশ করেন৷ খুবই অসুস্হ৷ কথাও বলতে পারছিলেন না৷ কন্ঠস্বর প্রায় রুদ্ধ৷ অনুষ্ঠানের একেবারে শেষপর্বে কয়েকটি বাক্যে তার আশার কথা বললেন৷ ২০০৮ সালে বাংলা ও বাংলা লাগোয়া বিহারে কয়েকটি গ্রামে কিছু অঞ্চলে প্রতীচী ট্রাস্ট শিশু ও নারীদের স্বাস্হ্য, শিক্ষা ও যাপিত জীবনের ওপর পর্যবেক্ষণ চালায়৷ তার ভিত্তিতে প্রথম রিপোর্টটি প্রকাশ করে৷ তাতে আশঙ্কাজনক একটা চিত্র ফুটে বেরোয়৷ এই বাংলাতেও এমন কোনও কোনও বিদ্যালয় আছে, যেখানে দলিত ছাত্রদের সঙ্গে পাশাপাশি বর্ণহিন্দু ছাত্ররা বসে না৷ পানীয় জল, স্বাস্হ্য পরিষেবারও করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে৷ ২০১৪ সালে সেইসব গ্রামের সেই অঞ্চলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ফিরে গেছে প্রতীচী ট্রাস্টের কর্মীরা৷ কোথাও কোথাও আজও পানীয় জলের সঙ্কট৷ কিন্তু সামগ্রিকভাবে বেশ উন্নতি দেখা দিয়েছে৷ অসুস্হতার জন্য সাংবাদিকদের জবাব দেন মানবী মজুমদার৷ রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা জমি৷ জমি পাওয়া সমস্যা, পেলেও তা কেনার জন্য টাকার সমস্যা৷ এখানে খুবই ছোট ছোট শিশুরা পড়ে৷ ক্ষমতা না থাকলেও পরিচ্ছন্ন ও খোলামেলা পরিবেশের জন্য আধা শহর ও অনেক শহরেও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ছেড়ে অভিভাবকরা পাঠান কিন্ডারগার্টেন স্কুলে৷ রিপোর্ট থেকে একটা কথা পরিষ্কার, শিশু ও নারীদের জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র দ্বারা উন্নয়নমূলক কাজ সম্ভব হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্দেশের ফলে৷ রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, অপুষ্টি যেখানে সবচেয়ে বড় ব্যাধি সেখানে গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীরা শুরু থেকেই শিশু সম্তানদের মাতৃস্তন্য পান থেকে বঞ্চিত রাখেন৷ তাঁদের একটা ভ্রাম্ত ধারণা রয়েছে, শিশুর জন্মের পর পরই মাতৃস্তন্য পান করানো শিশুর ক্ষতি করে৷ এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা৷ মানবী মজুমদার জানিয়েছেন, এই যে রিপোর্ট তৈরি হয়েছে তাতে বাংলা ও বিহারের ২২টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে৷ প্রতীচী ট্রাস্টের দাবি, শুরু থেকে ৬ বছর পর্যম্ত শিশুদের ক্ষেত্রেও স্বাস্হ্য এবং শিক্ষা পরিষেবা আবশ্যিক করা হোক৷
সূত্র : আজকাল, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020