অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

হলুদ

হলুদ

  1. পুষ্টিমূল্য
  2. ভেষজগুণ
  3. ব্যবহার
  4. উপযুক্ত জমি ও মাটি
  5. চারা তৈরি
    1. বীজ লাগানো
  6. সার ব্যবস্থাপনা
  7. সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
  8. পোকা
    1. ডগা ছিদ্রকারী পোকা
      1. ক্ষতির নমুনা
      2. জীবন চক্র
      3. ব্যবস্থাপনা
    2. রাইজোম স্কেল পোকা
      1. ক্ষতির নমুনা
      2. ব্যবস্থাপনা
    3. বিছা পোকা
      1. ক্ষতির নমুনা
      2. জীবন চক্র
      3. ব্যবস্থাপনা
    4. থ্রিপস
      1. ক্ষতির নমুনা
      2. জীবন চক্র
      3. ব্যবস্থাপনা
    5. লিফ ব্লচ
      1. ক্ষতির নমুনা
      2. ব্যবস্থাপনা
    6. বিশেষ পরিচর্যা
    7. ফসল সংগ্রহ
    8. ফসল সংগ্রহের পর করণীয়
      1. ঘাম ঝরানো
      2. ফুটন্ত জলতে সিদ্ধ করা
        1. সিদ্ধ করার পদ্ধতি
        2. সিদ্ধ করার পর করনীয়
        3. ঠিকমত সিদ্ধ হলো কিনা
        4. হলুদের রং
        5. শুকানোর সময়
        6. কতক্ষন সিদ্ধ করতে হবে
        7. কতদিনের মধ্যে সিদ্ধ করতে হবে
        8. শুকানো
      3. মসৃণ করা
      4. রং করা
      5. বাছাইকরণ
    9. বীজ সংরক্ষণ

মসলা ফসলের মধ্যে হলুদ একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় হলুদের ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশী। মসলা হিসাবে ব্যবহার ছাড়াও অনেক ধরণের প্রসাধনী কাজে ও রং শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর গড়ে ৪৫ হাজার ৫ শত ৫০ একর জমিতে ৭ লাখ ৭ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন হলুদ উৎপন্ন হয়। যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। ফলন কম হওয়ার মূল কারণ উচ্চ ফলনশীল জাত এবং উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতির অভাব। উচ্চ ফলনশীল জাত এবং উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে  হলুদের ফলন দ্বিগুণেরও বেশি করা সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গে টাঙ্গাইল, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, ময়মনসিংহ, নীলফামারী ও পার্বত্য জেলা সমূহে হলুদের ব্যাপক চাষাবাদ হয়।

পুষ্টিমূল্য

এতে আমিষ, চর্বি এবং প্রচুর ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ক্যারোটিন থাকে।

ভেষজগুণ

  • পাকস্থলীর গ্যাস নিবারণ করে;
  • মুত্রনালীর রোগ নিবারণ করে থাকে;
  • ক্ষত শুকাতে
  • ব্যাথা নিবারণে ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহার

মসলা হিসেবে বিভিন্ন প্রকার রান্নার কাজে হলুদ ব্যবহার করা হয়। রুপ চর্চায়ও এর ব্যবহার রয়েছে।

উপযুক্ত জমি ও মাটি

সব ধরণের মাটিতে চাষ করা গেলেও উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি হলুদের জন্য ভালো। যে কোন ফলের বাগানের শুরুতে সাথী ফসল হিসাবে হলুদ চাষ লাভজনক। আবার সম্পূর্ণ ছায়াযুক্ত ফলের বাগানে চাষ করলে ফলন খুবই অল্প হবে, তবে অর্ধেক ছায়া অর্ধেক আলো এমন বড় ফলের বাগানে চাষ করালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

