পিছিয়ে পড়া ব্লক হিসাবে চিহ্নিত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় আমাদের এই কুলতলি ব্লক। সেই ব্লকের প্রত্যন্ত এক প্রান্তের একটি স্কুলে আমি সহশিক্ষকের পদে নিযুক্ত হই। আমার শিক্ষকতার জীবন মাত্র এক বৎসর কাল। শিক্ষকতা জীবনের এই স্বল্প অভিজ্ঞতায় আমি যা যা দেখেছি তা এখানে লিপিবদ্ধ করছি।
আমার ছাত্রজীবন কেটেছে খুব দারিদ্রের মধ্যে। কর্মজীবনে যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজে আসি, তখন দেখেছি খুব দরিদ্র বাড়ির কচিকাঁচারা আমাদের কাছে পড়তে আসে। তার মধ্যে বেশির ভাগই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। আমরা প্রথমে তাদের অ, আ চিনিয়ে দিয়ে তার পর প্রথম শ্রেণির ‘আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ’ ছড়াটি পড়াতে সক্ষম হয়েছি।
বিদ্যালয়ে ছাত্র উপস্থিতির হার বাড়ানোর ব্যাপারে মিড ডে মিলের একটা বড় ভূমিকা আছে। বিশেষ করে স্কুলে মধ্যাহ্নকালীন আহারের জন্যইছাত্ররা যেন আরও অনেক বেশি প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। যার ফলে বিদ্যালয়ে আসার তাদের যে অবহেলা ছিল তা অনেকটাই কেটেছে। বরং তারা এখন স্কুলে আসতেই বেশি আগ্রহী। সাথে সাথে বদলেছেন অভিভাবকরাও। বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর তাঁদের প্রবণতা বেড়েছে।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা অর্থাৎ Joyful learning পদ্ধতি বিদ্যালয়ে প্রয়োগ করায় বাচ্চাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। প্রথম শ্রেণিতে ইংরেজি ক্লাসে আমি যখন হাতে তালি দিয়ে বলি ‘Two little hands, Clap, Clap, Clap’ বাচ্চারা সহজেই বুঝতে পারে যে Clap মানে হাততালি দেওয়া। তারা A, B, C, D না শিখেও অনেক ইংরেজি শব্দ বলতে পারে।
সিলেবাস সম্পর্কে একটি প্রশ্ন আমার মধ্যে জেগেছে। সেগুলো এই অবসরে উপস্থাপন করছি। যেমন চতুর্থ শ্রেণির কিশলয় বইয়ের প্রথমেই পড়ানো হয় — ‘ভোম্বল সর্দার’। গল্পটা পড়ানোর শেষে কিছু ছাত্র আমাকে প্রশ্ন করল, স্যার, ভোম্বল তো লেবু চুরি করে পালাচ্ছে। আমি হেসে বললাম, এতে ভোম্বলের সাহসিকতা প্রকাশ পাচ্ছে। তখন মনে হল যে চতুর্থ শ্রেণির কিশলয় থেকে ভোম্বল সর্দার গল্পটি না রাখাই ভাল।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/8/2019