এ বারে একটু অন্য কথায় আসি। আমার বিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দু’ জন করে শিক্ষক নিয়ে প্রায় ২৫০ জন শিশুর পরিচর্যা করা দূরূহ হয়ে পড়েছিল। খারাপ লাগত সব শিশুর কাছে সময়ের অভাবে পৌঁছনো যেত না, সঠিক পদ্ধতিতে শ্রেণির পাঠ পরিচালনা করা যেত না। বহু ঘাটতি থাকত। স্বাভাবিক ভাবে উক্ত সময় কালে যে সকল শিশু শিক্ষার অঙ্গনে যুক্ত ছিল তারা কিছুটা ঘাটতি সঙ্গে নিয়ে বেড়ে উঠল। যার দায় কোনও ভাবে এড়াতে পারি না। তাই আমার মনে হয় শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষক থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।
আরও কিছু সমস্যা ও ঘাটতি দূর করা দরকার বলে মনে করি। যেমন — গ্রামীণ এলাকায় মিড ডে মিল অত্যন্ত কার্যকর। অপুষ্টির হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করা এবং বিদ্যালয়ে আসার মানসিকতা তৈরি করার এক শুভ প্রয়াস। সে জন্য এই প্রকল্পে আরও বেশি (বাজার দর অনুপাতে) অর্থ বরাদ্দ করা দরকার। যাতে আরও পুষ্টিকর খাবার শিশুরা পেতে পারে।
এই প্রকল্প সম্বন্ধে অভিভাবক সমাজকে ওয়াকিবহাল করা দরকার।
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষজনের এগিয়ে আসা দরকার। সকলের আন্তরিক শুভ প্রয়াস কাম্য।
এক জন শিক্ষক হিসাবে, সমাজের সুস্থ সচেতন অংশের প্রতিনিধি হিসাবে আরেকটি বিষয়কে তুলে ধরছি :
এত দিন ধরে শিক্ষার জন্য কোনও আইন কিংবা অধিকার ছিল না সে ক্ষেত্রে ‘ The Right of Children to free and compulsory education Act 2009’ চালু হয়েছে। ভাল কথা, কিন্তু এই আইনের বেশ কিছু অংশ আছে যা মনে হয়েছে প্রতিবন্ধক। প্রধান শিক্ষকদের মনে ভয়ভীতি ধরানোর অশুভ উদ্যোগ আমাদের মতো গরিব দেশে সুষ্ঠু শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। শিক্ষা থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আলদা করা, বিদেশি ও বেসরকারি পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, যা বন্ধ করা দরকার। এই আইনের ক্ষতিকারক দিকগুলি সংশোধন করে এটাকে সর্বজনীন করা দরকার।
পরিশেষে বলছি, আসুন যা পেয়েছি তাকে সংহত করে, সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহায়তায় শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলি এবং শিশুর গুণগত মান বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে উঠি।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020