চারা তৈরি

বীজ লাগানো

চৈত্র মাস কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়। সাধারণতঃ ১৫-২০ গ্রাম ওজনের ১-২টি ঝুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগাতে হয়। ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে সারি করে ২৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে ৫-৭ সেন্টিমিটার গভীরে কন্দ লাগাতে হয়। প্রতি হেক্টরে ২৫০০ কেজি কন্দ প্রয়োজন হয়। কন্দ লাগানোর পর ভেলী করে দিতে হয়।

সার ব্যবস্থাপনা

জমির উর্বরতার উপর সারের পরিমাণ নির্ভর করে। সাধারণতঃ প্রতি হেক্টরে সারের পরিমাণ হলোঃ গোবর ৪-৬ টন, ইউরিয়া ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি ১৭০-১৯০ কেজি, এমওপি ১৬০-১৮০ কেজি, জিপসাম ১০৫-১২০ কেজি ও জিংক সালফেট ২-৩ কেজি। জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট ও ৮০ কেজি এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। কন্দ লাগানোর ৫০-৬০ দিন পর ১০০-১২০ কেজি ইউরিয়া ভেলী হালকাভাবে কুপিয়ে প্রয়োগ করে আবার ভেলী করে দিতে হয়। ১ম কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং আরও ৫০-৬০ দিন পর তৃতীয় কিস্তির সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির উপরি সার হিসেবে প্রতি হেক্টরে প্রতিবারে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া ও ৪০-৪৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তির সার সারির মাঝে প্রয়োগ করে কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সামান্য মাটি ভেলীতে দিতে হবে।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা

মাটিতে রস না থাকলে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে। বৃষ্টির জল যাতে গাছের গোড়ায় না জমে সেজন্য নালা করে জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে। তবে সার উপরি প্রয়োগের সময় আগাছা পরিষ্কার করে প্রয়োগ করা ভাল।

পোকা

ডগা ছিদ্রকারী পোকা

কান্ড আক্রমণ করে বলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। ফলে উৎপাদন কম হয়। এ পোকার মথ (মা) কমলা হলুদ রংয়ের এবং পাখার উপর কালো বর্ণের ফোটা থাকে। কীড়া হালকা বাদামী বর্ণের। গায়ে সুক্ষ্ণ শুং থাকে।

ক্ষতির নমুনা

পোকা কান্ড ছিদ্র করে ভিতরের দিকে খায় বলে পাতা হলুদ হয়ে যায়।  অনেক সময় ডেড হার্ট লক্ষণ দেখা যায়। আক্রান্ত কান্ডে ছিদ্র ও কীড়ার মল দেখা যায়। আর্দ্র আবহাওয়ায় এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।

জীবন চক্র

স্ত্রী মথ পাতা বা গাছের নরম অংশে ডিম পাড়ে। ৭ দিনে ডিম থেকে কীড়া বের হয় এবং ২-৩ সপ্তাহ কীড়া অবস্থায় থাকে। পুত্তলি ধাপ সম্পন্ন করতে ১ সপ্তাহ লাগে।  এরা বছরে ৩ বার বংশ বিস্তার করে।

ব্যবস্থাপনা

আক্রান্ত ডগা তুলে ফেলা ও সম্ভব হলে পোকার কীড়া ধরে মেরা ফেলা, প্রতি লিটার জলতে ৪ মি.গ্রা. হারে বিটি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অধিক আক্রমণে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন-সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ২০ মিলি প্রতি ১০ লিটার জলতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করে এ পোকা দমনে রাখা যায়।

রাইজোম স্কেল পোকা

এ পোকা রাইজোম (হলুদ) আক্রমণ করে বলে ক্ষেতের আইল থেকে সহজে বুঝা যায় না। ফলে প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়। পূর্ণাঙ্গ স্কেল পোকা উজ্জল হলুদ বর্ণের এবং শরীর গোলাকার। এদের শরীর মোমের মত স্কেল দ্ধারা আবৃত থাকে।

