৬৭ ই বিডন স্ট্রিট -- রামদুলাল দে (দেব সরকার)-র বাড়ির ঠিকানা এটাই। তিনি ছিলেন ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের পথিকৃৎ এবং প্রথম আধুনিক বাঙালি লাখপতি। তাঁর মার্কিন বাণিজ্যিক অংশীদাররা তাঁকে এতটাই সম্মান করতেন যে তাঁরা একটা জাহাজের নামকরণ করেছিলেন রামদুলাল দে-র নামে। জাহাজটি সালেম বন্দর (বোস্টনের কাছে) থেকে কলকাতা বন্দর পর্যন্ত বেশ কয়েক বার যাতায়াত করেছে। জর্জ ওয়াশিংটনের একটি চমৎকার আঁকা ছবিও তাঁকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে আসল বাড়ির একটি নাটমন্দির এবং কিছু ঝাড়বাতিই কেবল অবশিষ্ট আছে। ১৭৭০ সালে রামদুলাল দে এখানে দুর্গাপূজা শুরু করেন। পরবর্তীকালে এই পুজো তাঁর দুই ছেলের নামে নামাঙ্কিত হয়ে ছাতুবাবু-লাটুবাবুর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ছাতুবাবুর আসল নাম ছিল আশুতোষ এবং লাটুবাবুর আসল নাম ছিল প্রমথনাথ।
পোশাকি নাম আশুতোষ দেব এবং প্রমথনাথ দেব। এ নাম বললে প্রাথমিক ভাবে হয়তো এঁদের চিনতে একটু হোঁচট খেতে হতে পারে। কিন্তু এই নামের আড়ালেই লুকিয়ে আছেন চিরপরিচিত সেই মানুষ দু’টি— ছাতুবাবু এবং লাটুবাবু। পুরনো কলকাতার গল্পগাছা এই দুই ভাইকে বাদ দিয়ে নেহাতই অসম্ভব। বড় ভাই ছাতুর নাম আশুতোষ আর ছোট ভাই লাটুই হলেন প্রমথনাথ। কলকাতার ইতিহাসে ছাতুবাবু-লাটুবাবু বিখ্যাত হয়ে আছেন আরও একটি কারণে --- বুলবুলির লড়াইয়ের জন্য। কলকাতার বাবুদের অনেক রকম বিদঘুটে শখের একটি ছিল বুলবুলির লড়াই। অঢেল ঐশ্বর্যের মালিক ছাতুবাবুর ছিল খাঁটি বড়লোকের মেজাজ। বুলবুলির লড়াইয়ের প্রতি তাঁর এমনই অদম্য নেশা ছিল যে বাজি ধরে খেলতে গিয়ে ফতুর হতেও তাঁর আপত্তি ছিল না। ছাতুবাবু-লাটুবাবুদের নিজস্ব বুলবুলির সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। পাখিকে দানাপানি খাইয়ে প্রচুর টাকা ব্যয় করে যুদ্ধ কৌশল শেখানো হত। এমনকী বুলবুলির জন্মকুষ্ঠি নিয়েও চলত বিস্তর গবেষণা।
কলকাতার ইতিহাস নিয়ে যারা আগ্রহী তাদের কাছে এবং পর্যটকদের কাছে কলকাতার অন্যতম বেড়ানোর জায়গা এই বাড়িটি।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/2/2019