অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

প্রতিবন্ধী কল্যাণ

প্রতিবন্ধী কল্যাণ

প্রতিবন্ধকতা কমিশনারের অফিস ও তার কাজ

ভূমিকা

১৯৯৫ সালের পারসনস উইথ ডিসএবিলিটি অ্য‌াক্টের ধারা এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রতিবন্ধকতা (পূর্ণ সুযোগ, অধিকার সুরক্ষা এবং পূর্ণ অংশগ্রহণ) বিধি ১৯৯৯ অনুসারে রাজ্য‌ সরকার সমাজ কল্য‌াণ, নারী ও শিশু কল্য‌াণ মন্ত্রকের অধীনে প্রতিবন্ধকতা কমিশনারের অফিস তৈরি করেছে। এই অফিসটির ঠিকানা হল-৪৫,গণেশচন্দ্র অ্য‌াভেনিউ, কলকাতা-৭০০০১৩ (তৃতীয় ও চতুর্থ তল)। প্রতিবন্ধীদের শংসাপত্র দেওয়া সংক্রান্ত পদ্ধতির সময়ে সময়ে পরিবর্তন করা হয়েছে। সাম্প্রতিকতম পরিবর্তন হয়েছে, ২৭ ডিসেম্বর ২০১১ সালে।

দফতর যে কাজগুলি করে থাকে

কমিশনারের দফতরের অন্য‌তম কাজই হল স্বাস্থ্য‌ ও পরিবার কল্য‌াণ দফতরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে নিয়মিত মেডিক্য‌াল বোর্ড বসানো যাতে প্রতিবন্ধীরা বিনা আয়াসে শংসাপত্র ও পরিচয়পত্র পান। স্বাস্থ্য‌ দফতরের কাজ হল প্রতিটি মহকুমা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এবং কলকাতার চারটি মেডিক্য‌াল কলেজে নিয়মিত বোর্ড বসানো।

স্বাস্থ্য‌ দফতর বহু দিন ধরে প্রচলিত বিধির কিছু পরিবর্তন করার আর্জি জানিয়ে আসছে। সেই আর্জি মোতাবেক প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য‌ কেন্দ্র, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য‌ কেন্দ্র, স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতাল ও নিয়মিত সংস্থা দ্বারা পরিচালিত যে কোনও হাসপাতালকে প্রতিবন্ধকতার ব্য‌াপারে মেডিক্য‌াল অথরিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

কমিশন স্থাপনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিশেষ মেডিক্য‌াল ক্য‌াম্প ও নিয়মিত বোর্ডের মাধ্য‌মে ৪০ শতাংশের নীচে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন ৩,২৯,৮৯৫ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়নি। অর্থাৎ ২০০১-এর জনসমীক্ষা অনুযায়ী ১৮,৪৭,১৭৪ জন প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্য‌ে ১১,৫৭,০৩৩ জন মানুষকে মেডিক্য‌াল বোর্ড পরীক্ষা করে দেখেছে। মোট কভারেজের পরিমাণ ৬২.৬৪ শতাংশ।

পরীক্ষা পদ্ধতি সহজ হওয়ায় বহু প্রতিবন্ধী মানুষের উপকার হয়েছে। এখন থেকে প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত শংসাপত্র নেওয়ার জন্য‌ তাঁদের আর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না। বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন পেলে সঙ্গে সঙ্গেই শংসাপত্র প্রদানের ব্য‌বস্থা করা হয়। কমিশনার স্থাপনের পর প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত শংসাপত্র নিয়ে অভিযোগের পরিমাণ ক্রমশ কমছে।