ক্ষতির নমুনা

ফসলের শেষ পর্যায়ে রাইজোম এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়। পূর্নাঙ্গ ও নিম্ফ পোকা রাইজোমের রস চুষে খায় বলে রাইজোম আকারে ছোট হয়। রাইজোম কুঁচকে যায় ও অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কমে যায়। আক্রান্ত রাইজোম গুদামে রাখলে সেখানে পচন ধরতে পারে। আর্দ্র আবহাওয়ায় এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।

জীবন চক্র স্ত্রী পোকা রাইজোমের উপর হলুদ রংয়ের ডিম পাড়ে। ৭-৮ দিনে ডিম থেকে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয়। ২৪ দিন পর নিম্ফ পূর্ণাঙ্গে পরিণত হয়।  এদের জীবনচক্র সম্পন্ন করতে ৩১-৩৫ দিন সময় লাগে।  বছরে এরা ১০ বার বংশ বিস্তার করে।

ব্যবস্থাপনা

জুলাই- আগস্ট মাসে আক্রান্ত রাইজোম তুলে ধ্বংশ করতে হবে। স্কেল আক্রান্ত রাইজোম বাদ দিয়ে গুদামজাত করতে হবে। মাঠে আক্রমণ দেখা দিলে ও গুদামে রাখার পূর্বে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

বিছা পোকা

এ পোকার কীড়া ছোট অবস্থায় একত্রে থাকে ও বড় হলে পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়ে বিধায় প্রাথমিক অবস্থায় এদের দমন করা উচিৎ। এটি মথ জাতীয় পোকা এবং কীড়ার শরীর লোমে ঢাকা থাকে। কীড়াগুলো ক্ষতিকারক।

ক্ষতির নমুনা

এ পোকার আক্রমণ মাঝে মাঝে দেখা যায়। কীড়া পাতা ও গাছের নরম অংশ খায়। আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে পুরো গাছ পাতা বিহীন হয়।

জীবন চক্র

স্ত্রী মথ ৪১২-১২৪১ টি ডিম পাড়ে। ৮-১৬ দিনে ডিম হতে কীড়া বের হয়। কীড়া ছোট অবস্থায় দলবদ্ধ থাকে কিন্তু বড় হলে পুরো মাঠে ছড়িয়ে পড়ে। কীড়া অবস্থায় ৪ সপ্তাহ থাকার পর পুত্তলিতে পরিণত হয়। ১-২ সপ্তাহ পুত্তলি অবস্থা কাটানোর পর পূর্ণাঙ্গ মথ বেরিয়ে আসে। মথ ১ সপ্তাহ বাঁচে।

ব্যবস্থাপনা

আলোর ফাঁদ দিয়ে মথ আকৃষ্ট করে মারা। কীড়া দলবদ্ধ থাকা কালীন সংগ্রহ করে হাত দিয়ে পিষে মারা।  ক্ষেতের মাঝে কঞ্চি পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে মথ, কীড়া ইত্যাদি ধরে খায়। শিকারী গান্ধী ও পরজীবী পোকা সংরক্ষণ। আক্রান্ত  ক্ষেতের  চারিদিকে নালা করে কেরোসিন মিশ্রিত জল রাখলে কীড়াগুলো  ঐ জলতে পড়ে মারা যায়। সময়মত আগাছা ও মরা পাতা পরিষ্কার করা। অনুমোদিত কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার করা।

থ্রিপস

এ পোকা ছোট কিন্তু পাতার রস চুষে খায় বিধায় গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে। সে কারনে ক্ষেতের মধ্যে পাতা বিবর্ণ দেখালে কাছে গিয়ে মনোযোগ সহকারে দেখা উচিৎ, তা না হলে ফলন অনেক কমে যাবে।  পোকা আকৃতিতে খুব ছোট। স্ত্রী পোকা সরু, হলুদাভ। পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ গাঢ় বাদামী। বাচ্চা সাদা বা হলুদ। এদের পিঠের উপর লম্বা দাগ থাকে।

