একে নয়, ওকে চাই৷ টাকা যখন দিতে হবে, তখন একটু সুস্থ যে, তাকেই নেওয়া ভাল৷ এতটুকু পড়লে মনে হতে পারে কোনও হাটে গবাদি পশু কেনার আগে বিক্রেতার সঙ্গে দরদামে ব্যস্ত খরিদ্দার৷ আসলে তা নয়৷ শিশু বিক্রির আগে দুই মহিলার মধ্যে সোমবার এভাবেই দর কষাকষি হল দুর্গাপুরে৷ যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের তত্পরতায় ‘ক্রেতা'র আর মা ডাক শোনার সাধ পূরণ হল না৷ অন্য দিকে অভাবের তাড়নায় সন্তানকে ‘বিক্রি'ও করতে পারলেন মা৷ পুলিশি উদ্যোগে আপাতত ‘অপুষ্ট' সন্তানদের নিয়ে দুর্গাপুর মহিলা হাসপাতালে ভর্তি৷ তবে এই ঘটনায় কোনওপক্ষই থানায় অভিযোগ জানাননি৷
পুলিশ ও স্হানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানার ডিভিসি মোড়ের মহুয়া কলোনির বাসিন্দা কানাই গোস্বামী৷ স্ত্রী লক্ষ্মী গোস্বামী এবং দুই পুত্র ও দুই কন্যাকে নিয়ে জীবনযাপন করেন পেশায় ফেরিওয়ালা কানাই৷ অভাবের সংসারে দু-মুঠো খাওয়ার জোগানোই দায়৷ তার উপর শিশুদের শরীরে বাসা বেঁধেছে রোগ৷ এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যেই বচসা লাগত৷ স্হানীয় সূত্রে খবর, সোমবার লক্ষ্মী তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান৷ বড় ছেলে তখন বাড়িতেই ছিল৷ দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের এবিএল মোড়ে গণতন্ত্র পল্লি ও সুভাষ পল্লির মাঝে জঙ্গলে দেড় বছরের পুত্রসন্তানকে ফেলে দেন তিনি৷ জঙ্গলের দূরত্ব তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার দূরে৷ এই ঘটনা নজরে পড়ে গণতন্ত্র কলোনির সুভাষপল্লির বাসিন্দা মুনমুন বাউরির৷ মা হওয়ার ইচছায় নিঃসন্তান মুনমুন লক্ষ্মী ও তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে আসেন৷
মুনমুন লক্ষ্মীকে বলেন, "জঙ্গলে সন্তান ফেলে গেলে কুকুর শিয়ালে খাবে৷ আমার সন্তান নেই৷ আমাকে দিয়ে দাও৷" মুনমুনের দাবি, তখন পাল্টা লক্ষ্মী তাঁর কাছে পাঁচশো টাকা চান৷ তাই মুনমুন মত বদল করেন৷ রোগগ্রস্ত পুত্রসন্তানকে ছেড়ে তুলনায় ‘সুস্হ' কন্যাসন্তানকে নেওয়ার দাবি জানান৷ আর এ নিয়ে দু'জনের মধ্যে দর কষাকষি শুরু হয়৷ এনিয়ে কথা চলতে চলতেই স্হানীয় বাসিন্দারা সেখানে হাজির হন ঘটনাস্হলে৷ শুরু হয় হইচই৷ তাঁরাই খবর দেন পুলিশে৷ লক্ষ্মী গোস্বামী ও তাঁর তিন সন্তানকে পুলিশ নিয়ে যায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে৷ বিক্রি করতে ইচছুক রোগগ্রস্ত তৃতীয় সন্তান পুত্র অজয় গোস্বামীকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে৷ বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পরে হাসপাতালে আসেন লক্ষ্মীর স্বামী কানাই গোস্বামী৷ যদিও লক্ষ্মীদেবীর দাবি, "আমি সন্তান বিক্রি করতে চাইনি৷ এক ভদ্রমহিলা টাকা দিতে চেয়েছিল৷" মুনমুন দেবীও সন্তানকে ফেলে দেওয়ার বদলে উপযুক্ত মানুষ গড়ার আশা করেছিলেন বলে জানান৷ যদিও বিনিময়ে অর্থের কথা অস্বীকার করেছেন মুনমুনদেবী৷ তবে স্থানীয় বাসিন্দারা পাঁচশো টাকার বিনিময়ে সন্তান কেনাবেচার চেষ্টা হচিছল বলে জানান৷ অর্থের অভাবে সন্তান বিক্রির চেষ্টা করা মা ও তার সন্তানদের দেখতে এদিন বহু উত্সাহী মানুষ জড়ো হন হাসপাতালে৷ সেখান থেকেই সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন লক্ষ্মী৷ আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) অমিতাভ মাইতি বলেন, "কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি৷ তবে ওই মহিলা ও তাঁর তিন সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিত্সার ব্যবস্হা করা হয়েছে৷
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন, ৩ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020