প্রতিবন্ধী কল্য‌াণ কমিশন

শিক্ষা

  • বিশেষ সাহায্য‌ প্রয়োজন রয়েছে এমন শিশুদের জন্য‌ নিখরচায় শিক্ষার ব্য‌বস্থা।
  • প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য‌ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তিন শতাংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে।
  • ভর্তির সময় শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য‌ পাঁচ শতাংশ নম্বরে ছাড় দেওয়া হয়।
  • ভর্তির পরীক্ষা, পাশ করার পরীক্ষা, চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধীদের অতিরিক্ত কুড়ি মিনিট সময় দেওয়া হয়। দৃষ্টিশক্তিহীনদের জন্য‌ লেখার লোক দেওয়া হয়।
  • শ্রবণশক্তিহীনদের জন্য‌ যে কোনও একটি ভাষায় পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। দৃষ্টিশক্তিহীনদের জন্য‌ আলাদা প্রশ্নপত্রের ব্য‌বস্থা থাকে। তাদের জন্য‌ আলাদা বইয়েরও ব্য‌বস্থা করে স্কুলশিক্ষা দফতর।

বৃত্তি

নারী কল্য‌াণ ও সমাজ কল্য‌াণ দফতর নবম শ্রেণির নীচে পাঠরত ৫ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীকে নিম্নে লিখিত তালিকা অনুযায়ী বৃত্তি প্রদান করে।

জেলায় রিভিউ মিটিং করার সময় রাজ্য‌ কমিশনার প্রতিটি জেলার জেলা সমাজকল্য‌াণ আধিকারিককে নির্দেশ দিয়েছেন, বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলি আবেদন বকেয়া রয়েছে তার হিসাব দিতে। তা হলেই বোঝা যাবে জেলা অনুযায়ী কতটা কোটা বাড়ানোর প্রয়োজন। প্রতিটি জেলায় কমিশনারের অফিস অন্য‌ দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রতিবন্ধীদের বৃত্তি প্রদান করে।

বিষয়

হার

নবম শ্রেণির নীচে বৃত্তি

প্রতি মাসে ৩০০ টাকা

দৃষ্টিশক্তির দিক দিয়ে অক্ষমদের রিডার খরচ

প্রতি মাসে ১০০ টাকা

এলএইচ/এমআর/অটিজম-এর জন্য‌

প্রতি মাসে ১৫০ টাকা

পড়া ও শেখানোর সরঞ্জাম বাবদ

প্রতি মাসে ৫০০ টাকা।

কৃত্রিম অঙ্গ সাহায্য‌ ও যন্ত্রাদি

এই প্রকল্পে সমাজ কল্য‌াণ ও নারী ও শিশু কল্য‌াণ দফতরের ২০১২-১৩ অর্থবর্ষের জন্য‌ মোট ৩০ লক্ষ টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছিল। ওই বছর ১২৩৬ জনকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তাকারী যন্ত্র দিয়ে সাহায্য‌ করা হয়। এর মধ্য‌ে রয়েছে হুইল চেয়ার, ট্রাই সাইকেল, শ্রবণ যন্ত্র, সেলাই মেশিন, গানবাজনার যন্ত্র, ডিভিডি প্লেয়ার, আইপড, মাল্টিমিডিয়া প্রিন্ট রিডার প্রভৃতি। এই সব যন্ত্র কলকাতাস্থ কমিশনারের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে প্রদান করা হয়েছে। এর উপভোক্তারা কলকাতা পুরসভা এলাকার বাসিন্দা। এ ছাড়া জেলায় শিবির করে এই ধরনের যন্ত্র বণ্টন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় চাহিদার ভিত্তিতে শিবির করা হয়েছে। মুখ্য‌মন্ত্রী এবং বিভাগীয় মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনেকগুলি শিবিরে এই ধরনের সহায়তা যন্ত্র বিতরণ করা হয়।