ক্ষতির নমুনা

এরা রস চুষে খায় বলে আক্রান্ত পাতা রূপালী রং ধারণ করে। আক্রান্ত পাতায় বাদামী দাগ বা ফোঁটা দেখা যায়। অধিক আক্রমণে পাতা শুকিয়ে যায় ও ঢলে পড়ে। রাইজোম আকারে ছোট ও বিকৃত হয়।

জীবন চক্র

স্ত্রী পোকা পাতার কোষের মধ্যে ৪৫-৫০ টি ডিম পাড়ে। ৫-১০ দিনে ডিম হতে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয়। নিম্ফ ১৫-৩০ দিনে দুটি ধাপ অতিক্রম করে। প্রথম ধাপে খাদ্য গ্রহণ করে  এবং দ্বিতীয় ধাপে খাদ্য গ্রহণ না করে মাটিতে থাকে। এরা বছরে ৮ বার বংশ বিস্তার করে। এবং স্ত্রী পোকা পুরুষ পোকার সাথে মিলন ছাড়াই বাচ্চা দিতে সক্ষম।

ব্যবস্থাপনা

সাদা রংয়ের আঠালো ফাঁদ ব্যবহার। ক্ষেতে মাকড়সার সংখ্যা বৃদ্ধি করে এ পোকা দমন করা যায়। অনুমোদিত কীটনাশক যেমন-সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ২০ মিলি প্রতি ১০ লিটার জলতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করে এ পোকা দমনে রাখা যায়।

লিফ ব্লচ

ট্যাফরিনা নামক ছত্রাকের আক্রমণে এর রোগ হয়। সাধারনত গাছ একটু বড় হলে এ রোগ দেখা যায়। এ রোগের আক্রমন বেশী হলে পাতা শুকিয়ে যায় বলে খাদ্য তৈরীর অভাবে হলুদ উৎপাদনের পরিমান কমে যায়।

ক্ষতির নমুনা

পাতার উভয় পৃষ্ঠায় প্রথমে ছোট, ডিম্বাকৃতির, চৌকোনাকৃতির বা অনিয়মিত বাদামী  রংয়ের দাগ পড়ে।  দাগগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ও একত্রিত হয়ে সমস্ত পাতা হলুদ করে ফেলে। সমস্ত গাছ ঝলসানোর মত মনে হয় এবং ফলন কম হয়। আক্রান্ত রাইজোম (হলুদ) ও বায়ুর সাহায্যে এ রোগ ছড়ায়।

ব্যবস্থাপনা

আক্রমণ বেশি হলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক যেমন-ডায়থেন এম ৪৫ নামের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ (২০ গ্রাম ১০ লিটার জলতে মিশিয়ে) করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

বিশেষ পরিচর্যা

হলুদের ফলন বৃদ্ধি এবং জমি থেকে জল বের হওয়ার সুবিধার জন্য ২ থেকে ৩ বার দুই সারির মাঝখান থেকে মাটি তুলে গাছের গোড়ায় দিতে হবে। হলুদ রোপণ করার পর নালার  উপরে  মাটির রস ধরে রাখার জন্য শুকনো পাতা অথবা খড় দিতে হয়।

ফসল সংগ্রহ

সাধারণতঃ লাগানোর ৯-১০ মাস পর পাতা শুকিয়ে গেলে হলুদ সংগ্রহ করা হয়। প্রতি হেক্টরে ২৫-৩০ টন কাঁচা হলুদ পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে একই জমিতে প্রতি বছর হলুদ বা আদা ফসল চাষ করা উচিত নয়।

ফসল সংগ্রহের পর করণীয়

ঘাম ঝরানো

পাতা, কান্ড, শিকড়, পার্শ্ব শিকড় কেটে পরিষ্কার করে জল দিয়ে হলুদ একাধিকবার ধুয়ে আলাদা করতে হবে। এরপর পরিষ্কার ছায়াযুক্ত স্থানে গাদা করে পাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এভাবে দু’তিন দিন হলুদ থেকে উৎপন্ন ঘাম সম্পূর্ণরূপে ঝরানো হয়। ঘাম ঝরানো শেষ হলে হলুদ সিদ্ধ করার উপযুক্ত হয়।

