নবাবদের বাসভূমি বলে কথা। তার ওপর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের দাপট ও পরাজয় দেখেছে এই ভূমি। ফলে ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদের প্রতিটি ঘাসে।
গঙ্গার অপর পারে খোশবাগ, রোশনিবাগ শান্তস্নিগ্ধ পরিবেশে বিরাজ করছে। খোশবাগ হল আনন্দবাগিচা-সেখানে রয়েছে আলিবর্দি খাঁ, সিরাজদ্দৌলা, লুৎফাউন্নিসা সহ নবাব পরিবারের বিশিষ্টজনের সমাধিক্ষেত্র। রোশনিবাগের সুশোভিত উদ্যানে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন নবাব সিরাজদ্দৌলা এবং তাঁর পরিজনেরা। এই উদ্যানের মাঝে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে আলিবর্দি একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।
হাজারদুয়ারির দক্ষিণে মতিঝিল বিখ্যাত; শুধু সুরম্য লেকের জন্য নয়, লেকের ধারে ত্রিতল প্রাসাদের জন্য। প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন আলিবর্দির জ্যেষ্ঠ জামাতা নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খাঁ। পরবর্তী সময়ে এটিই ঘসেটি বেগমের প্রাসাদ বলে চিহ্নিত হয়ে যায়। ঘসেটি বেগমের সেই মতিঝিলের প্রাসাদও আজ নিশ্চিহ্ন। মতিঝিল মসজিদ লাগোয়া গুপ্তকক্ষেই রয়েছে ঘসেটি বেগমের সমাধি।
মুর্শিদাবাদের ১৪ কিমি দূরে বহরমপুর। বহরমপুরের প্রাচীন জনপদ হল সৈদ্যবাদ। এখানে এক সময় ফরাসি উপনিবেশ ছিল তাই অঞ্চলটির ফরাসডাঙা নামেই বেশি পরিচিত। তারও আগে এই অঞ্চলে আর্মেনিয়ানরা বাস করত। ১৭৫৮ সালে তৈরি সুবৃহৎ আর্মেনিয়ান গির্জাটি আজও অটুট রয়েছে। অনবদ্য অলংকরণ। গির্জার চত্বরে অনেকের সমাধি নজরে পড়ে। সৈদ্যবাদের রাজবাড়িটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও এর খিলানের অভিনবত্ব লক্ষ্য করা যায়। এখানে কয়েকটি শিবমন্দির উল্লেখযোগ্য। তার মধ্যে অন্যতম চারচালাবিশিষ্ট পঞ্চমুখী শিবমন্দির।
সৈদ্যবাদের রাজবাড়ির অদূরে রয়েছে কুঞ্জঘাটা রাজবাড়ি। নবাব মীরজাফরের দেওয়ান নন্দকুমারের জামাতার তৈরি। এই প্রাসাদটিও কালের কবলে পরলেও প্রাসাদসংলগ্ন দুর্গাদালান, শিবমন্দির, লক্ষ্মীনারায়ণের মন্দির এবং বৃন্দাবনচন্দ্র জিউর মন্দির এখনও রয়েছে।
মুর্শিদাবাদের অন্যান্য দ্রষ্টব্যের মধ্যে রয়েছে মদিনা মসজিদ, ঘড়িঘর, জগত শেঠের বাড়ি, হীরাঝিল, কদম শরীফ প্রভৃতি। মুর্শিদাবাদ থেকে মাত্র ৫৩ কিমি দূরে বিখ্যাত পলাশির আমবাগান। ১৭৫৭ সালে এখানেই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার পরাজয় ঘটে ব্রিটিশদের হাতে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020