১৯৮৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে এই দফতর তৈরি হয়। পরে ২০০৬ সাল থেকে এই দফতরটি পূর্ণ মন্ত্রকের মর্যাদা পায়। এর কাজ হল নারী ও শিশুদের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা রূপায়ণ করা।
কর্তব্য
এই মন্ত্রকের মুখ্য কর্তব্য হল নারী ও শিশুর সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা। এই লক্ষ্যে এই মন্ত্রক পরিকল্পনা, নীতি ও কর্মসূচি তৈরি করে, আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করে এবং নারী ও শিশু উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে সব সরকারি ও বেসরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে, তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ও দিশা দেখায়।
এর পাশাপাশি নারী ও শিশু কল্যাণের লক্ষ্যে এই মন্ত্রক কিছু অভিনব কার্যক্রমও তৈরি করে। এর মধ্যে রয়েছে কল্যাণমূলক ও সহায়তা করার লক্ষ্যে নেওয়া কর্মসূচি, কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ও লিঙ্গ বৈষম্য সংক্রান্ত সচেতনতা সৃষ্টি। এই কার্যক্রমগুলি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সহযোগী ও পরিপূরক ভূমিকা পালন করে। এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষমতাশীল হয়ে উঠে জাতীয় উন্নয়নের প্রশ্নে নারীরা যাতে পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে আসতে পারে তা সুনিশ্চিত করা।
নীতিগত উদ্যোগ
শিশুদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই মন্ত্রক গোটা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ, অভিনব এবং দুর্দান্ত ফলপ্রসূ একটি প্রকল্প নিয়েছে যার নাম ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভলপমেন্ট সার্ভিস (আইসিডিএস) বা সুসংহত শিশু বিকাশ পরিষেবা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুদের পরিপূরক পুষ্টি, টিকাকরণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্কুল-পূর্ববর্তী ঘরোয়া শিক্ষা ও রেফারেল সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও সংযোগ স্থাপন ও পরিদর্শনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলা হয়। এই মন্ত্রকের বেশির ভাগ কর্মসূচিই রূপায়িত হয় বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে। সম্প্রতি এই মন্ত্রক যে সব নীতিগত উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে আইসিডিএসকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া, কিশোরী শক্তি যোজনার রূপায়ণ, বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের জন্য পুষ্টির ব্যবস্থা করা, শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কমিশন গঠন করা এবং গার্হস্থ্য হিংসা থেকে নারীদের রক্ষা করার আইন (প্রোটেকশান অফ উওমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট) প্রণয়ন।
সংগঠন
প্রতিষ্ঠান
- জন-সহযোগিতা ও শিশু উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় কমিশন (ন্যাশনাল কমিশন অফ পাবলিক কোঅপারেশন অ্যান্ড চাইল্ড ডেভলপমেন্ট, সংক্ষেপে এনআইপিসিসিডি)
- জাতীয় মহিলা কমিশন (ন্যাশানাল কমিশন ফর উওমেন, সংক্ষেপে এনসিডব্লিউ)
- শিশু অধিকার রক্ষায় জাতীয় কমিশন (ন্যাশানাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস, সংক্ষেপে এনসিপিসিআর)
- দত্তক গ্রহণ সংক্রান্ত জাতীয় এজেন্সি (সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স এজেন্সি, সংক্ষেপে সিএআরএ)
- কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ পর্ষদ (সেন্ট্রাল সোশাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড, সংক্ষেপে সিএসডব্লিউবি)
- রাষ্ট্রীয় মহিলা কোষ (আরএমকে)
