আমি নিজে এক জন পার্শ্ব শিক্ষক হিসেবে ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে পার্বতীপুর উত্তর মহেন্দ্রপুর আঞ্চল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করি। যখন এই বিদ্যালয়ে যোগদান করি তখন আমাকে নিয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল তিন জন এবং বর্তমানেও শিক্ষকের সংখ্যা তিন জন। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে তিন জন শিক্ষকের মধ্যে এক জন শিক্ষক অর্থাৎ যিনি ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক তাঁকে বেশির ভাগ সময় রিপোর্ট ও অন্যান্য কাজ যথা মিড ডে মিল, বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো, প্রভৃতি কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। যেখানে চারটি শ্রেণি রয়েছে সেখানে চারটি শ্রেণিতে চার জন শিক্ষক হওয়া বাঞ্ছনীয় কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার অভাবহেতু শ্রেণি পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটছে। তাই শিক্ষাদানের অনেকটা সময় এখানে ব্যয় হয়। যদি চার জন শিক্ষক থাকে তা হলে অনেকটা ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে আমাদের স্কুলের পরিকাঠামো পূর্বের থেকে অনেকটা উন্নত হয়েছে। শ্রেণিকক্ষ রয়েছে তিনটি; যার মধ্যে একটি বড় শ্রেণিকক্ষে দু’টি ক্লাস হয়। এ ছাড়া টয়লেটও রয়েছে ছেলেমেয়েদের পৃথক পৃথক। পানীয় জলের কোনও অসুবিধা হয় না। বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগও রয়েছে। ছেলেমেয়েদের বসার বেঞ্চ প্রয়োজনের তুলনায় কিছু কম আছে, যা কিছু দিনের মধ্যে সুরাহা হয়ে যাবে। বিদ্যালয়ের খেলাধূলার মাঠ খুব একটা বড় নয়, যার ফলে খেলাধূলা করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। তবে সেটা প্রয়োজনের নিরিখে খুব অসুবিধা বলে মনে করছি না।
আমি যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদান করার চেষ্টা করি। আমাকে বেশির ভাগ সময় দু’টি ক্লাস নিতে হয়। রুটিনমাফিক কোনও কোনও দিন সব ক্লাস সম্পূর্ণ করে উঠতে পারা যায় না। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে বরাদ্দ সময়ের মধ্যে ক্লাস করে ওঠা কখনও কখনও সম্ভব হয়ে উঠে না। কারণ ওই দুই শ্রেণিতে ছোট্ট ছেলেমেয়েদের লেখানো, সেই সঙ্গে লেখা দেখা ও লেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা সময় ব্যয় হয়। এই দু’টি শ্রেণি ছোট ছেলেমেয়েদের অক্ষর জ্ঞান, ভাষাবোধ সেই সঙ্গে সরব পাঠের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা শিশুর মন প্রথমে থাকে একটা সাদা অলিখিত কাগজের মতো। সেখানে যে ভাবে আমরা তাদের পাঠদান করব সেই ভাবে তারা গড়ে উঠবে। নীরস পাঠদান করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের অনাগ্রহ দেখা দিতে পারে। তাদেরকে Joyful learning এর মাধ্যমে বিভিন্ন TLM -এর সহযোগে পাঠদান করায় তারা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। আগে যে ভাবে পাঠদান করা হত অর্থাৎ শিক্ষক হবেন মধ্যমণি — শিক্ষককেন্দ্রিক শিক্ষাদান — সেটা বর্তমানে পরিবর্তিত হয়েছে। এখন শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষাদান, যেখানে শিশুরা নিজেরাই করবে হাতে নাতে। শিক্ষক হবেন কেবলমাত্র পথ প্রদর্শক।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/21/2020