শিলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার খনিজের সমন্বয়ে সৃষ্ট ভূত্বক গঠনকারী কঠিন অথবা কোমল পদার্থ।উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে শিলাসমূহকে তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
আগ্নেয় শিলা- সৃষ্টির প্রথমে পৃথিবী জ্বলন্ত গ্যাসীয় অবস্থায় ছিল। ক্রমান্বয়ে তাপ বিকিরণ করে এবং উপরিভাগ শীতল ও কঠিন আকার ধারণ করে। এভাবে গলিত অবস্থা থেকে ঘনীভূত ও কঠিন হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে। পৃথিবীর প্রথম পর্যায়ে সৃষ্টি হয়েছে বলে এ শিলাকে প্রাথমিক শিলা এবং এ শিলার কোনো স্তর বা জীবাশ্ম নেই বলে একে অস্তরীভূত শিলাও বলে। যেমন-ব্যাসল্ট, গ্রানাইট, ফেলমাইট, সিয়েনাইট ইত্যাদি।
পাললিক শিলা- পলি সঞ্চিত হয়ে যে শিলা গঠন করে তা পাললিক শিলা। এ শিলায় পলি সাধারণত স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। পাললিক শিলা ভূ-ত্বকের মোট আয়তনের শতকরা ৫ ভাগ। কয়লা, চুনাপাথর, ডোলোমাইট, চার্ট, জিপসাম এসবই পাললিক শিলা। অন্যান্য শিলা ভেঙ্গেও অনেক সময় পাললিক শিলা গঠিত হয়। বিভিন্ন সময়ের পাললিল শিলার গঠন দেখে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর জলবায়ু ও পরিবেশের কি পরবর্তন হয়েছিল সে ইতিহাস বুঝতে পারেন।
রূপান্তরিত শিলা- তাপ ও চাপ বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আগ্নেয় বা পাললিক শিলার গঠন স্বাভাবিক ভাবে পরিবর্তিত হয়ে নতুন শিলায় পরিণত হতে পারে। এরূপ পরিবর্তিত হয়ে শিলাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমনঃ কয়লা, রুপান্তরিত হয়ে গ্রাফাইটে পরিণত হয়।
আবিষ্কার : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ
বিজ্ঞানী : চার্লস ডি ওয়ালকোট
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ‘বার্গেস কর্দমশিলা’ (বার্গেস শেল) আবিষ্কার করেন চার্লস ডি ওয়ালকোট -- তখন তিনি স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনে কর্মরত ছিলেন। কথিত আছে যে, তাঁর অশ্ব একটি বড় পাথরের সন্মুখে দাঁড়িয়ে যায়; পাথরটি ভেঙে পাওয়া গেল জীবাশ্ম। এই ভাবেই ‘বার্গেস কর্দমশিলা’ আবিষ্কৃত হয়। অবশ্য তখন তখনই এটি কোনও সমাদর পায়নি, যেটা হয়েছিল পঞ্চাশ বছর পরে ১৯৬০ সালে।
এই কর্দমশিলা পাওয়া গিয়েছিল কানাডার রকি পর্বতমালা এলাকার বার্গেস গিরিপথ-এ। হাডসন উপসাগরের মাঝামাঝি এক প্রাচীন স্থলভূমিতে (নাম লরেনসিয়া) রয়েছে বিভিন্ন রূপের জীবাশ্ম, বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশি জীবাশ্ম সঞ্চয়। জীবাশ্মগুলি সঞ্চিত হয়েছে দু’টি পর্বতের মধ্যস্থলের দু’টি খাতে জমা কর্দমশিলায়। উপরের খাতকে বলা হয় ‘ওয়ালকট কুয়ারি’ আর নীচেরটির নামকরণ হয়েছে ‘রেমন্ড কুয়ারি’। ১৯৮১ সালে ‘বার্গেস কর্দমশিলা’কে বিশ্ব ‘হেরিটেজ’ স্থলের আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
‘বার্গেস কর্দমশিলা’ হল ক্যামব্রীয় যুগের জীবাশ্মের সব থেকে ভালো দলিল। ৫৪৫ থেকে ৫২৫ মিলিয়ন বছর আগে ক্যামব্রীয় বিস্ফোরণ থেকে উদ্ভূত জন্তু জানোয়ারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ সময়ে জীবন মোটামুটি কেন্দ্রীভূত ছিল বিশ্বের মহাসমুদ্রে, ভূমি ছিল অনুর্বরা, বাসযোগ্যহীন এবং সদাই ক্ষয়প্রাপ্ত। এ ধরনের ভূতাত্ত্বিক অবস্থায় মাঝে মাঝেই কাদার ধস সাগরে পড়ে শৈবাল প্রাচীরের পাশে অবক্ষিপ্ত হয় ।
সূত্র : বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যা ও ব্যাক্তিত্ব : ডঃ শঙ্কর সেনগুপ্ত, বেস্টবুকস
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019