যাঁরা জ্ঞানসাধনার সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করেন, তাঁরা দেশ, কাল, জাতি ও ধর্মের গণ্ডির বহু ঊর্ধ্বে। মানুষমাত্রই তাঁদের আপনজন ভেবে গর্ব অনুভব করে। আরবিতে ‘শেখ’ শব্দে অভিজ্ঞ ও দূরদর্শী জ্ঞানবৃ্দ্ধকে বোঝায়। ইবনে সিনাকে ‘আল-শেখ আল-রইস’ বা জ্ঞানীকুলের শিরোমণি বলা হয়। অতএব জগতের জ্ঞানসাধকদের মধ্যে ইবনে সিনার স্থান কত ঊর্ধ্বে তা সহজেই অনুমেয়। এই ‘শেখুল-রইস’ আবু আলি হোসেন ইবনে সিনা বুখারা বা বর্তমান উজবেকিস্তানের অন্তর্গত ‘আফসানা’ নামক স্থানে ৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ও মাতা সিতারা উভয়ে ছিলেন ইরানি। ফলে তাঁর মাতৃভাষা খাস ইরানি এবং আধুনিক ফারসি ভাষায় তিনি বহু কবিতা ও কয়েকটি ক্ষুদ্র গ্রন্থও রচনা করেছিলেন। কিন্তু আল-বিরুনি প্রমুখ সমসাময়িক মহামনীষীর মতো আরবি ভাষাকেই আপন চিন্তাধারা প্রকাশের বাহন হিসাবে সম্পূর্ণ রূপে গ্রহণ করেছিলেন। ইবনে সিনার পিতা আবদুল্লাহ ছিলেন বুখারার শাসনকর্তা। তিনি পুত্রের উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ইবনে সিনের স্মৃতিশক্তি ছিল যেমন অসাধারণ, তেমন তাঁর বুদ্ধিও ছিল অসামান্য। মাত্র দশ বছর বয়সেই তিনি কোরান শিক্ষা করেন ও দুরূহ আরবি ভাষা আয়ত্ত করেন এবং অতি অল্প বয়সেই তিনি সর্ববিদ্যায় বিশারদ হয়ে ওঠেন। আরবিতে ‘হাকিম’ শব্দে জ্ঞানী, দার্শনিক ইত্যাদি বোঝায়। ইবনে সিনা কৈশোরেই ‘হাকিম’ উপাধিতে ভূষিত হন। প্রসিদ্ধ জীবনীলেখক ইবনে খল্লিকান বলেন, “মাত্র ষোল বত্সর বয়সেই ইবনে সিনার নিকট মশহুর চিকিত্সাবিদগণ চিকিত্সাশাস্ত্র ও তাঁর অভিনব চিকিত্সাপ্রণালী শিক্ষা করতে আসতেন।” এই ষোল বছর বয়সেই ইবনে সিনা বুখারার সামানিদ সুলতান নূহ ইবনে মনসুরের (৯৭৬-৯৯৭ খ্রি) এক কঠিন রোগ নিরাময় করেন ও তাঁর রাজচিকিৎসক নিযুক্ত হন। সুলতান তাঁকে তাঁর বিখ্যাত সুবৃহৎ কুতুবখানা ব্যবহার করার অনুমতিও দেন।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/20/2020