ফুটন্ত জলতে সিদ্ধ করা

সিদ্ধ করার পদ্ধতি

লৌহ অথবা মাটির পাত্রে ফুটন্ত জলতে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা  হলুদগুলো সিদ্ধ করতে হবে (যতক্ষণ না সাদা ফেনা এবং হলুদের গন্ধযুক্ত সাদা ধোঁয়া বের হয়)। অতিরিক্ত সিদ্ধ করলে রং নষ্ট হয় এবং কম সিদ্ধ করলে হলুদ ভঙ্গুর হয়।

সিদ্ধ করার পর করনীয়

সিদ্ধ হলুদগুলোকে একটি পাত্রে রেখে, ২ থেকে ৩ ইঞ্চি উপর পর্যন্ত জল দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। এই জলতে চুন বা সোডিয়াম কার্বোনেট বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট মিশিয়ে অ্যালকালাইন দ্রবণ (০.০৫-১%) তৈরি করতে হবে। এখন হলুদগুলোকে পাত্র থেকে তুলে নিয়ে ২০ গ্রাম সোডিয়াম বাইসালফেট ও ২০ গ্রাম হাইড্রোক্লোরিক এসিডের জলীয় দ্রবণে ১৫ মিনিট যাবৎ ভিজিয়ে রাখার পর দ্রবণ থেকে ছেঁকে নিয়ে রোদে শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

ঠিকমত সিদ্ধ হলো কিনা

হলুদ ঠিকমত সিদ্ধ হবে তখন, যখন আঙ্গুল দিয়ে টিপলে নরম মনে হয় এবং ভোতা কাঠের টুকরো দিয়ে ছিদ্র করা যায়।

হলুদের রং

সিদ্ধ করার ফলে রাইজোমটি (হলুদের খাবারযোগ্য অংশকে রাইজোম বলে) নরম ও আঠালো হয় এবং মেটে গন্ধ দূর হয়। এ  সময় রাইজোমের মধ্যে রঙিন উপাদানগুলি সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং হলুদের কমলা-হলুদ রং সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়।

শুকানোর সময়

হলুদের রং, স্বাদ ও গন্ধ ঠিক রাখার জন্য, শুকানোর সময় কমাতে হবে।

কতক্ষন সিদ্ধ করতে হবে

হলুদ কতক্ষন সিদ্ধ করতে হবে তা রাইজোমের আকারের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন-ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির রাইজোম সিদ্ধ হওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় নেয়। হলুদ সিদ্ধ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পার্শ্ববর্তী কন্দ এবং গুড়িকন্দ আলাদা করে সিদ্ধ করা হয়। গুড়িকন্দকে কেটে অর্ধেক করে সিদ্ধ করলে সময় কম লাগে। রাইজোমের সংখ্যার উপর সিদ্ধ করার সময় ১ থেকে ৪ অথবা ৬ ঘন্টা লাগতে পারে। সাধারণতঃ ৫০ থেকে ৭৫ কেজি রাইজোম একবারে সিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন করা উচিত। একই জলতে কয়েকবার হলুদ সিদ্ধ করা যায়।

কতদিনের মধ্যে সিদ্ধ করতে হবে

মাঠ থেকে হলুদ সংগ্রহের ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সিদ্ধ করা উচিত যাতে রাইজোম নষ্ট না হয়। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশী হলে হলুদের গুণাগুণ কমে যেতে পারে।

