ঢলে পড়া/গোড়া ও শিকড় পচাঁ/স্ক্লেরোশিয়াম রট (Wilt/Foot and Root rot/ Sclerotium rot) রোগ
রোগের কারণ
ফিউজারিয়াম অক্সিসপোরাম ( Fusarium oxysporum), ফিউজারিয়াম ছোলানি ( F. solani) এবং স্ক্লেরোশিয়াম রফ্সাই (Sclerotium rolfsii) নামক ছত্রাকের আক্রমণ এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার
ছত্রাক গুলো প্রধানত মাটি বাহিত এবং অন্যান্য শস্য আক্রমণ করে। মাটিতে জৈব সার বেশী থাকলে এবং জমিতে ধানের খড়কুটা থাকলে জীবানুর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত মাটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে (২৮ - ৩০ ডিগ্রী সেঃ) ও যথেষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা থাকলে এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। পানি সেচের মাধ্যমে আক্রান্ত ফসলের জমি হতে সুস্থ ফসলের মাঠে বিস্তার লাভ করে।
রোগের লক্ষণ
- সাধারণত চারা গাছ এ রোগে আক্রান্ত হয়, তবে বড় গাছেও হতে পারে।
- মাটি বরাবর গাছের গোড়ায় ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং গোড়া সহ শিকড় পচেঁ যায়।
- গাছের অগ্রভাগের পাতা হলুদ হয়ে যায়, পরে সমস্ত গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
- হলুদ চারাগুলো শুকিয়ে মারা যায়।
- গাছ টান দিলে উপরের অংশ ছিড়ে আসে ও শিকড় মাটির নীচে থাকে।
- বড় গাছ আক্রান্ত হলে পাতা ঢলে পড়ে।
- স্ক্লেরোশিয়াম রফ্সাই দ্বারা দ্বারা আক্রান্ত গাছের গোড়ায় তুলার মত সাদা মাইসেলিয়া ও ছোট ছোট স্ক্লেরোশিয়াম দেখা যায়।
- ফিউজারিয়াম-এর ক্ষেত্রে গাছের কান্ড লম্বালম্বিভাবে ফাটালে ভিতরের অংশ কালো দেখায়।
|
|
|
চিত্র: ছোলার ঢলে পড়া/গোড়া ও শিকড় পচাঁ/স্ক্লেরোশিয়াম রট রোগের লক্ষণ
|
রোগের প্রতিকার
- কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
- জৈবিক দমনের ক্ষেত্রে ট্রাইকোডারমা বা রাইজোবিয়াম জীবানু সার দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে।
- ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- আক্রান্ত জমিতে কয়েক বৎসরের জন্য শস্য পরিক্রমা অনুসরণ করতে হবে।
- রোগ সহনশীল জাত যেমন-বারি ছোলা ৬, ৭, ৮ ও ৯ চাষ করতে হবে ।
- অর্ধকাচা মুরগির বিষ্ঠা হেক্টর প্রতি ৫ টন হারে বীজ বপনের ২-৩ সপ্তাহ আগে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- ফসলের গোড়ার চতুর্দিকের পৃষ্ঠের মাটি নেড়ে শুষ্ক করে দিলে এ রোগ অনেকাংশে দমন হয়।
- রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে।
- রোগ দেখা মাত্র কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর গাছের গোড়ায় মাটিতে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
বোট্রাইটিস গ্রে মোল্ড (Botrytis Gray Mold) রোগ
রোগের কারণ
বোট্রাইটিস সিনেরিয়া (Botrytis cinerea) নামক ছত্রাকের আক্রমনে এ রোগ হয়ে থাকে।
রোগের বিস্তার
বিকল্প পোষক, রোগাক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ ও বীজ হতে বাতাসের মাধ্যমে এ রোগ সুস্থ গাছে ছড়ায়। ১৫ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় বীজ সংরক্ষন করা হলে বীজে জীবানু ৫ বছর পর্যন্ত বেচে থাকতে পারে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯৫% বা বেশী, তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রি সেঃ, গাছ খুব ঘন এবং অতিরিক্ত সেচ দিলে বা বৃষ্টি হলে রোগের বিস্তার ও ব্যাপকতা বেড়ে যায়।
রোগের লক্ষণ
- গাছের বয়স্ক অবস্থায় কিংবা ফুল আসার শুরু থেকে এ রোগের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়।
- এ রোগ গাছের ডগা, পাতা, কান্ড, ফুল, ফল ও বীজে এ আক্রমণ করে থাকে।
- পাতায় প্রথমে খয়েরী রং-এর দাগ পরে, পরবর্তীতে দাগগুলো একত্রিত হয়ে পাতা ঝলসানোর মত দেখায় এবং পাতার রং হালকা সবুজ বা খয়েরী হলদেটে হয়ে যায়।
- ফুল ও ফলের আক্রান্ত স্থানে ধূসর বা সাদা বর্ণের ছত্রাক দেখা যায়।
- আক্রান্ত গাছের ফলগুলোতে খুব ছোট কুচকানো বীজ হতে পারে, এমন কি বীজ নাও হতে পারে।
- গাছ যথেষ্ঠ পরিমানে খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না বলে ফলন অনেক কম হয়।
|
|
|
|
চিত্র: ছোলার বোট্রাইটিস গ্রে মোল্ড রোগের লক্ষণ
|
রোগের প্রতিকার
- রোগ সহনশীল জাত যেমন- বারি ছোলা ৬ ও ৯ চাষ করতে হবে।
- আক্রান্ত ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- আক্রান্ত জমিতে কয়েক বৎসরের জন্য শস্য পরিক্রমা অনুসরণ করতে হবে।
- কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
- ছোলা গাছ ঘন করে না লাগিয়ে পাতলা করে লাগাতে হবে।
- অতিরিক্ত সেচ দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) অথবা ফেনামিডন + মেনকোজেব (যেমন-সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
সূত্র ও লেখকঃ বিজ্ঞানী ড. কে. এম. খালেকুজ্জামান
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/18/2020
0 রেটিং / মূল্যাঙ্কন এবং 0 মন্তব্য
তারকাগুলির ওপর ঘোরান এবং তারপর মূল্যাঙ্কন করতে ক্লিক করুন.
© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.