মিড–ডে মিল, বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য পোশাকের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশনারি দ্রব্য এবং পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্বের কথাও শিক্ষকদের লেখা থেকে উঠে এসেছে। স্টেশনারি দ্রব্যের কথা ৪১ জন শিক্ষকদের লেখায় আলোচিত হয়েছে। তার মধ্যে ১৮ জন শিক্ষকের কথা থেকে জানা যায় যে শিশুদের স্টেশনারি দ্রব্য অর্থাৎ খাতা, পেন, পেনসিল নেই। আর এর অভাবে তাদের পড়াশোনাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলপাইগুড়ির নাগাইসুরি চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌমজিৎ বসুর লেখা থেকে জানা যায়, ‘চা বাগানের শ্রমিক পরিবার থেকে আসার ফলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়। বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের উপযোগী স্লেট, পেনসিল ইত্যাদি কিনে আনতে এরা পারে না।’
ফলস্বরূপ পড়াশোনাতে পিছিয়ে পড়তে হয় এই শিশুদের, এমনটাই বলেছেন শিক্ষকরা। পশ্চিমবঙ্গের অনেক পরিবারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে শিশুদের ঠিকমতো খাদ্য দিতে, পোশাক দিতে, খাতা বই কিনে দিতে তাঁরা অক্ষম। কিন্তু ১০ জন শিক্ষক একটু ব্যতিক্রমী চিত্রই তুলে ধরেছেন। তাঁদের মতে অভিভাবকরা অনেকটা সচেতনতার অভাবের কারণেই তাঁরা তাঁদের সন্তানদের খাতা পেনসিল কিনে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধিই করেন না।
‘বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই স্কুলে পেন পেনসিল খাতা আনতে পারে না। তাদের বেশির ভাগ বাবা-মায়ের মধ্যে একটুও সচেতনতা থাকে না যে, ছেলেমেয়েকে স্কুলে যাওয়ার আগে পেন পেনসিল গুছিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে।’
অনেক শিক্ষকের মতেই অভিভাবকদের বিরাট অংশের মধ্যে এ ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অভাব আছে। শিক্ষকদের একটা অংশ আবার জানাচ্ছেন যে, তাঁরা নিজেদের অর্থ দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাতা পেনসিল কিনে দেন।
‘বিমল রবিদাস। তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সপ্তাহে এক দিন আসে তো তিন দিন বিদ্যালয়ে আসে না। ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসে — বিমল ভিক্ষা করছে। কেন? ওর বাবা নেই, মায়ের অসুখ, কাজ করতে পারে না। পরের দিন ওকে বিদ্যালয়ে ধরে নিয়ে আসার কথা বললাম। পর দিন এলো। খাতা পেনসিল ছিল না। কিনে দিলাম। বোঝালাম। এ বছর পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। এ রকম অনেককেই খাতা পেনসিল কিনে দিতে হয়।’
এমনটাই জানিয়েছেন মালদার মহেশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সরকারও।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/16/2020