সকল শিশুকে শিক্ষার আঙ্গিনায় আনতে হলে প্রথমে শিশুর পরিবারের প্রত্যেককে শিক্ষাভিমুখী করে তোলাটাও আমাদের দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে বলে মনে করতে হবে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি সাক্ষরতা অভিযানের পর বিদ্যালয়ে শিশুভর্তির হার বেড়েছে। প্রথমে পরিবারকে সাক্ষর করা। শিশুর যেমন সহজাত শিক্ষা প্রসারিত করে অগ্রগতি ঘটানো হয় পরিবারের ক্ষেত্রেও তেমনি। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই ‘অশিক্ষিত’ বলে মনে করা ঠিক নয়। সেই পরিবারের এক জন মহিলাকে যদি বলা হয় দশ জন আত্মীয়কে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াব — কী কী দরকার। তিনি কিন্তু মুখে বলে দেবেন কত চাল, কত ডাল, কত মাছ, কত মশলা লাগবে। তাঁকে কি আমরা মুর্খ বা অশিক্ষিত বলতে পারি? যদি হাতে কলমের শিক্ষাকে শিক্ষা ধরি তবে তিনি শিক্ষিত। সেই প্রেরণাই তাঁর নিজের শিশুর শিক্ষাদানের আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং শিক্ষার অগ্রগতির সহায়ক হবে।
তবে শিক্ষাকে বাস্তবায়িত করতে উপযুক্ত পরিকাঠামো দরকার। কিন্তু এই কথাও স্মরণ রাখতে হবে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব বলেই যে পিছিয়ে থাকতে হবে সেই মনোভাব থাকলে চলবে না। অভাবকে পাথেয় করেই শিক্ষার অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখতে আমাদের সকলের ব্রতী হওয়া উচিত।
শিক্ষার পরিকাঠামো এমন হওয়া দরকার যে সমাজের সর্ব স্তরের মানুষের শিশুরাই সেই শিক্ষাব্যবস্থা সহজে পেতে পারে। অনেক প্রতিভাবান শিশুও উপযুক্ত সুযোগের অভাবে মুকুলেই ঝরে পড়ে। তা দেশের পক্ষে অতীব ক্ষতিকর। সেই শিক্ষাব্যবস্থা যাতে শাসক শ্রেণির লাভের পণ্য হিসাবে ব্যবহার করে না হয়। কারণ শিক্ষাই মানুষের চেতনা বাড়ায় আর সেই চেতনাই সমাজ, দেশের অগ্রগতি নিয়ে আসে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পঠনপাঠন নির্ভরশীল অনেকটা, যদিও বর্তমানে পুরোপুরি নয়। তাই পঠনপাঠনের ছড়া, কবিতা গল্প তা হওয়াই চাই সাধারণ মানুষের ব্যর্থতা পাশে দাঁড়ানোর মতো। লেখক তার লেখনীর মাধ্যমে মানুষের প্রেরণা দিতে পারে। দিতে পারে তার চেতনায়।
সেই প্রেরণাই স্বাধীনতা সংগ্রামের হাতিয়ার। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘মাটিতে যাদের ঠেকে না চরণ তারাই জমির মালিক হন’। সেই বাস্তববাদী লিখনেই মানুষের চেতনা আগিয়ে সমাজ পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই পাঠ্যপুস্তকের লিখনসামগ্রী যাতে মানুষের চেতনার উন্মেষ ঘটাতে সহায়ক হয় এমনটি হওয়া উচিত বলে মনে করি।
সেই শিক্ষাব্যবস্থা ছেলেমেয়ে সকলেই সম ভাবে গ্রহণ করতে পারে তার পরিকাঠামো হওয়া দরকার। সমাজের অর্ধেক মহিলা বঞ্চিত হওয়া মানে অগ্রগতি অর্ধেক হল। যদিও আমাদের সমাজব্যবস্থা পুরুষশাসিত তাই সমস্ত চিন্তাধারার ঊর্ধ্বে যাতে শিক্ষাব্যবস্থা স্থান পায় তাই আশা করি।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/18/2020