মেইনটেনেন্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়ার সিটিজেন্স অ্যাক্ট ২০০৭
বিস্তৃতি এবং সূচনা
এই আইনকে মেইনটেনেন্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়ার সিটিজেন্স অ্যাক্ট ২০০৭ বা প্রবীণ নাগরিক ও বাবা-মায়ের রক্ষণাবেক্ষণ ও কল্যাণ আইন ২০০৭ বলা যায়।
জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়া গোটা ভারতে এই আইন প্রযোজ্য। যে সব ভারতীয় প্রবীণ নাগরিক দেশের বাইরে বসবাস করছেন তাঁদের ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য।
সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রাজ্য যে দিন থেকে মনে করবে সেই দিন থেকে সেই রাজ্যের ক্ষেত্রে এই আইন চালু হবে।
আইন অনুসারে সংজ্ঞা
বিষয় অন্য ভাবে না বোঝালে এই আইনে --
‘চিলড্রেন’ বা ‘সন্তানরা’ বলতে বোঝায় ছেলে, মেয়ে, নাতি ও নাতনি। কিন্তু তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে চলবে না। ‘মেইনটেনেন্স’ বা ‘রক্ষণাবেক্ষণ’-এর অর্থ খাদ্য, পরিধান, বাসস্থান, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ‘মাইনর’ বা ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ বলতে বোঝায় মেজরিটি অ্যাক্ট ১৮৭৫ অনুযায়ী যারা ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হয়নি বা সাবালক হওয়ার বয়সে পৌঁছয়নি।
‘পেরেন্ট’ বা ‘বাবা-মা’ অর্থে বাবা বা মা যিনি জৈবিক সূত্রে জন্মদাতা বা জন্মদাত্রী হতে পারেন, বা পালকপিতা বা পালকমাতা হতে পারেন অথবা সৎ-বাবা, সৎ-মাও হতে পারেন। বাবা বা মা-কে যে প্রবীণ নাগরিক হতেই হবে এমন নয়।
‘প্রেস্ক্রাইবড’ অর্থে বোঝায় এই আইনের অধীনে রাজ্য সরকারের জারি করা বিধি দ্বারা নির্দেশিত।
‘প্রপার্টি’ বা সম্পত্তি মানে স্থাবর বা অস্থাবর যে কোনও সম্পত্তি। সেই সম্পত্তি নিজস্ব হোক বা পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত হোক, দৃশ্যমান হোক বা না হোক। ওই ধরনের সম্পত্তিতে অধিকার বা আগ্রহও সম্পত্তির সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে।
‘রিলেটিভ’ বা আত্মীয় অর্থে কোনও সন্তানহীন প্রবীণ নাগরিকের আইনি উত্তরাধিকারীকে বোঝানো হয়েছে যিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে চলবে না এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর যিনি তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েছেন বা হবেন।
‘সিনিয়ার সিটিজেন’ বা প্রবীণ নাগরিক অর্থে ভারতীয় নাগরিক যিনি ষাট বছরে বয়সে পদার্পণ করেছেন বা ষাট পেরিয়ে গেছেন।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সাপেক্ষে ‘স্টেট গভরমেন্ট’ বা রাজ্য সরকার অর্থে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে সংবিধানের ২৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নিযুক্ত প্রশাসককে বোঝানো হয়েছে।
‘ট্রাইবুনাল’ অর্থে আইনের সাত নম্বর ধারা অনুসারে প্রতিষ্ঠিত রক্ষণাবেক্ষণ বা মেইনটেনেন্স ট্রাইবুনাল।
‘ওয়েলফেয়ার’ বা কল্যাণ অর্থে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য খাদ্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিনোদন কেন্দ্র এবং অন্যান্য প্রযোজনীয় ব্যবস্থা।
বাবা-মা ও প্রবীণ নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণ
বাবা বা মা বা যে কোনও প্রবীণ নাগরিক যিনি নিজের আয় থেকে বা নিজের মালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে বেঁচে থাকার মতো অর্থের সংস্থান করতে পারেন না তিনি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে এই আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী একটি আবেদন পেশ করতে পারবেন।
দাদু-দিদিমা বা বাবা-মা, তাঁদের এক বা একাধিক সন্তানের বিরুদ্ধে যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক নয়।
এক জন সন্তান বা আত্মীয়ের তাঁর প্রবীণ নাগরিককে দেখভাল করার দায়িত্বের মধ্যে প্রবীণ নাগরিকের সেই প্রয়োজনটুকুও বোঝায় যাতে তিনি স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।
এক জন সন্তানের তাঁর বাবা বা মাকে দেখভাল করার দায়িত্বের মধ্যে সেই বাবা বা মা বা দু’জনেরই সেই প্রয়োজনটুকুও বোঝায় যাতে তিনি স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।
কোনও ব্যক্তি কোনও প্রবীণ নাগরিকের আত্মীয় হলে এবং তাঁর যদি যথেষ্ট সামর্থ্য থাকে তা হলে তিনি সেই প্রবীণ নাগরিকের দেখভাল করবেন যদি সেই প্রবীণ নাগরিকের সম্পত্তি ওই ব্যক্তির দখলে থাকে বা তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন।
