অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

উন্নত প্রজাতির গো-পালন : প্রশ্নাবলি

উন্নত প্রজাতির গো-পালন : প্রশ্নাবলি

  1. উন্নত প্রজাতির গো-পালন করা দরকার কেন ?
  2. সংকর গরু কী ?
  3. উন্নত প্রজনন কীভাবে করা হয়ে থাকে ?
  4. কৃত্রিম প্রজনন করানো দরকার কেন ?
  5. প্রজননের জন্য গাভী তৈরি হয়েছে কিনা কীভাবে বোঝা যাবে ?
  6. গো-চারণের জমিতে কী কী গাছ লাগানো হয় ?
  7. গো-খাদ্যের উদ্দেশ্যে সবুজ ঘাসের চাষ কেন করা হয় ?
  8. গো-খাদ্য চাষের জন্য বীজ ও প্রশিক্ষণ কোথায় পাওয়া যায় ?
  9. কী ধরনের গো-খাদ্য কেমনভাবে লাগাতে হয় ?
  10. গো-খাদ্য হিসাবে সুবাবুলের চাষ জনপ্রিয় কেন ?
  11. সুবাবুল গাছ কোথায় কোথায় লাগানো যেতে পারে ?
  12. সুবাবুল গাছ লাগানোর নিয়ম কী ?
  13. সুবাবুল গাছের পাতা কখন কাটার উপযুক্ত হয় ?
  14. সুবাবুল কি সারা বছর গরু-ছাগলকে খাওয়ানো যাবে ?
  15. গো-খাদ্যের ফলন বেশি হলে তা কীভাবে ব্যবহার করতে হয় ?

উন্নত প্রজাতির গো-পালন করা দরকার কেন ?

গরু পালন করা হয় মূলত দুধের জন্য। গ্রামে গঞ্জে দেশি গরুই বেশি পোষা হয়ে থাকে। কিন্তু দেখা গেছে দেশি গরুর তুলনায় উন্নত প্রজাতির সংকর গরু থেকে / সাত আট গুণ বেশি দুধ পাওয়া যায়। তাই দেশি গরুর তুলনায় উন্নত প্রজাতির সংকর গরু পোষা অনেক লাভজনক ।

সংকর গরু কী ?

দেশি গাভীর সঙ্গে বিদেশি উন্নত জাতের ষাড়ের কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে যে বাছুর (এড়ে ও বকনা) জন্মায়, তাকেই সংকর গরু বলা হয়। বাজারে সংকর জাতের গাভী কিনতে অনেক টাকা লাগে, যা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। সেইকারণেই কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশি গাভী থেকে সংকর বকনা তৈরি করা লাভজনক।

উন্নত প্রজনন কীভাবে করা হয়ে থাকে ?

কৃত্রিম গো-প্রজনন কথাটির অর্থ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উন্নত মানের বাচ্চা তৈরি। এই পদ্ধতিতে নীরোগ ও সবল ষাড়ের গো-বীজ সংগ্রহ হয়। তারপর এই গো-বীজ বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে গাভীর জরায়ুর মধ্যে প্রয়োগ করা হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে উন্নত মানের বাছুরের জন্ম হয়। একমাত্র কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমেই উন্নত জাতের গোসম্পদ অতি দ্রুত হারে বাড়ানো সম্ভব।

কৃত্রিম প্রজনন করানো দরকার কেন ?

বেশি দুধ দেওয়া গাভী (সংকর গাভী) পেতে হলে এছাড়া অন্য উপায় নেই। এই পদ্ধতিতে অতি উন্নত মানের গো-বীজ ব্যবহার করে অধিক সংখ্যায় উৎপাদনক্ষম দুগ্ধবতী গাভী ও বলবান বলদের বংশ উৎপন্ন করা যায়। তাছাড়া নীচের সুবিধাগুলিও আছেঃ

  • একটি ষাড়ের বীজ নিয়ে অনেকগুলি গাভীকে প্রজনন করা যায়। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে ৭০১০০ বছর গো-বীজকে অক্ষত অবস্থায় রাখা যায়। এভাবে শীতল অবস্থায় রাখা গো-বীজকে হিমায়িত গো-বীজ বলে। এতে কোনো অপচয় হয় না।
  • একটি ষাড়ের দ্বারা বছরে প্রায় ১০,০০০ গরুকে কৃত্রিম উপায়ে প্রজনন করা যায়। এইভাবে একটি ষাঁড়ের বিশেষ গুণাবলি এদের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে যৌন ঘটিত রোগগুলি পুরুষ থেকে স্ত্রী এবং স্ত্রী থেকে পুরুষে বিস্তারের আশঙ্কা খুবই কম থাকে।খামারে আলাদা ভাবে ষাড় পোষার দরকার পড়ে না। পুরুষের বংশ বিস্তার ক্ষমতা কম বয়স থেকে বেশি বয়স পর্যন্ত কাজে লাগানো চলে।
  • স্বাভাবিক প্রজননে গাভীর গর্ভ সঞ্চারনা করানো গেলে কৃত্রিম প্রজননের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

প্রজননের জন্য গাভী তৈরি হয়েছে কিনা কীভাবে বোঝা যাবে ?

