প্রতীচী ইনস্টিটিউটের কর্মশালাগুলিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির শিক্ষকদের পাশাপাশি কিছু শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের পাওয়া গেছে। তাঁদের লেখাগুলিকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা করা যাচ্ছে যে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ই এখনও গৃহহীন অবস্থায় রয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে শিশু শিক্ষা কেন্দ্রগুলি কোনও সহৃদয় ব্যক্তির বাড়ির বারান্দায় বা গাছের তলায় চলতে থাকে। পরিশ্রুত পানীয় জলের সরবরাহ সমস্ত কেন্দ্রে নেই। একই রকম শোচনীয় অবস্থা শৌচাগারের ক্ষেত্রেও। ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য পৃথক শৌচাগারের কল্পনা এখানে দূরস্থান, সকলের ব্যবহারের একটি মাত্র শৌচাগারই অনেক কেন্দ্রে বর্তমান নয়।
সুতরাং পরিশেষে এ কথা বলা যেতেই পারে যে শিক্ষকেরা অনেক ক্ষেত্রেই বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো একটু বেশি মাত্রায় আপত্তি করেছেন। কিন্তু একটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে এই শিক্ষকদের সমস্ত বিদ্বেষ, রাগ, আপত্তি উঠে আসছে তাদের দীর্ঘদিন ধরে না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে। যে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের প্রতি দিন এই শিশুগুলিকে নিয়ে বিদ্যালয় চালাতে হয়, তার খানিকটা প্রকাশ আমরা পেয়েছি তাঁদের লেখার মাধ্যমেই। পাশাপাশি বেশ কিছু লেখা থেকে আমরা এ কথাও খুঁজে পেয়েছি যে রোজকার সমস্যাগুলির সাথে যুদ্ধ করতে করতে সমস্যাগুলিকে তাঁরা কী ভাবে সমাধানের রাস্তায় নিয়ে এসেছেন। বহরমপুরের অপর্ণা ব্যানার্জির লেখাটিই এ প্রসঙ্গে তুলে ধরা যায় :
‘গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পর — হ্যাঁ ঐ রাঙামাটির পরেই আমাদের বিদ্যালয়। আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র বলতে যে ছবি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে আমাদের বিদ্যালয় ঠিক সে রকম। দ্বিতল বিদ্যালয়, বিদ্যালয়ের সামনে খোলা মাঠ। বিদ্যালয়ের মধ্যে সুসজ্জিত বাগান। ... অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাথমিক স্কুলগুলি আগের চাইতে অনেক ভালো জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আমরা যেমন দেখলাম সবার অবস্থা এক রকম নয়। অনেক ক্ষেত্রেই নানা সমস্যা আছে, যেগুলির দ্রুত সমাধান করা দরকার। বিশেষত শিক্ষক নিয়োগ ও তাঁদের ঠিক ঠিক জায়গায় নিযুক্ত করার দিকটি অত্যন্ত জরুরি। আবার অন্যান্য পরিকাঠামোগত দিকগুলিতেও জোর দেওয়ার দরকার আছে।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/24/2019