প্রতিবন্ধী উন্নয়নে কর্মরত সংগঠনগুলির নিবন্ধীকরণ

প্রতিবন্ধী (সমান সুযোগ এবং পূর্ণ প্রতিনিধত্ব) আইন ১৯৯৫-এর ৫২ ধারা এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রতিবন্ধী (সমান সুযোগ, অধিকারের নিরাপত্তা এবং পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব) বিধি ১৯৯৯-এর ৪৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী যে সব প্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে তাদের নাম কমিশনারের দফতরে নথিভুক্ত করার ব্য‌বস্থা রয়েছে। এ পর্যন্ত আইনানুসারে ৪৯১টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধীকৃত হয়েছে। ২০১২-১৩ সালের জন্য‌ ২৫টি নতুন সংস্থার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ৪১টি সংস্থার নিবন্ধন পুনর্নবীকরণ করা হয়। প্রতি বছর আন্তজার্তিক প্রতিবন্ধী দিবসে ‘স্ফুরণ’ নাম দিয়ে জেলা এবং বর্গ অনুসারে নিবন্ধীকৃত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের তালিকা মন্ত্রক কর্তৃক প্রকাশ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কাজ দেখভাল করার জন্য‌ জেলা, মহকুমা এবং ব্লক স্তরে কমিটি তৈরি করা হয়।

এই সংগঠনগুলিই প্রতিবন্ধী সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের ব্য‌াপারে সক্রিয় সহায়তা ও অংশগ্রহণ করে থাকে। সংস্থা বা সংগঠনগুলি ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা, বা সক্রিয় রয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব পুরোপুরি মন্ত্রকের। মন্ত্রক আইন অনুসারে এই দায়িত্ব দিয়েছে কমিশনকে। কমিশনের জেলা অফিসগুলি নজরদারি কমিটি গঠন ও তার কাজকর্ম সামাল দেওয়ার জন্য‌ দায়িত্বপ্রাপ্ত। ব্লক স্তর পর্যন্ত দেখভাল করার জন্য‌ কমিটি জেলা স্তরের কমিশন অফিসই স্থির করে। সংগঠনগুলিকে নিবন্ধীকৃত করানোর জন্য‌ প্রতি বছর কমিশনারের কাছে আবেদন করার ব্য‌বস্থা রয়েছে। প্রতি বছর নির্দিষ্ট প্রোফর্মা অনুযায়ী সেই আবেদন পেশ করতে হয়। প্রাথমিক ভাবে নতুন সংস্থাগুলির নাম বিবেচিত হলে সেগুলির কাজ পরিদর্শন করা হয়। তার পর সেই সংস্থাগুলিকে নিবন্ধীকৃত সংস্থা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গে সবক’টি নিবন্ধীকৃত সংস্থাই অত্য‌ন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এর ফলে প্রতিবন্ধী কল্যাণের কাজ ঠিকমতো নিষ্পন্ন করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা হয়েছে। নিবন্ধীকৃত সংস্থাগুলি যে শুধু প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছে তা নয়। তারা বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্য‌াণের কাজেও নিজেদের ব্য‌াপৃত রাখতে পারে।

কর্মসংস্থান

প্রতিবন্ধকতা আইন ১৯৯৫-এর ৩৩ ধারা অনুযায়ী, ১০০ পয়েন্ট রোস্টারে ৩ শতাংশ আসন সব সময় প্রতিবন্ধীদের জন্য‌ সংরক্ষণের ব্য‌বস্থা রয়েছে।

  • ১) দৃষ্টিশক্তিহীনতা ও কম দৃষ্টিশক্তির জন্য‌ ১ শতাংশ (১২তম শূন্য‌পদ)
  • ২) শ্রবণশক্তিহীনদের জন্য‌ ১শতাংশ শূন্য‌পদ (৪২তম শূন্য‌পদ)
  • ৩) চলাফেরার প্রতিবন্ধকতার জন্য‌ ১ শতাংশ শূন্য‌পদ (৭২তম শূন্য‌পদ)

রাজ্য‌ সরকারের চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য‌ পাঁচ বছর বয়স ছাড় দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। চাকরির পরীক্ষা এবং ভর্তির পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত নম্বরে ছাড় দেওয়ার কথা আইনে বলা আছে। ভর্তির বা চাকরির পরীক্ষার মোট ফি-এর চল্লিশ শতাংশ ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সরকারি বা সরকার পোষিত বিদ্য‌ালয়ে মোট ৬৪৫০জন সহকারী শিক্ষক চাকরি করছেন। ২০১২-১৩ সালে বিভিন্ন কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নথিভুক্ত প্রতিবন্ধীদের মধ্য‌ থেকে ৭০ জনের চাকরি হয়েছে। সরকারি দফতরগুলিতে আরও বেশি করে যাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য‌ চাকরির ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা যায় তার চেষ্টা চলছে।