শুকানো

হলুদ রাইজোমগুলিকে সিদ্ধ করার পরপরই রোদে শুকানো উচিত। সিদ্ধকৃত রাইজোমকে ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি পুরু করে মোটা বাঁশের চাটাই অথবা মেঝের উপর ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত শুকানো হয়। সন্ধ্যার পূর্বেই হলুদকে ঢেকে রাখা দরকার। চূড়ান্ত পর্যায়ে হলুদের আর্দ্রতা ৫ থেকে ১০ ভাগে এ নিয়ে আসতে হবে। হাত দিয়ে ভাঙ্গলে যদি কট্ শব্দ হয় তাহলে বোঝা যাবে হলুদ পুরোপুরি শুকিয়েছে।

মসৃণ করা

শুকনো হলুদ বিভিন্ন ধরনের আঘাতজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও খারাপ দেখায়। প্রচলিত পদ্ধতিতে শুকনো হলুদ চটের ব্যাগে ভরে তারপর পা দিয়ে নাড়াচাড়া করে মসৃন করা হয়, যা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। উন্নত পদ্ধতিতে ব্যারেল অথবা সীড ড্রেসার ড্রামের মধ্যে ভরে হাত বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সাহায্যে দ্রুত বেগে ঘুরাতে হবে। এরপর এই শুকনো হলুদ আরও পরিষ্কার ও মসৃণ করার জন্য পরিষ্কার পাথরের টুকরার সাথে মিশিয়ে, ড্রামে ঘুরানো হয় অথবা ঝুড়িতে রেখে বারবার নাড়ান হয়। চূড়ান্তভাবে মসৃণ করার জন্য পুণরায় বিদ্যুৎ চালিত ড্রামে হলুদ রেখে ঘুরানো হয়।

রং করা

একশ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে ভালো দাম পাবার জন্য হলুদে অতিরিক্ত রং হিসেবে ‘লেড ক্রোমেট’ বা ‘মিডিল ক্রোস’ নামক কৃত্রিম রং মিশিয়ে থাকে যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক। এর পরিবর্তে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি হিসেবে ফিটকিরি ৪০ গ্রাম, হলুদগুড়া ২ কেজি, রেড়ির তেল ১৪০ গ্রাম, সোডিয়াম বাইসালফেট ৩০ গ্রাম, হাইড্রোক্লোরিক এসিড ৩০ মিলি একত্রে মিশিয়ে তাতে ১০০ কেজি মসৃণকৃত হলুদে মাখিয়ে নেয়া যেতে পারে। শুধু হলুদের গুড়া দিয়েও হলুদকে আকর্ষণীয় রং করা যায়।

বাছাইকরণ

মাঠ থেকে সংগ্রহের পর পচা ও আধা পচা হলুদ আলাদা করতে হবে। বাকী ভাল হলুদ বীজ এবং খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।

বীজ সংরক্ষণ

সংগৃহীত হলুদ পরিষ্কার করে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা ভাল।

  • ক) গর্ত খনন করে সংরক্ষণঃ উঁচু জমিতে ৪৫০ সেমি (১৫ইঞ্চি) লম্বা, ৩০০ সেমি (১০ইঞ্চি) চওড়া এবং ১৮০ সেমি (৬ইঞ্চি) গভীর গর্ত করে শুকিয়ে, গর্তের চারিপাশে খড় বিছিয়ে, থলিতে ভরে একে একে সাজিয়ে মাটির আবরণ দিয়ে ঢেকে হলুদ সংরক্ষণ করা যায়।
  • খ) শুকনা বালির সাহায্যে সংরক্ষণঃ এ পদ্ধতিতে প্রথমে ১-১.৫ ইঞ্চি শুকনা বালির স্তরের উপর বীজ হলুদ (৪-৫ ইঞ্চি পুরু স্তর) রেখে প্রথমে সবুজ পাতা ও পরে বালির আস্তরণ (১ ইঞ্চ) দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বীজের পরিমাণ বেশি হলে এ পদ্ধতি অনুসরণ করে স্তরে স্তরে রাখা যেতে পারে।

সু্ত্র: বিকাশপিডিয়া টীম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/7/2019



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate