প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষা প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে শিক্ষকদের আলোচনায় যে যে বিষয় উঠে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হল পরিদর্শন ব্যবস্থা। প্রাথমিক শিক্ষা ও পরিদর্শন ব্যবস্থার সম্পর্ক যে অতি নিবিড়, তা সকলেরই জানা। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক কর্মশালায় উপস্থিত শিক্ষকরা অন্যান্য বিষয়ে যত জোর দিয়েছেন এই বিষয়টিতে ততটা আলোচনা করেননি। হতে পারে, ব্যবস্থাগত কারণে পরিদর্শন ব্যাপারটি এখন এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে এর অস্তিত্বটাও সবার মাথায় থাকছে না। ৩৪৮ শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ১১ জন শিক্ষক (৩.২ শতাংশ) তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে পরিদর্শন ব্যবস্থার উপর মতামত রেখেছেন। কিন্তু যে শিক্ষকই এ বিষয়ে কোনও রকম আলোচনা করেছেন, তিনিই নিয়মিত পরিদর্শনের অভাবের কথা লিখেছেন। যদিও এঁরা সবাই পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন। পরিদর্শনের অনিয়মিততার সমস্যা যে কোন স্তরে আছে তা অনুমান করা যায় উত্তর দিনাজপুর জেলার এক শিক্ষকের লেখা থেকে। তিনি লিখেছেন, ‘আমি যে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি সেখানে কোনও দিন এস আই বা অন্য কেউ (পরিদর্শন করতে) আসেননি।’ বিভিন্ন সমীক্ষাতেও পশ্চিমবাংলায় পরিদর্শনের সাংঘাতিক অনিয়মিততা দেখতে পাওয়া গেছে। প্রতীচী ট্রাস্টের ২০০৮–০৯-এর সমীক্ষাতে দেখা গিয়েছিল যে রাজ্যে ৫৯ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমীক্ষার আগের ৬ মাসে কোনও পরিদর্শন হয়নি। ঐ সমীক্ষাতেই এক বছরের মধ্যেও পরিদর্শন হয়নি এমন বিদ্যালয়ের অনুপাত পাওয়া গিয়েছিল প্রায় ২৭ শতাংশ। শিক্ষকদের লেখাগুলি থেকে জানা যায় যে পরিদর্শকের সংখ্যাল্পতাই এই সমস্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার দামোদরপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক লিখছেন :
‘করঞ্জলী চক্রে এখন যিনি অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (এবং আগের জনও) তিনি তিন থেকে চারটি চক্রের দায়িত্ব একসাথে পালন করেন। শুধুমাত্র করঞ্জলী চক্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৬টি। কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়টি বাস রাস্তার ধারে এবং চক্র থেকে ১.৫ কিমি দূরত্বে। তা সত্ত্বেও দু’ বছর আগে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের পক্ষে এক বার পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছে।’
আবার কেউ কেউ পরিদর্শকদের ব্যক্তিগত মানসিকতাকেও দায়ী করেছেন। কিন্তু যাঁরাই এ বিষয়ে লিখেছেন তাঁদের প্রত্যেকেই এর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/4/2020