প্রথমত বলি এই পেশাটা হল একটা মহান পেশা। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকাটা আরও বেশি গ্রহনীয়। প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গনে কচিকাঁচা কোমল সুকুমারমতি শিশুদের নাড়াচাড়া করতে করতে তাদের মনের ভেতরে প্রবেশ করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় আছে অমলিন আনন্দ। বিভিন্ন শিশুর মধ্যে তাদের আলাদা আলাদা নিজস্ব চাহিদা ও গ্রহণক্ষমতা বুঝে তাদের শিখন সামর্থ বৃদ্ধি করার কাজ কিন্তু মোটেও হালকা নয়। কাজটি অবশ্যই কঠিন। কিন্তু আন্তরিকতার সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মত প্রয়োগ পদ্ধতি অবলম্বন করে চললে ফল হবেই। নিজেকে শিশুর কাছে অত্যন্ত কাছের এবং আকর্ষণীয় করাও সমান আবশ্যিক।
আমি যে গ্রামীণ বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত আছি, সেখানে দেখেছি অভিভাবকদের বেশির ভাগ তফশিলি জাতি কিংবা জনজাতিভুক্ত। দারিদ্র সমান চলমান। স্বাভাবিক ভাবে পুষ্টিহীনতা বিদ্যমান। অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। গৃহপরিবেশে শিক্ষার অপ্রতুল পরিস্থিতিতে শিশুদের বেড়ে ওঠা। এই রকম বিরুদ্ধ পরিবেশ পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শিশুর কাছে প্রকৃত শিক্ষক হতে পারাটা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ।
এ ক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি শিশুদের সঙ্গে যতটা বেশি সময় কাটানো। ওদের দু:খ এবং সুখের মুহূর্তের ভাগীদার হওয়া অর্থাৎ ওদের নিষ্পাপ মনটাকে বোঝা --- ওরা আমার কাছে কী চাইছে? এটা নিখাদ আন্তরিকতায় বোঝা। ওদের গ্রহণ এবং ধারণক্ষমতার পরিমাপ করাও আবশ্যিক। বিদ্যালয় পরিবেশেই ওরা ওদের প্রাপ্যটা যাতে পরিপূর্ণ ভাবে পেতে পারে সে ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি অবশ্যই থাকা দরকার। শ্রেণিকক্ষটাকে ভাল ভাবে ব্যবহার করতে হবে। ওরা যেন নিজেদের নিয়ে ভাবতে শেখে। নিজেদের ভুল ত্রুটি নিজেরাই ধরতে পারে সেই ধরনের ক্ষমতা তার চরিত্রের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।
মহান দার্শনিক ‘রুশো’র সেই কথাটা মেনে চলা দরকার — ‘Child is a book and the teacher is to learn from page to page’ আমাদের ভূমিকা হবে ঘুড়ি এবং লাটাইয়ের মতো। আমরা যেন শিশুকে তার চিন্তার গগনে উন্মুক্ত বিহঙ্গের মতো বিচরণ করাতে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে পারি।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/16/2020