বিভাজন বা বিদারণ বলতে ঠিক কী বোঝায়? শব্দটা প্রাণীবিজ্ঞান থেকে নেওয়া, সেখানে বিভাজন মানে একটা জীবন্ত কোষের মোটামুটি সমান আকারে দু’টি ভাগে বিভক্ত হওয়া। মনে করো আমাদের কাছে ২০০ নিউক্লিয়ন-যুক্ত একটা নিউক্লিয়াস আছে এবং আমরা সেটাকে দু’টি সমান ভাগে ভাগ করতে পারি। এটা আমরা দু’টি ধাপে ভাবতে পারি।
প্রথম ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসকে ভাঙতে হবে এবং তার জন্য শক্তির প্রয়োজন। এর জন্য কতটা শক্তি লাগবে? আমরা বন্ধন শক্তির পরিমাণের দিকে লক্ষ্য করি। সেটা অনুযায়ী, ক=২০০ হলে নিউক্লিয়ন পিছু বন্ধন শক্তি খ হবে মোটামুটি ৭MeV । অতএব মোট বন্ধন শক্তি = কXখ= ৭X২০০= ১৪০০MeV। প্রথমটি করার জন্য এই পরিমাণ শক্তি আমাদের সরবরাহ করতে হবে।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে দু’টি নিউক্লিয়াস তৈরি করতে হবে। প্রতিটি থেকেই শক্তি নির্গত হবে। দেখা যাচ্ছে, ক= ১০০, খ থেকে নির্গত হবে মোটামুটি ৮MeV। অতএব প্রতিটি নিউক্লিয়াস থেকে নির্গত হবে ৮ক= ৮X১০০=৮০০ MeV, অতএব দু’টি নিউক্লিয়াস মিলিয়ে শক্তি নির্গত হবে ২X৮০০= ১৬০০MeV ।
অতএব, যে প্রক্রিয়ায় ২০০ নিউক্লিয়ন-যুক্ত একটি নিউক্লিয়াস যে প্রক্রিয়ায় ১০০ নিউক্লিয়ন-যুক্ত দু’টি নিউক্লিয়াসে বিভাজিত হয়, সেখানে দু’টি ধাপের বিয়োগফলের সমান পরিমাণের শক্তির প্রয়োজন হয়। অতএব প্রয়োজনীয় শক্তি ১৪০০-১৬০০ = -২০০MeV। - চিহ্নের অর্থ এই প্রক্রিয়ায় শক্তি নির্গত হয়।
এ বার সংক্ষেপে বলা যাক, একটি ভারী নিউক্লিয়াসকে ভাঙার জন্য আমাদের শক্তির (অনেক) প্রয়োজন। মাঝারি ভরের নিউক্লিয়াস তৈরির প্রক্রিয়ায় আরও বেশি শক্তি নির্গত হয়। তাই একটি ভারী নিউক্লিয়াস ভেঙে দু’টি মাঝারি ভরের নিউক্লিয়াস তৈরি হতে গেলে, সেই প্রক্রিয়ায় শক্তি নির্গত হয়। নিউক্লিয়ার বিভাজনে এ ভাবেই শক্তি উৎপন্ন হয়। সেই শক্তি দ্বারাই কলাপক্কমের মতোনি উক্লিয়ার চুল্লির ক্ষমতার জোগান হয় বা পোখরান ও চাগাই-এর মতো নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ হয়। হাল্কা নিউক্লিয়ারের বন্ধন শক্তি লক্ষ করে আমরা একটা অন্য কথা বলতেই পারি, যখন দু’টো হাল্কা নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে (যেমন হাইড্রোজেন) একটা একটু ভারী নিউক্লিয়াস তৈরি করে, তখন আবারও শক্তি নির্গত হয়। এই হল শক্তি উৎপাদন ও মিশ্রণ বিক্রিয়ার ভিত্তি। বিভাজনের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটে: সর্বনিম্ন স্তরে ক–এর পরিমাপ করা হয়, ক-এর সঙ্গে সঙ্গে খ-ও বাড়তে থাকে এবং উপরের যুক্তি ব্যবহার করেই দেখানো যায়, যত শক্তি শোষিত হয়, তার চেয়ে বেশি নির্গত হয়। এ ভাবেই সূর্যে শক্তি উৎপন্ন হয়ে থাকে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020