- এই মন্ত্রকের আওতায় কর্মরত এনআইপিসিসিডি এবং আরএমকে সোসাইটি রেজিস্ট্রশন অ্যাক্ট ১৮৬০ অনুসারে নথিভুক্ত সংস্থা। সিএসডব্লিউবি ১৯৫৬-এর কোম্পানি আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী নথিভুক্ত কোম্পানি। এগুলি সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থে চলে। এদের কাজ সরকারি কর্মসূচি রূপায়ণে সহযোগিতা করা। জাতীয় মহিলা কমিশন ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত সর্বোচ্চ বিধিবদ্ধ জাতীয় সংস্থা যার কাজ নারীর অধিকার সুরক্ষিত করা। ২০০৭-এর মার্চে প্রতিষ্ঠিত শিশু অধিকার রক্ষায় জাতীয় কমিশনও একটি সর্বোচ্চ বিধিবদ্ধ জাতীয় সংস্থা যার কাজ শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত করা।
মন্ত্রকে ন্যস্ত বিষয়সমূহ
- পরিবার কল্যাণ
- নারী ও শিশু কল্যাণ এবং এ বিষয়ে অন্য মন্ত্রক ও সংগঠনের কাজে সমন্বয় সাধন।
- নারী ও শিশু পাচার রোধে রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্দেশ রূপায়ণ।
- প্রাথমিক শিক্ষা-পূর্ব স্কুল-পূর্ববর্তী শিশুদের যত্ন।
- জাতীয় পুষ্টি নীতি, জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচি ও জাতীয় পুষ্টি মিশন।
- এই দফতরে ন্যস্ত বিষয়গুলি সংক্রান্ত সেবামুলক ও ধর্মীয় দান।
- এই দফতরের কর্মসূচি সম্পাদনে স্বেচ্ছামূলক উদ্যোগকে উৎসাহ প্রদান।
রূপায়ণ
- নারী ও বালিকা বেশ্যাবৃত্তি আইন (ইমমরাল ট্রাফিক ইন উইমেন অ্যান্ড গার্ল) অ্যাক্ট ১৯৫৬ (১৯৮৬-তে সংশোধিত)
- নারীদের অশোভন বর্ণনা প্রতিরোধ আইন (দি ইনডিসেন্ট রিপ্রেজেন্টেশন অফ উইমেন (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট ১৯৮৬ (১৯৮৬-এর ৬০ নম্বর)
- পণ নিষিদ্ধ আইন (ডাওরি প্রহিবিশন অ্যাক্ট) ১৯৬১ (১৯৬১-র ২৮ নম্বর)
- সতী প্রতিরোধ আইন (দি কমিশন অফ সতী প্রিভেনশন অ্যাক্ট) ১৯৮৭, (১৯৮৮-র ৩ নম্বর), এই আইনের অধীন অপরাধের ফৌজদারি বিচারের পরিচালন ছাড়া।
- শিশুদের বিকল্প দুধ, ফিডিং বোতল ও শিশুখাদ্য (উৎপাদন, সরবরাহ ও বিতরণ নিয়ন্ত্রণ) আইন ১৯৯২ (১৯৯২-এর ৪১ নম্বর)
- কেয়ার তথা ‘কোঅপারেটিভ ফর অ্যাসিসট্যান্স অ্যান্ড রিলিফ এভরিহোয়্যার’-এর কাজকর্মে সমন্বয় সাধন।
- লিঙ্গভিত্তিক তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলা সহ নারী ও শিশু উন্নয়ন ও কল্যাণ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিকল্পনা, মূল্যায়ন, গবেষণা, নজরদারি, প্রকল্প রূপায়ণ, পরিসংখ্যান তৈরি, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।
- রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)
- কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ পর্ষদ (সিএসডব্লিউবি)
- ন্যাশানাল ইনিস্টিটিউট অফ পাবলিক কোঅপারেশন অ্যান্ড চাইল্ড ডেভলপমেন্ট (এনআইপিসিসিডি)
- খাদ্য ও পুষ্টি পর্ষদ (ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড, সংক্ষেপে এফএনবি)
- পরিপূরক ও সুরক্ষিত খাদ্য উন্নয়ন ও জনপ্রিয় কর।
- পুষ্টির সম্প্রসারণ।
নারীদের ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গসমতা
- জাতীয় মহিলা কমিশন
- রাষ্ট্রীয় মহিলা কোষ
- দি জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশান অফ চিলড্রেন) অ্যাক্ট ২০০০ (২০০০-এর ৫৬ নম্বর) অর্থাৎ কিশোরদের বিচার (শিশুদের রক্ষা ও যত্ন) আইন
- কিশোর অপরাধীদের উপযুক্ত তত্ত্বাবধান
- দত্তক গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়, সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স এজেন্সি তৈরি, চাইল্ড হেল্প লাইন (চাইল্ড লাইন)
- দি চিলড্রেন অ্যাক্ট ১৯৬০ (১৯৬০-এর ৬০ নম্বর)
- দি চাইল্ড ম্যারেজ রেস্ট্রেন্ট অ্যাক্ট ১৯২৯ (১৯২৯-এর ১৯ নম্বর) অর্থাৎ বাল্যবিবাহ দমন আইন
সুত্রঃ পোর্টাল কনটেন্ট টিম