আমার মনে হয়েছে, প্রাথমিক সমস্যার অন্যতম বাধা অভিভাবকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। শিশুর বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসা না আসা অনেকটা নির্ভর করে তার পিতা মাতার অর্থনৈতিক অবস্থা ও চেতনার উপর। এ বিষয়ে আমি আমার বিদ্যালয়ের একটি ছেলে ও মেয়ের কথা বলি। গত ২০০৯ – ২০১০ শিক্ষাবর্ষে আমার বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির পাঠ শেষ করে নইম সেখ ও হাসিনা খাতুন পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আর বিদ্যালয়ে আসছিল না। — ছেলে য়ে দু’টি লেখাপড়ায় খুবই ভাল ছিল। আমি প্রথমে ওদের ডেকে পাঠালাম, কিন্তু ওরা এল না। আমি নিজে গিয়ে ওদের বাবা মায়ের সাথে কথা বললাম। তিনি বললেন পাঠিয়ে দেব, তার পরেও ওরা বিদ্যালয়ে এল না। আমি তখন এলাকার শিক্ষা অনুরাগী ব্যক্তি, পঞ্চায়েত সদস্য, এদের সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকের সাথে দেখা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমি অসুস্থ আমি কাজ করতে পারি না, আমি আমার ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ জোগাতে পারব না। তখন আমি বললাম, ওঁর ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য মাধ্যমিক অবধি সমস্ত খরচ আমি ও আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ মিলিত ভাবে বহন করব। তখন তিনি ওদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে রাজি হলেন। কিন্তু কিছু দিন বিদ্যালয়ে আসার পর ওরা আবার বিদ্যালয়ে আসা ছেড়ে দিল।
এই সময় আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম ছেলেটি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে হিসাবে কাজ করছে। এর পর মেয়েটি মায়ের সাথে বিড়ি বাঁধে। এর পর হঠাৎ এক দিন নইমের সাথে আমার দেখা হয়ে যায় এবং ও বলে স্যার আমাকে একটা ক্লাস ফাইভের ইংরেজি বই দেবেন — আমি বললাম, তুই বই নিয়ে কী করবি? ও বলল, পড়ব। আমি বললাম, তা হলে তুই স্কুলে গেলি না কেন? তখন ও বলল আমার দিদির বিয়ে দিতে হবে, ভাইকে পড়াতে হবে। তাই আমি কেরলে যাব রাজমিস্ত্রির সাথে কাজ করতে। আমি কী ভাবে স্কুলে যাব বলুন? আমি ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি।
তাই আমার মনে হয় আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হলেও এমন অনেক উন্নতি প্রয়োজন যা প্রাথমিক শিক্ষার স্বাভাবিক উন্নতি ঘটাবে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/29/2020