শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা না করার ব্যাপারটা আরও অনেক সমস্যাকে প্রকট করে তোলে। এমনই একটি সমস্যা হল শিশুদের শাস্তি দেওয়া। শিক্ষকদের একাংশ এখনও মনে করেন, যে শাস্তি ছাড়া লেখাপড়া হবে না। বেশ কিছু শিক্ষক শাস্তিদানের পক্ষে। যেমন বহরমপুরের শ্রাবণী সাহা লিখছেন :
‘আইন ও মিডিয়ার দৌলতে শিক্ষকেরা প্রায় কসাইয়ে পরিণত। এটা ভেবে নিতে কি খুব কষ্ট হয় যে প্রতিটি শিক্ষকই কারোর মা কিংবা বাবা ? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন শিক্ষকরা তাঁদের মানসিক অস্থিরতা এবং আক্রোশবশে ছাত্র নামক জীবটিকে পেটান। কয়েকটি দু:খজনক ঘটনা বাদ দিলে আমার সেই বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে প্রশ্ন, অন্য জীবিকায় যাঁরা আছেন তাঁদের মানসিক বিকার কার ওপর প্রতিফলিত হয়? না কি শিক্ষকেরাই একমাত্র অসুস্থ? আজ একটি অন্যায় কাজের জন্য সামান্য শাস্তি প্রয়োগে একটি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রের মুখে শোনা যায় — মাস্টারকে জেল খাটাব। এটি কার অবদান? কার জীবনে কোনও শাস্তি নেই? বলা যাবে না।’
এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই, শিক্ষকদের ক্ষোভের যথেষ্ট জায়গা আছে। কিন্তু এই ক্ষোভ যে অনেকটাই শাস্তি প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক আলোচনার অভাববশত সেটা বোঝা যায়। মুর্শিদাবাদের এক জন শিক্ষক বলছেন :
‘শিশুকে ভালোবাসা বা স্নেহ করা যেমন কর্তব্য তেমন অবাধ্য শিশুদের কিছুটা সংশোধনের অধিকারও শিক্ষককে দেওয়া প্রয়োজন। এমন কিছু এলাকা চোখে পড়ে যেখানে গ্রামগুলিতে মারদাঙ্গা খুন-জখম মাঝে মাঝে হতে থাকে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা মা-বাবার সাথে অনেক দিন ঘরছাড়া হয়ে থাকে। ফলে ঐ ছাত্র ছাত্রীরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ে। তা ছাড়া শিশুদের মধ্যে মারদাঙ্গা করার প্রবণতাও বেড়ে যায়।’
এখানেই প্রশ্ন যে শিশুটি ইতিমধ্যেই একটি অশান্তির এবং অসামাজিক পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে সে তো অবশ্যই ভীত। এবং খুব স্বাভাবিক তার আচরণ শ্রেণির চার/পাঁচটি সাধারণ ছেলেমেয়ের মতো হবে না। শিক্ষক যদি তা জেনেও তার সাথে কঠোর আচরণ করেন তবে শিশুটি কি আদৌ কিছু শিখবে? প্রশ্ন থেকে যায়।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 9/27/2019