কর্মসংস্থান ব্য‌াঙ্ক

তিনটি পক্ষের মধ্য‌ে সমন্বয় সাধনের জন্য‌ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এমপ্লয়মেন্ট ব্য‌াঙ্ক পোর্টাল খুলেছে। এই তিনটি পক্ষ হল—যে চাকরি চাইছে, মালিকপক্ষ এবং জীবিকা সংস্থান সংক্রান্ত এজেন্সিগুলি। এই পোর্টালের মাধ্য‌মে চাকুরিপ্রার্থীরা অন লাইনে নাম নথিভুক্ত করানোর সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি এজেন্সিগুলির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিরও নথিভুক্ত করার সুযোগ থাকছে। এই পোর্টালের মাধ্য‌মে আবেদনকারীর পক্ষে শিক্ষানুযায়ী গ্রহণযোগ্য‌ চাকরির সন্ধান দেওয়া থাকে। (www.employmentbankwb.gov.in)

চাকরি মেলা

শিক্ষিত প্রতিবন্ধী ব্য‌ক্তিদের জন্য‌ ২০১৩ সালে চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। এতে অংশ নিয়েছিলেন ৩৩০ জন কর্মপ্রার্থী, যাঁদের মধ্য‌ থেকে ১৩০ জনকে অফিসিয়াল কাজের জন্য‌ নির্বাচিত করা হয় এবং চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়। ১৩টি কর্পোরেট সংস্থা এই মেলায় যোগদান করেছে।

স্ব-নিযুক্তির প্রকল্প

প্রতিবন্ধীদের জন্য‌ আর্থিক পুনর্বাসন প্রকল্প রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে সমাজ কল্য‌াণ দফতর মোট ৪১ লক্ষ টাকা এই কাজে বরাদ্দ করেছে। মোট ৪১০ জন উপভোক্তা উপকৃত হয়েছেন। উপভোক্তাদের অ্য‌াকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্য‌মে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। জেলা থেকে সুপারিশ গ্রহণ করে তা বিচারবিবেচনা করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কমিশনারের দফতর আর্থিক পুনর্বাসন প্রকল্পে সরাসরি টাকা দেয়।

সামাজিক সুরক্ষা

প্রতিবন্ধীদের পেনশন

নারী উন্নয়ন ও সমাজ কল্য‌াণ দফতর ৪০,২৭৬ জনকে প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত পেনশন প্রদান করে। এই ব্য‌ক্তিরা নিজে থেকে আয় করতে অক্ষম এবং সবাই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী। এই ধরনের ব্য‌ক্তিদের জন্য‌ মাসে ৭৫০ টাকা করে পেনশন দেওয়া হয়।

ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় প্রতিবন্ধকতা পেনশন প্রকল্পে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর মারফত চূড়ান্ত প্রতিবন্ধী ৪৭,৫৪০ জনকে পেনশন প্রদান করা হয়। তাঁরা মাসে ৬০০ টাকা করে পান (৩০০ টাকা রাজ্য‌ের ও ৩০০ টাকা কেন্দ্রের প্রদেয়)। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য‌ সরকারের প্রতিবন্ধকতা পেনশন সংক্রান্ত প্রকল্পে মোট ৮৭৮১৬ জন ব্য‌ক্তি সহায়তা পেয়ে থাকেন।

দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্প

২০১২-১৩ সালের জন্য‌ ইন্দিরা আবাস যোজনায় ২৫৪৮ জনকে বাড়ি দেওয়া হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার যোজনায় ওই বছর মোট ১,০১,৯২২ জনকে কাজ দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ট্রাস্ট আইনের (১৯৯৯) আওতায় আইনি অভিভাবক নিয়োগ