  • গাভীটি কখন ডাকল বা গরম হল সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
  • অনেক গাভী গরম হলে ডাকে না। দেখা যায় গাভী গরম হলে প্রসবদ্বার ফোলে ও স্বচ্ছ কাঁচের মতো তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে। গাভী চঞ্চল হয়ে অন্য গরুর উপর উঠতে চায়। হঠাৎ দুধ কমে যায়। ঘনঘন একটু প্রস্রাব করে। এই সব লক্ষণে বুঝতে হবে গাভী গরম হয়েছে।
  • গাভী সকালে গরম হলে বিকালে এবং বিকালে গরম হলে তার পরদিন সকালে কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য নিকটস্থ গো-প্রজনন কেন্দ্রের সাথে অথবা প্রাণীবন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
  • প্রজননের জন্য উন্নত জাতের, যেমন হলস্টিন বা জার্সি জাতের ষাড়ের বীজ ব্যবস্থা করা দরকার।
  • প্রথম কৃত্রিম প্রজননের ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় বার কৃত্রিম প্রজনন করালে গাভিন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • গাভীটি ১৮-২৪ দিনের মাথায় আবার গরম হল কি না লক্ষ রাখতে হবে। যদি গরম হয়, আবার প্রজনন করা দরকার।
  • এভাবে ২/৩ বার পুনরায় গরম হলে বুঝতে হবে গাভীটি কোনও জনন অঙ্গ ঘটিত রোগে ভুগছে অথবা বীজের যথাযথ গুণ নষ্ট হয়েছে। তাহলে গরুটিকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে বা গো-বীজ পরীক্ষা করতে হবে।
  • প্রজনন করার পর আর না ডাকলে বা আর গরম না হলে বুঝতে হবে গাভীটি গাভিন হয়েছে। আড়াই মাস থেকে তিনমাসের মধ্যে প্রাণী চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা করে নিয়ে প্রসবের আনুমানিক তারিখ আগে থেকে জেনে নিতে হবে।

গো-চারণের জমিতে কী কী গাছ লাগানো হয় ?

গো-চারণের জমিতে কুল গাছ, বাবলা গাছ লাগানো যেতে পারে। এর সঙ্গে যা সারা বছর থাকবে এমন ঘাস লাগানো ভালো (যেমন - দূর্বা, শ্যামা ইত্যাদি)। তবে ঐ অঞ্চলে যে ধরনের গাছ ভালো হয় সেগুলিও লাগাতে হবে। গো-চারণের ফলে জমি উর্বরতা ভালোই থাকে, তাই মাটির চরিত্র অনুযায়ী সহযোগী ফসল লাগালে লাভ হবে। ফসল ও তাদের ফলনের দিকে নিয়মিত নজর রাখতে হবে।

গো-খাদ্যের উদ্দেশ্যে সবুজ ঘাসের চাষ কেন করা হয় ?

গো-খাদ্যের খরচ কমনোর জন্য আর পরিপূরক খাদ্যের অভাব মেটানোর জন্যই সবুজ ঘাসের চাষ করা হয়। এই সব ঘাস খাইয়ে প্রাণীদের পেট ভরানো যায়, দুধ ও মাংস বাড়ানো যায়, তাদের শরীর ঠিক রাখা যায়। ৩ কেজি দানা কম খাইয়ে ৫ কেজি ঘাস বেশি খাওয়ালে ক্ষতি নেই, এতে খরচ কমবে। ঘাসের মধ্যে জল ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি, তাই যেখানে কোনো অর্থকরী ফসল হয় না, যেমন- অনাবাদি জমিতে, জমির আলে, পুকুরের পাড়ে এই সব ঘাস লাগানো যেতে পারে। এতে মাটির উর্বরতাও বাড়বে আবার গো-খাদ্যের যোগানও ঠিক থাকবে। সবুজ ঘাসের মধ্যে দূর্বা, মুথা, প্যারা, নেপিয়ার ইত্যাদি চাষ করা হয়ে থাকে।

গো-খাদ্য চাষের জন্য বীজ ও প্রশিক্ষণ কোথায় পাওয়া যায় ?

গো-খাদ্য চাষের জন্য বীজ ও প্রশিক্ষণ পাওয়ার জন্য এই ঠিকানায় যোগযোগ করতেহবে ? অধিকর্তা, আঞ্চলিক গোখাদ্য উৎপাদন ও প্রদর্শন কেন্দ্র (ভারত সরকার), কল্যাণী নদীয়া, পিন-৭৪১২৩৫।

কী ধরনের গো-খাদ্য কেমনভাবে লাগাতে হয় ?

