শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অসম বণ্টনের কথা আরও অনেকেই উল্লেখ করেছেন। যেমন বহরমপুরের রবিউল ইসলামের কথা অনুযায়ী একটি জেলার বা একটি চক্রের মোট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা একই থাকলেও মাঝে মাঝে তাঁরা অসম বণ্টন দেখেন। তিনি এও বলেছেন যে শহরাঞ্চলের বিদ্যায়লগুলিতে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা বেশি। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে এই অসম বণ্টন দূর করা প্রয়োজন। কোচবিহারের আব্দুস সাত্তার মিঞা অভিযোগ করেছেন ডি পি এস সি থেকে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা থাকায় শীতলকুচি ব্লকে বহু বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যার ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষক বণ্টনের অসমতার কথা পরিষ্কার হয়ে ওঠে মালদার বীনাপাণি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার কুণ্ডুর লেখায়। তিনি যখন প্রথম বিদ্যালয়ে যোগদান করেন তখন বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক সংখ্যা – ৩, সেটি ২০০৭ সাল এবং তখন বিদ্যালয়ে মোট শিশু সংখ্যা মাত্র ৮। পরবর্তীকালে যদিও এক জন শিক্ষক অন্যত্র বদলি হয়ে যায়। বর্তমানে কিন্তু ঐ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪০ এবং শিক্ষক সংখ্যা ২ অর্থাৎ পরে ভর্তির ক্ষেত্রে বিরাট উন্নতি হয়েছে। কিছু শিক্ষকের লেখাতে মহিলা শিক্ষকের চাহিদার কথাও উঠে এসেছে। তাঁদের কথা অনুযায়ী বিদ্যালয় প্রতি এক জন করে মহিলা শিক্ষক থাকা জরুরি। বিদ্যালয়ে আসা শিশুগুলি স্বাভাবিক ভাবে মাতৃসুলভ কাউকে বিদ্যালয়ে দেখতে পেলে অনেক বেশি আকৃষ্ট হবে। আর তা ছাড়াও শিক্ষকদেরই মতামত, কখনও তাঁরা বিদ্যালয়ে ১২/১৩ বছর বয়সি মেয়েদেরও ভর্তি করেছেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই তারা পুরুষ শিক্ষকের কাছে সহজে সমস্যাগুলি বলতে পারে না। এ সকল ক্ষেত্রে যদি এক জন মহিলা শিক্ষক থাকেন তবে সমস্যা অনেকটাই কমে এবং বিদ্যালয়-ছুটের সংখ্যাও অনেকটাই কমে যায়। শিক্ষক অপ্রতুলতার সমস্যার পাশাপাশি বেশ কিছু শিক্ষক এ কথাও জানিয়েছেন যে, তাঁদের বিদ্যালয়ে এ ধরনের সমস্যা অনেকাংশেই কাটিয়ে উঠেছেন বা কাটানোর চেষ্টা করে চলেছেন। যেমন কস্কো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তম কুমার মাঝির বক্তব্য অনুযায়ী তিনি যখন বিদ্যালয়ে যোগদান করেন তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৪৭ জন। এবং তার মাত্র অর্ধেক ছাত্রই বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকত। কারণ হিসাবে তিনি শিক্ষক অপ্রতুলতাকেই দায়ী করেছেন। কিন্তু পরবর্তী কালে শিক্ষক সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। একই রকম ভাবে গঙ্গারামপুরের রুপাহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জয়ন্ত বর্মনের লেখাতেও একই কথা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুপাতও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/19/2020