একটি বিদ্যালয়কে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে পরিকাঠামো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি বিদ্যালয়ের কথা চিন্তা করলে স্কুলবাড়িটির ছবি ভেসে ওঠে। গৃহহীন বিদ্যালয়ের চিন্তা আমাদের কাছে এক প্রকার কল্পনাতীত। কিন্তু শিক্ষকদের লেখায় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এমনও একটা সময় ছিল যখন কিছু বিদ্যালয় ছিল আক্ষরিক অর্থেই গৃহহীন। যেমন রায়গঞ্জের মহীনগর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোতোষ কুমার ঘোষের লেখা অনুযায়ী :
‘১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার বদলি হয় এবং আমার গ্রামের বাড়ির কাছে কাঠন্দরী অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু এখানেও একই সমস্যায় পড়তে হল, এখানে কোনও স্কুল বাড়ি ছিল না। বেশির ভাগ সময়েই পাড়ার কোনও বাড়ির বারান্দায় কিংবা বাগানে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পঠনপাঠনের কাজ করতে হত।’
জানা গেছে যে, বিদ্যালয়টিতে তত দিনে গৃহ নির্মাণ প্রায় সম্পূর্ণ এবং অন্যান্য সমস্যাও তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। কিন্তু এ কথাও অস্বীকার করা যায় না প্রায় ১০ বছরেরও দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যালয়টি গৃহহীন অবস্থায় ছিল।
বিদ্যালয় পরিকাঠামো এখন যে অনেক উন্নত, শিক্ষকেরা অনেকেই নিজেরাও তা স্বীকার করেছেন। তবে উন্নতির হার পূর্বের তুলনায় ভালো হলেও যথেষ্ট নয়। কারণ শিক্ষকেরা যাঁরা বিদ্যালয় গৃহ নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ স্বীকার করেছেন যে বিদ্যালয় গৃহগুলির অবস্থা করুণ। দীর্ঘদিন ধরে মেরামতির অভাবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে দৈনন্দিন বিদ্যাচর্চাই ব্যাহত হচ্ছে। আবার কোথাও বা গৃহগুলির নির্মাণকার্যই অসম্পূর্ণ যেখানে শ্রেণিকক্ষের একটি জানালা দরজা পর্যন্ত নেই। শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা বিদ্যালয় পরিকাঠামোর সম্পর্কীয় আলোচনা করেছেন তাঁদের প্রায় ৭০ শতাংশই এই বিষয়ে একমত যে বিদ্যালয়গুলিতে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিদ্যালয়গুলিতে ৪টি বা ২টি ক্লাস একই সাথে চলতে থাকে। যেমন রাজগঞ্জের আজহারুল ইসলাম তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন ‘কচুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা ২০০৩ সালে ৪১৮ জন। যদিও তা হাজিরা খাতা অনুযায়ী। শ্রেণিকক্ষ বলতে ১টিতে দরজা জানালা নেই এবং একটি নতুন ঘর তৈরি হচ্ছে। ঘরের মধ্যে কিন্তু পড়ানোর ব্যবস্থা নেই। বিদ্যালয়ে ছাত্র পড়ানোর মতো ব্ল্যাকবোর্ড নেই। শিক্ষক সংখ্যা ৫ জন। গাছের তলায় শুরু ক্লাস।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/22/2020