জাতীয় ট্রাস্ট অ্য‌াক্টের আওতায় বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা, সেরিব্রাল পালসি, অটিজিম, মানসিক প্রতিবন্ধকতার জন্য‌ আইনি অভিভাবক নিয়োগের ব্য‌বস্থা রয়েছে। এই আইনের আওতায় স্থানীয় স্তরের কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি জেলাতেই এই কমিটিগুলি সক্রিয়। তারাই আইনি অভিভাবকত্ব সম্পর্কিত আবেদনগুলি গ্রহণ করে। ২০১২-১৩ সালে মোট ৪২৬ জন আইনি অভিভাবকের নিয়োগ অনুমোদিত হয়েছে। তৈরি হওয়া থেকে কমিটিগুলি মোট ৬৯৯৭ জনকে আইনি অভিভাবকত্ব প্রদান করেছে। জাতীয় ট্রাস্টের স্টেট নোডাল এজেন্সি সেন্টার কলকাতার কমিশনারের অফিসের সহযোগিতায় মালদা, কলকাতা এবং পুরুলিয়ায় স্থানীয় কমিটির সদস্য‌দের ও আইনি অভিভাবকদের দিশা নির্ণয় লক্ষ্য‌ে তিনটি কর্মশালার আয়োজন করেছে। পরিবার, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যৌথ ভাবে আরও কয়েকটি শিবির অনুষ্ঠিত হবে।

আইনি অভিভাবকরা প্রতিবন্ধীদের সব রকমের কাজে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবেন। প্রতিবন্ধী ব্য‌ক্তিদের হয়ে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্য‌াপারেও তাদের অগ্রাধিকার রয়েছে। তারা ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী কাজ করবেন বলে স্থিরীকৃত।

প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত অসন্তোষ দূরীকরণ

অনেক সময় প্রতিবন্ধীদের হেনস্থা করাটা সামাজিক প্রথায় পরিণত হয়। প্রতিবন্ধী ব্য‌ক্তিদের প্রতি ব্য‌বহারের ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন দেখা যায়। এ ব্য‌াপারে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি। এটা শুধু সরকারি উদ্য‌োগে সম্ভব নয়। এর জন্য‌ সাধারণ নাগরিককে এগিয়ে এসে ভূমিকা নিতে হবে।

বিধির ৬২ নম্বর ধারা অনুযায়ী কমিশনারকে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অসন্তোষ বিধানের ব্য‌বস্থা করতে হয়-

  • ক) প্রতিবন্ধকতা যুক্ত ব্য‌ক্তিকে বঞ্চিত করা সংক্রান্ত বিষয়
  • খ) প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে আইন, বিধি, উপবিধি, প্রকরণ, নির্দেশিকা, রাজ্য‌ সরকার বা স্থানীয় সরকার প্রদত্ত কার্যকর সরকারি আদেশনামা না মানার ক্ষেত্রে কমিশনারকে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রতিকার করতে হয়।

আদালতে যে সব মামলা উঠে থাকে

  • ক) স্কুলে ভর্তি ও স্কুলে চাকরির ক্ষেত্রে তিন শতাংশ সংরক্ষণের কোটা না মানা।
  • খ) অন্য‌ান্য‌ চাকরির ক্ষেত্রে তিন শতাংশ সংরক্ষণের কোটা না মানা।
  • গ) যে সব শিশুর বিশেষ প্রয়োজন বা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তাদের বাবা-মায়ের বদলি সংক্রান্ত বিষয়।
  • ঘ) যানবাহনে নিখরচায় যাওয়ার সুযোগ না পাওয়া।
  • ঙ) প্রতিবন্ধীদের অন্য‌ান্য‌ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা।
  • চ) প্রতিবন্ধী সরকারি চাকুরে এবং তাদের পরিবারকে বঞ্চিত করা।

২০১২-১৩ সালে এ ব্য‌াপারে প্রতিবন্ধীরা মোট ৫০৭টি মামলা আদালতে দাখিল করেছেন। কমিশনার নিজের থেকে মামলা নিয়েছেন চারটি।

