ত্রুটি থাকতে পারে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও। সেই ত্রুটি কী ধরনের ত্রুটি হতে পারে তার একটি অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারা যায় জলপাইগুড়ি জেলার শিক্ষকদের কাছ থেকে। জলপাইগুড়ি জেলার সম্বিত পালের প্রথম নিয়োগ হয়েছিল একটি হিন্দি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে। যদিও তিনি হিন্দি মাধ্যমের শিক্ষক ছিলেন না। ঐ জেলারই আর এক জন শিক্ষক লিখছেন যে ২০০৬ সালে তিনি যখন ফাঁসকোণ্ডা টি জি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (হিন্দি মাধ্যম বিদ্যালয়) যোগ দেন তখন দেখেন যে বিদ্যালয়ে এক জন মাত্র শিক্ষক যিনি কি না বাংলা মাধ্যমের। এক মাধ্যমের শিক্ষক নিয়োজিত হয়েছেন অন্য মাধ্যমের বিদ্যালয়ে। এ সমস্যা যদিও জলপাইগুড়ি জেলাতেই বেশি পাওয়া গেছে, তবে অন্য কোনও জেলার শিক্ষকদের লেখা থেকে এ ধরনের অভিজ্ঞতা জানতে পারা যায়নি এমনটা নয়। উত্তর দিনাজপুর জেলার শিক্ষক আংশিক দাস লিখছেন :
‘আমার বাড়ি রায়গঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে। কিন্তু চাকরি হয় ৫৫ কিমি দূরে প্রত্যন্ত এক গ্রামে... এই যাত্রার বেশির ভাগটাই ছিল খুব কষ্টের... স্কুলে পৌঁছে দেখি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার ২ – ৫ জন ... যদিও কোন দিন ছাত্রছাত্রী ডেকে ডেকে ১০ – ১৫ জন করা হত সে দিন ঘটত অন্য অনুষ্ঠান — তা হল ভাষাগত সমস্যা... শিক্ষাদান করা হত উর্দু ভাষায়... ফলে উভয় দিকে সঙ্কট শুরু হয়। প্রথম দিকে স্কুলে গেলে কান্না পেত।’
সুতরাং শিক্ষক নিয়োগের এই ত্রুটি যে শুধুমাত্র শিশুদেরই শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ গড়ে তুলতে পারে তা-ই নয়, তা শিক্ষকেরও নৈতিক মনোবলকে তলানিতে পৌঁছে দিতে পারে, যা আংশিক দাসের লেখা থেকে পরিষ্কার।
শিক্ষকদের কোন স্কুলে দেওয়া হবে, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে হেতু কোনও বিশেষ যুক্তি পদ্ধতি কাজ করেনি, তাই শিক্ষকদের মধ্যে এ সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্তকে খারাপ চোখে দেখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/17/2020