ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিমের জন্ম ১৯১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর, মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার খাঁড়েরা গ্রামে। তিনি ৪ ভাই-বোনের মধ্যে বড় সন্তান। তালপাতায় কয়লার কালি দিয়ে বাঁশের কঞ্চির কলম দ্বারা বর্ণমালা লেখার হাতেখড়ি দেন গৃহশিক্ষক হযরত উল্লাহ খান। তখনকার দিনে গৃহশিক্ষককে ওস্তাদজি বলে ডাকা হত। ওই ওস্তাদজির কাছে তিনি বাংলা মাধ্যমে পড়া শেষ করে এডওয়ার্ড ইংলিশ হাই স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। আইএসসি পাশ করে কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হন।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ১৯৩৯-৪৫ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন।
১৯৪৬ সালে তিনি এমআরসিপি কোর্সে উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে যান। সেখান থেকে দেশে এসে যক্ষ্মা রোগের উপর গবেষণা করেন এবং আরও বেশি অভিজ্ঞতার জন্য ১৯৪৯ সালে ডেনমার্কে যান। দেশে এসে তিনি ১৯৫৬ সালে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তান সরকার তাঁকে আটকে রাখে। অবশেষে হজে যাওয়ার সূত্র ধরে মক্কা থেকে লন্ডনে গিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৫ সালের ৪ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্ঠা হিসেবে তিনি নিযুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে ডায়াবেটিক সমিতির জন্য শাহাবাগে জায়গা পান। এর পূর্বে তিনি সারা দেশে থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডায়াবেটিক চিকিৎসাকে যুক্ত করে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ওই জায়গায় ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেন। শাহাবাগে নির্মিত হয় বার্ডেম হাসপাতাল। ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম ১৯৫৬ সালে টিনশেটে ৩৯ জন রোগী নিয়ে এ হাসপাতাল বানানোর যাত্রা শুরু করেছিলেন। যা ১৯৮২ সাল থেকে শুরু করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃত। গরিব-মেহনতি মানুষের জন্য সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠাসহ চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানীই ছিলেন না, এক জন সমাজবিজ্ঞানীও ছিলেন। তিনি ১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান।
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/20/2020