প্রথমেই মনে রাখতে হবে এমনভাবে গো-খাদ্য চাষ করতে হবে, যেন সারা বছর গবাদি পশুর খাবারের অভাব না হয়। সাধারণত বর্ষাতে প্যারা, নেপিয়ার, দূর্বা, মিষ্টি আলু, শীতে যই, জোয়ার, মুগ, বরবটি; গরমে জোয়ার দূর্বা, ভুট্টা, নেপিয়ার লাগানো হয়ে থাকে। নীচে কোন ধরনের গোখাদ্য কেমনভাবে চাষ করতে হয় তা বলা হল।

ভুট্টা লাগানোর সময় হল ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ আর ভাদ্র-আশ্বিন মাস। ভুট্টার বীজ বোনা হয় হাতে ছিটিয়ে বা লাইন করে। ভুট্টা চাষে তুলনামূলকভাবে কম জলের দরকার হয়। তবে শীত ও গরমকালে জল দিতে হবে। ভুট্টা লাগানোর ২ মাস পর জমি থেকে ৫-৬ ইঞ্চি ওপরে কাটতে হবে, আবার ২ মাস পর ভুট্টা গাছ কাটার জন্য তৈরি হয়ে যাবে। ভুট্টার সঙ্গে সহযোগী ফসল হিসাবে বরবটি, গাইমুগ বোনা যেতে পারে।

গো-খাদ্য হিসাবে সুবাবুলের চাষ জনপ্রিয় কেন ?

সুবাবুল গাছের পাতা খাওয়ালে প্রাণীর/পাখির দুধ, মাংস ও ডিমের পরিমাণ বাড়ানো যায়। এই গাছের কাঠ জ্বালানি হিসাবেও কাজে লাগে। এই গছের পাতা শুকিয়ে জমিয়ে রাখতে পারা যায়, যা পরে পশুর খাবার হিসাবে কাজে লাগে। আবর্জনাযুক্ত যে পাতাগুলি খাওয়ানো যায় না, সেগুলি দিয়ে কেঁচো সার তৈরি করা যাবে।

সুবাবুল গাছ কোথায় কোথায় লাগানো যেতে পারে ?

পুকুর পাড়ে, মাঠের আলে, বাড়ির চারপাশে বা যেখানে কোনো কিছু হয় না, এমন জায়গায় সুবাবুল গাছ লাগানো যেতে পারে। বর্ষাকালে সুবাবুল চারা তৈরি করে লাগানো হয়।

সুবাবুল গাছ লাগানোর নিয়ম কী ?

সামান্য গরম জলে অর্থাৎ আঙ্গুল ডোবালে সহ্য করা যায় এমন জলে সুবাবুলের বীজ ৩ মিনিটের মত রেখে তার পর ঠান্ডাজলে রেখে পরদিন লাগাতে হবে।এবারে চারাতলায় বীজগুলিকে পুততে হবে। চারার উচ্চতা ১ ফুট না হওয়া পর্যন্ত সেগুলি অন্য কোথাও লাগানো উচিত নয়। চারা তৈরি হয়ে গেলে চারাগুলি ৮-১০ ফুট অন্তর গর্ত করে ঠিক জায়গায় লাগাতে হবে। সুবাবুলের চারা ঘন করে লাগিয়ে বেড়ার কাজও করা যায়।

সুবাবুল গাছের পাতা কখন কাটার উপযুক্ত হয় ?

চারা তৈরি করে গাছ লাগানোর ৩/৪ মাস পর থেকেই পাতা কেটে গবাদি পশু-পাখিকে খাওয়ানো যাবে।

সুবাবুল কি সারা বছর গরু-ছাগলকে খাওয়ানো যাবে ?

ডঃ না, একটানা ৩ মাসের সুবাবুল গাছের পাত গবাদি পশু-পাখিকে খাওয়ানো উচিত নয়। তবে ২-৩ মাস ছেড়ে ছেড়ে এগুলি আবার খাওয়ানো যাবে। আরেকটি বিষয় মনে রাখা দরকার যে গরু, ছাগলকে মোট খাবারের ১/৩ ভাগের বেশি সুবাবুল গাছের পাতা খাওয়াতে নেই।

গো-খাদ্যের ফলন বেশি হলে তা কীভাবে ব্যবহার করতে হয় ?

গো-খাদ্যের (ঘাস বা পাতা) ফলন বেশি হলে তা জমিয়ে রাখতে হবে। যখন ঘাস পাওয়া যাবে না, তখন ঐ জমা গো-খাদ্য খাওয়নো যাবে। গ্রামে যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানে ছায়াতে বা রোদে শুকনো করে অথবা কাচা অবস্থাতেই জমিয়ে রাখতে হবে। আর বিদ্যুৎ থাকলে ঠাণ্ডা ঘরে রাখতে পারলে গো-খাদ্য সতেজ রাখা যায়।

সু্ত্র: পঞ্চায়েত এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্টবেঙ্গল

সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/25/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate