ভারত সরকার যে সমস্ত উদ্দেশ্যগুলির কথা মনে করে এই প্রকল্পটি চালু করেন সেই উদ্দেশ্যগুলি অনেকাংশেই সফল হয়েছে। তবে আমাদের কর্মশালাগুলিতে ১৬৬ জন শিক্ষক অর্থাৎ যাঁরা মিড–ডে মিল–এর বিষয়ে বলেছেন তাঁদের মধ্যে মাত্র ২ জন শিশুদের বিদ্যালয় থেকে যাওয়ার ব্যাপারে এবং ৩ জন শিশুদের স্কুলছুটের হার কমছে সেই সম্পর্কে বলেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে ৪৯ জন (৪০ শতাংশ) শিক্ষক শিশুদের উপস্থিতি বৃদ্ধির কথা বলেন। মিড–ডে মিল খাওয়ার ফলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রাণচঞ্চল ভাবটাও লক্ষ করা যাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রামপুর মথুরানগর অঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রইচউদ্দিন খানের মতে, ‘স্কুলে মধ্যাহ্নকালীন আহারের ব্যবস্থা হয়ে ছাত্ররা প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। যার ফলে বিদ্যালয়ে আসার প্রতি তাদের অবহেলা কেটেছে। সাথে সাথে অভিভাবকদেরও বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠাবার প্রবণতা বেড়েছে।’
মিড–ডে মিল চালুর আগে অনেক শিশু খালি পেটে স্কুলে আসত। তাদের মনোযোগ শুধু খাবারের দিকে থাকত। তারা ভাবত কখন তারা বাড়ি গিয়ে দু’মুঠো খাবে। মিড-ডে মিল আসার ফলে তা হয়ে দাঁড়ায় তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তির উপায়। এর সঙ্গে পুষ্টির দিকটিও গভীর ভাবে সম্পর্কিত। ৩৭ জন (২২.৩ শতাংশ) শিক্ষকের কথার মাধ্যমে এটি স্পষ্ট ভাবে উঠে এসেছে। যে সমস্ত শিশু সম্পূর্ণ অনাহারে বিদ্যালয়ে পৌঁছত, সেই গরিব পরিবারের শিশুরা মিড–ডে মিল খেয়ে অনেকাংশে উপকৃত হয়েছে। জলপাইগড়ি জেলার গয়েরকাটা গ্রিল্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ভবতোষ সরকারের কথা থেকে আমরা বলতে পারি যে মিড–ডে মিলের খাবার ঐ বিদ্যালয়ের শিশুদের প্রত্যেকের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় কারণ ঐ এলাকার বেশির ভাগ অভিভাবক শিশুদের খাবার এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীন, তার প্রধান কারণ দারিদ্র্য। ‘অভিভাবকগণ কাজের খোঁজে বা বনে কাঠ সংগ্রহে সারা দিন ব্যস্ত থাকত। ফলে শিশুর কেউ কেউ অর্ধাহারে বা অনাহারে বিদ্যালয়ে আসত, বেশির ভাগ শিশুর রক্তাপ্লতা এবং পেটমোটা।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/30/2020