মনে রাখতে হবে এ ক্ষেত্রে যদি একাধিক আত্মীয় ওই প্রবীণ নাগরিকের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন তা হলে যে যতটা পরিমাণ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ওই প্রবীণ নাগরিককে দেখভাল করার ক্ষেত্রে তাঁদের দায় সেই অনুপাতে ভাগ হয়ে যাবে।
অধিক্ষেত্র ও পদ্ধতি
ধারা ৫ অনুযায়ী সন্তান-সন্ততি বা আত্মীয়ের বিরুদ্ধে সেই জেলায় ব্যবস্থা নেওয়া যায় যেখানে—
সে বসবাস করছে বা শেষ বার বসবাস করেছে।
যেখানে সন্তান বা আত্মীয় বসবাস করছে।
ধারা ৫ অনুযায়ী পেশ করা আবেদনপত্র হাতে পাওয়ার পর ট্রাইবুনাল সংশ্লিষ্ট সন্তান বা আত্মীয় যাঁর বিরুদ্ধে আবেদনপত্র পেশ করা হয়েছে তাঁকে হাজির করানোর প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
সংশ্লিষ্ট সন্তান বা আত্মীয়কে হাজির করানোর ক্ষেত্রে ট্রাইবুনালের হাতে ১৯৭৩-এর ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের যে ক্ষমতা সেই ক্ষমতা থাকবে।
আবেদন সংক্রান্ত সমস্ত সাক্ষ্য সেই সন্তান বা আত্মীয়ের সামনে গ্রহণ করা হবে যাঁর বিরুদ্ধে রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হবে এবং সমন ধরানোর ক্ষেত্রে যে ভাবে সাক্ষ্য রেকর্ড করা হয় এ ক্ষেত্রেও সাক্ষ্য সে ভাবে রেকর্ড করা হবে। যদি ট্রাইবুনাল মনে করে, যে সন্তান বা আত্মীয়ের বিরুদ্ধে রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ দেওয়ার নির্দেশ জারি করা হবে তিনি বা তাঁরা ইচ্ছা করে সমন এড়িয়ে চলছেন বা ট্রাইবুনালে হাজিরা দেওয়ার ব্যাপারে অবহেলা করছেন তা হলে ট্রাইবুনাল এক তরফা ভাবে মামলাটির শুনানি এবং নিষ্পত্তি করতে পারে।
যদি সংশ্লিষ্ট সন্তান বা আত্মীয় বিদেশে থাকেন তা হলে কেন্দ্রীয় সরকার সরকারি গেজেটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যাকে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ স্থির করবে তার মাধ্যমে তাঁকে শমন ধরানো হবে।
ট্রাইবুনাল ধারা ৫ অনুযায়ী শুনানি শুরু করার আগে কোনও কনসিলিয়েশন অফিসার বা মধ্যস্থতাকারী অফিসারের কাছে বিষয়টি পাঠাতে পারে এবং ওই অফিসার অনুসন্ধান করে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবেন। যদি আপসমূলক নিষ্পত্তি হয়, তা হলে ট্রাইবুনাল সেই মর্মে নির্দেশ জারি করবে।
ব্যাখ্যা— এই উপধারার ‘কনসিলিয়েশন অফিসার’ বা মধ্যস্থতাকারী অফিসার মানে আইনের ৫ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারা অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি বা কোনও সংস্থার প্রতিনিধি অথবা আইনের ১৮ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারা অনুযায়ী রাজ্য সরকারের নিযুক্ত কোনও রক্ষণাবেক্ষণকারী অফিসার বা মেইনটেনেন্স অফিসার বা এই কাজের জন্য ট্রাইবুনালের নিযুক্ত কোনও ব্যক্তি।
বিধি তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্যের ক্ষমতা
১) এই আইন কার্যকর করার স্বার্থে রাজ্য সরকার অফিসিয়াল গেজেটে বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রযোজনীয় বিধি তৈরি করতে পারে।
২) পূর্বোল্লিখিত ক্ষমতার সর্বজনীনতার ক্ষতি না করে নিম্নলিখিত বিধির ব্যবস্থা করা যেতে পারে ---
ধারা ৫-এ অনুসন্ধান করার যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে তৎসম্পর্কিত বিধি ধারা ৮-এর উপধারা ১ অনুসারে তৈরি করা যেতে পারে।
ধারা ৮-এর উপধারা ২ অনুসারে অন্য উদ্দেশ্যে ট্রাইবুনালের পদ্ধতি ও ক্ষমতা সম্পর্কিত বিধি।
ধারা ৯–এর উপধারা ২ অনুসারে ট্রাইবুনালের নির্ধারিত সর্বোচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা সম্পর্কিত বিধি।
ধারা ১৯-এর উপধারা ২ অনুযায়ী বৃদ্ধাবাস রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্প এবং তাতে চিকিৎসার জন্য প্রাপ্তব্য বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা, গুণমান এবং বিনোদনের ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিধি প্রণয়ন।
ধারা ২২-এর উপধারা ২ অনুযায়ী এই আইনের বিভিন্ন ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য কর্তৃপক্ষকে প্রদত্ত ক্ষমতা এবং কর্তব্য সম্পর্কিত বিধি।
ধারা ২২-এর উপধারা ২ অনুসারে প্রবীণ নাগরিকের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার ব্যবস্থা করতে একটি সুসংহত সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন সংক্রান্ত বিধি।
এ ব্যাপারে বিধান দেওয়ার মতো যে কোনও বিষয় সংক্রান্ত বিধি।
৩) এই সম্পর্কিত সব বিধি তৈরির করার পরই রাজ্য বিধানসভায় (যে সব রাজ্যে দু’টি কক্ষ রয়েছে সেখানে উভয় কক্ষে এবং যেখানে একটি কক্ষ রয়েছে সেখানে একটিতেই) তা পাশ করিয়ে নিতে হবে।