গ্রহ-নক্ষত্র বা মহাকাশ নিয়ে মানুষ গবেষণা করছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই গবেষণায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রহ। উদ্ঘাটিত হচ্ছে নানা ধরনের তথ্য। এ কথা অনস্বীকার্য যে মহাকাশ গবেষণায় বিপ্লব এনে দিয়েছে টেলিস্কোপ আবিষ্কার। তবে টেলিস্কোপ আবিষ্কারের আগেও যে সব জ্যোতির্বিজ্ঞানী মহাকাশ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন টাইকো ব্রাহে। বলা হয়ে থাকে তাঁর হাত ধরেই স্থাপিত হয় আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূলভিত্তি। টেলিস্কোপ আবিষ্কারের আগে কোপার্নিকাসের মতবাদে বিশ্বাসী, ডেনমার্কীয় এই জ্যোতির্বিজ্ঞানীর গণনাই ছিল সবচেয়ে নিখুঁত। টেলিস্কোপ যন্ত্রটির বয়স চারশো বছর। এই চারশো বছরে জ্যোতির্বিজ্ঞানকে এগিয়ে নেওয়ার পেছনে টেলিস্কোপের অবদান অনেক। টেলিস্কোপের সাহায্যেই বিজ্ঞানীরা সমাধান করেছেন মহাকাশের অনেক অজানা রহস্য।
আবিষ্কার করেছেন নতুন নতুন গ্রহ-নক্ষত্র। প্রথম টেলিস্কোপ আবিষ্কার করার কৃতিত্ব টাইকো ব্রাহের। ১৬০৮ সালে গ্যালিলিও একটি টেলিস্কোপ তৈরি করেন। গ্যালিলিওর মৃত্যুর পর আইজ্যাক নিউটন টেলিস্কোপ নিয়ে কাজ করেন। পৃথিবীতে বর্তমানে দুই ধরনের টেলিস্কোপ ব্যবহূত হয়—প্রতিফলন ও প্রতিসরণ।
১৫৪৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ডেনমার্কের স্কেনিয়ায় জন্ম ব্রাহের। বাবার ধন-সম্পত্তির অভাব না থাকলেও ঘাটতি ছিল প্রকৃত শিক্ষায়। তাই ছোটবেলা থেকেই ব্রাহের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন তার এক কাকা। বিশ্বখ্যাত এই জ্যোতির্বিজ্ঞানীর প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আইনশাস্ত্র নিয়ে। তবে আইন নিয়ে পড়ার সময় একটি পূর্ণ গ্রাস সূর্যগ্রহণ তাঁর জীবনের মোড় পাল্টে দেয়। সূর্যগ্রহণের ফলে দিনের বেলায় সূর্য অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় দারুণ বিস্মিত হন ব্রাহে। এ ছাড়া মহাকাশ গবেষণায় তাঁকে উত্সাহ জুগিয়েছিলেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক গণিত শিক্ষক। তাঁর সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর লেখা বই বলতে যা ছিল তা হল টলেমির আলম্যাগেস্ট। ১৫৪৬ সালে লেখাপড়া শেষ করে ব্রাহে বেরিয়ে পড়েন ইউরোপ ভ্রমণে। এর পর নিজ শহরে তিনি স্থাপন করেন একটি মানমন্দির। এ মানমন্দির থেকেই তিনি সর্ব প্রথম আবিষ্কার করেন ধ্রুবতারা। মূলত এর ফলেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। এ আবিষ্কারের ফলে জার্মানির সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডরিক তাঁকে গবেষণার কাজে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। দ্বিতীয় ফ্রেডরিকের সহযোগিতায় ডেনমার্কের ভেন দ্বীপে তিনি বেশ বড় আকারের একটি মানমন্দির স্থাপন করেন। এটিই হয়ে উঠেছিল তত্কালীন মহাকাশ গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু। ১৫৮৮ সালে দ্বিতীয় ফ্রেডরিকের মৃত্যু হলে এ সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। এর বেশ কিছু দিন পর মহাকাশ গবেষণায় ব্রাহেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন চেকোস্লোভাকিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় রুডল্ফ। ১৬০১ সালের ২৪ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/27/2020