ভারতে প্রতি দশ জন মেয়ের চার জনের নিজেদের বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলার থাকে না। দশ জনের মধ্যে আট জনকেই চিকিৎসক দেখাতে গেলে বাড়ির অনুমতি নিতে হয়। দশ জনের মধ্যে ছ’ জনকেই কোনও না কোনও ভাবে মাথা ঢাকতে হয় এবং বিয়েতে গড়পড়তা ৩০ হাজার টাকা পণ দিতে হয়।
দি ন্যাশানাল কাউন্সিল ফর অ্যাপ্লায়েড ইকনমিক রিসার্চ (এনসিএইআর) ভারতীয় মানবসম্পদ সমীক্ষা (এএইচডিএস) করেছে। জাতীয় নমুনা সমীক্ষার পর এটিই সর্ববৃহৎ বাড়িভিত্তিক সমীক্ষা। এনসিএইআর-ই একমাত্র এ ধরনের বড় মাপের স্বাধীন সমীক্ষা করে। সমীক্ষায় আয়-ব্যয় সংক্রান্ত অর্থনৈতিক তথ্য, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উন্নয়ন তথ্য এবং ধর্ম, লিঙ্গ ও জাত সম্পর্কিত সামাজিক তথ্য রয়েছে। এই সমীক্ষার সাম্প্রতিকতম তথ্যের ভিত্তি হল ২০১১-১২ সালের সমীক্ষা। সমীক্ষা চলাকালীন দেশ জুড়ে ৪২ হাজার বাড়ি যাওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৮৩ শতাংশ বাড়িতে ২০০৪-৫ সালে সমীক্ষা করা হয়েছিল।
তথ্য দেখাচ্ছে, বাল্যবিবাহ রোধের ক্ষেত্রে ভারত এগিয়েছে। ২৫ বছর বয়স এমন মহিলাদের ৪৮ শতাংশ ১৮ বছরের নীচে বিয়ে করেছে। ২০০৪-৫ অনুযায়ী এই হার ছিল ৬০ শতাংশ। নারী প্রতি (৪০ বছরের বেশি বয়স্ক) শিশু জন্মের হার কিছুটা হলেও (৩.৫৫ শতাংশ) কমেছে, যার থেকে বোঝা যায় সার্বিক ভাবে জন্মের হার কমেছে। সম্পর্কিত বোন বা আত্মীয়কে বিয়ে করার প্রচলন উত্তর ভারতের চেয়ে দক্ষিণ ভারতে বেশি ছিল। এই ধরনের বিয়ের সংখ্যাও কমেছে। যদিও অন্ধ্র ও কর্ণাটকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের বিয়ে হচ্ছে।
যদিও মেয়েদের স্বাধিকারের বিষয়টি এখনও অনেকটাই অধরা। ৪১ শতাংশ মেয়েদের নিজেদের বিয়ের ব্যাপারে মতামত দেওয়ার অধিকার নেই। এদের মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ মেয়ে বিয়ের আগে স্বামীকে জানার সুযোগ পায়। এ দিক দিয়ে আমরা তেমন উন্নতি করতে পরিনি। মেয়েদের বিয়েতে মত দেওয়ার অধিকার তখনই বাড়ে যখন আর্থিক উন্নতি হয়, শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটে, শহরের সম্প্রসারণ হয়। এ ব্যাপারে দক্ষিণের রাজ্যগুলি অনেকটাই এগিয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, মাত্র ১০ শতাংশ মহিলা জানিয়েছে, বাড়িতে বড় কিছু কেনার আগে তাদের মতামত নেওয়া হয়, ২০ শতাংশেরও কম মহিলার বাড়ির দলিলে নাম আছে, ৮১ শতাংশ মহিলাকে চিকিৎসক দেখাতে গেলে বাড়ির লোকজনের অনুমতি নিতে হয়। ৬০ শতাংশ মহিলার, যার মধ্যে ৫৯ শতাংশ উচ্চ হিন্দু জাতির ও ৮৩ শতাংশ মুসলিম, জীবন কাটে ঘোমটা বা পর্দার আড়ালে। অর্ধেকেরও বেশি মহিলা জানিয়েছেন, অনুমতি না নিয়ে বাড়ির বাইরে গেলে তাঁদের মার খেতে হয়।
গড়পড়তা ভারতীয় পরিবার পণ হিসাবে গড়ে ৩০ হাজার টাকা দেয়। ৪০ শতাংশ মহিলাই জানিয়েছেন, তাঁদের বিয়ের ক্ষেত্রে টিভি বা গাড়ির মতো পণ্য পণ দিতে হয়েছে। পণ হিসেবে দামি জিনিস দেওয়ার রেওয়াজ মুসলমানদের মধ্যে সব চেয়ে কম এবং উচ্চ শ্রেণির হিন্দুদের মধ্যে আকছারই ঘটে। দরিদ্রতম গ্রামেও বিয়ের খরচ ন্যূনতম এক লক্ষ টাকা। ছোট শহরে এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা। ২০০৪-৫-এর সমীক্ষায় যে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল তার চেয়ে খরচের অঙ্ক অনেকটাই বেড়েছে। কেরল এবং দিল্লিতে বিয়ের খরচ সবচেয়ে বেশি।
সুত্রঃ পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/29/2020