মোট মামলার সংখ্য‌া ৫১১টি।

নিষ্পত্তি হয়েছে ৫০০টি মামলার।

বকেয়া রয়ে গিয়েছে ১১টি মামলা।

প্রতিবন্ধীদের নানা অসন্তোষ শোনার জন্য‌ প্রতি বছর জেলায় ভ্রাম্য‌মান আদালতের ব্য‌বস্থা করা হয়। ২০১২-১৩ সাল এ রকম দু’টি ভ্রাম্য‌মান আদালতের ব্য‌বস্থা করা হয়েছে। একটি হয়েছিল বীরভূম জেলার বোলপুরে অন্য‌টি জলপাইগুড়িতে।

এই আদালতগুলি বহু মামলা শুনেছে এবং তাৎক্ষণিক প্রতিবিধানের ব্য‌বস্থা করেছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে কমিশনের জেলা অফিসগুলিও প্রতিবন্ধীদের বঞ্চনা করা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলা অধিগ্রহণ করেছে এবং প্রতিবিধানের চেষ্টা করেছে।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কর্মসূচি/কর্মশালা

প্রতিবন্ধকতা সংক্রান্ত কমিশনারের দফতর বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে মিলিতভাবে বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, জলপাইগুড়ি, হাওড়া, মালদা, কোচবিহার, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া ও কলকাতায় জনসচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেছে।

জেলায় ১৬টি এ ধরনের শিবির মহকুমা স্তরে সংগঠিত করা সম্ভব হয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদা এবং কলকাতায় আইনি অভিভাবকদের বৈঠকও করা সম্ভব হয়েছে। জেলা স্তরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্য‌োগে বাসচালক, কর্মচারী ও কন্ডাক্টরদের সঙ্গে নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর রাখিবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ২০১২ সালে কলকাতার বাবুঘাটে এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান হয়। ২০১৩ সালে তারকেশ্বর ও হুগলি জেলার কয়েকটি জায়গায় এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হয়।

বাড়তে কদম

জাতীয় ট্রাস্টের আওতায় এসএনএসি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে ১৩টি জেলায় সচেতনতা বৃদ্ধি কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রতি বছর এ ধরনের অনুষ্ঠান পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী মানুষজনের বিনোদন

প্রতি বছর দুর্গাপুজোর সময় বয়স্ক মানুষদের এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে প্য‌ান্ডেলে ঠাকুর দেখানোর ব্য‌বস্থা করা হয়। এর জন্য‌ নারী কল্য‌াণ ও সমাজকল্য‌াণ মন্ত্রক ১ লক্ষ টাকা সাহায্য‌ বরাদ্দ করেছে।

প্রতিবন্ধীদের জন্য‌ চিত্র প্রদর্শনী

প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কিত কমিশনারের দফতর কর্তৃক প্রতি বছর তাঁদের আঁকা চিত্র প্রদর্শনীর ব্য‌বস্থা করা হয়।

বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি

বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্য‌ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্য‌বস্থা নেওয়া হয়েছে। যেমন মহাকরণ, নন্দন, পূর্ত ভবন, প্রতিবন্ধকতা কমিশনারের অফিস, প্রশাসনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিকাশ ভবন, কলকাতা বিশ্ববিদ্য‌ালয়, কলকাতা মেডিক্য‌াল কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্য‌ালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্য‌ালয়ের মূল অঙ্গন, ভিআরসি কলকাতা স্টেশন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শাসকের দফতর, কলকাতা পুরসভা এবং কলকাতার ঐতিহ্য‌গুলি। ২০১৩ সালের কলকাতা বইমেলায় প্রতিবন্ধীরা যাতে ঠিকমতো ঢুকতে পারেন তার জন্য‌ বিশেষ ব্য‌বস্থা নেওয়া হয়েছিল।

শিক্ষা দফতর সর্বশিক্ষা মিশনের উদ্য‌োগে রাজ্য‌ের ৫২ হাজার স্কুলে বাধামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ৮০৭১টি স্কুলকে বাধামুক্ত টয়লেট করে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র : অ্য‌ানুয়াল রিপোর্ট ২০১৩-১৪, সমাজ কল্য‌াণ, নারী ও শিশু কল্য‌াণ মন্ত্রক, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/11/2023



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate