ভূগোলের ক্ষেত্রে যখন শ্রেণিকক্ষে মানচিত্র টাঙাই তখন তারা তা ভালো ভাবে প্রত্যক্ষ করার জন্য সামনের দিকে বসতে চায়। তাদের মধ্যে বসার জন্য হুড়োহুড়ি করে। এই মানচিত্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির অবস্থান মোটামুটি ভাবে কিছু কিছু ছাত্র উল্লেখ করতে পারে। তবে সকলেই যে একই সঙ্গে রপ্ত করতে পেরেছে তা বলব না। কারণ কিছু অন্যমনস্ক শিশু থাকেই। তাদের মধ্যে খুব কষ্ট করে আগ্রহ জাগাতে হয়। মাটির প্রকারভেদ শেখাতে গিয়ে নিকটস্থ জায়গা থেকে তারা মাটি সংগ্রহ করে আনে। ফলে বেলে, এঁটেল, দোঁয়াশ মাটি সহজেই তারা চিনে নিতে পারে। তা থেকে বোঝা যায় প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত উপকরণের মাধ্যমে আমরা শিশুর সার্বিক জ্ঞানার্জন করাতে বিশেষ উপকৃত হই।
বাংলা পড়াতে গিয়ে দেখেছি শিশুরা কিছুটা ভাষার সমস্যায় পড়ে। নিজেদের মাতৃভাষার সঙ্গে বইয়ের বাংলা ভাষা গুলিয়ে ফেলে। শব্দার্থ বা বিপরীতার্থক শব্দ জিজ্ঞেস করলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের মাতৃভাষা প্রয়োগ করে থাকে।
যেমন — ‘কাছে’ শব্দটির বিপরীত বলে ‘ভীড়ে’ (যে হেতু তারা খোট্টাভাষী) ‘কালো’ থেকে ‘গোরা’ ইত্যাদি।
তাৎক্ষণিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিশুদের দুর্বলতাগুলি যাচাই করি এবং পরে সংশোধনী পাঠ দিয়ে দেখি দুর্বল ছেলেদের তা রপ্ত করাতে বেশ সময় লাগে।
কিছু কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে খুব কম আসে, ফলে তাদের নিয়ে পরবর্তী অধ্যায়টিতে খুব অসুবিধা পোহাতে হয়। বিশেষ করে গণিত বিষয়ে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় শিশুর মা তাদের নিয়ে পাতা কুড়োতে যায় আবার কোনও কোনও শিশুকে বাড়ির ছোট্ট বাচ্চাটিকে সামলানোর দায়িত্ব দিয়ে মা মজুর খাটতে যায়। বাবা হয়তো দিল্লিতে কাজ করে। গার্জেনদের বুঝিয়েও ভালো ফল খুব কম পাওয়া যায়। আবার কিছু কিছু পরিবারের কর্ত্রী শিশুদের নিয়ে দীর্ঘদিন বাপের বাড়ি কাটিয়ে আসে। ফলে শিশুর অনুপস্থিতি বাড়ে। তবে আমাদের বিদ্যালয়ে দেখি পরীক্ষার দিনগুলিতে ৯৫ শতাংশ উপস্থিতি। আবার যে দিন ডিম রান্না হয় সেদিন উপস্থিতির হার খুব বেশি হয়। কিছু ছাত্র শুধু ডিমের দিনই উপস্থিত থাকে অন্যান্য দিন গুলিতে থাকে না। কিছু ছাত্র ছাত্রী আবার শুধু খাবার জন্য আসে। তবে কিছুটা অবশ্যই লেখা পড়ার আগ্রহে স্কুলে আসে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/2/2019