আমরা জানি যে পদার্থ তৈরি পরমাণু দিয়ে, যার কেন্দ্রকে রয়েছে নিউট্রন এবং প্রোটন আর এই কেন্দ্রক ঘিরে রয়েছে ইলেকট্রন। প্রোটন কিংবা নিউট্রন কিন্তু মৌলিক কণা নয়, কারণ দেখা গেছে যে এদের ভেঙে পাওয়া যায় আরেক ধরনের মৌলিক কণা— যার নাম কোয়ার্ক। কণা পদার্থবিদরা দেখিয়েছেন যে আমাদের বিশ্বের মৌলিক কণাগুলিকে ১২টি ভাগে ভাগ করা যায়, যাদের মধ্যে রয়েছে ৬টি কোয়ার্ক ও ৬টি লেপ্টন। আমাদের পরিচিত ইলেকট্রন ঐ লেপ্টন কণার একটি। আর ঐ কোয়ার্ক মৌলিক কণা দিয়ে যে কণাগুলি গঠিত, তাদের বলে হ্যাড্রন। প্রোটন, নিউট্রন কণাগুলি সব হ্যাড্রন প্রজাতির কণা। যে বলটি দিয়ে এই কোয়ার্ক বাঁধা রয়েছে প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে, সেটিই দৃঢ় বল। এই দৃঢ় বলের বাহক হচ্ছে আরেকটি কণা, নাম তার গ্লুয়ন। কোনও কোয়ার্ক বা গ্লুয়নকে আলাদা ভাবে দেখা যায় না প্রকৃতিতে, এরা সব সময় বাঁধা পড়ে রয়েছে প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি কণাদের মধ্যে। দৃঢ় বলের বর্তমান তত্ত্ব, যাকে কোয়ান্টাম ক্রমোডিনামিক্স-ও (quantum chromodynamics) বলা হয়, তা থেকে জানা যায় যে অত্যন্ত বেশি তাপমাত্রায় ও প্রবল ঘনত্বের পরিস্থিতিতেই একমাত্র কোয়ার্ক ও গ্লুয়নকে প্রোটন কিংবা নিউট্রন কণার বাইরে আলাদা ভাবে পাওয়া সম্ভব। এই প্রবল তাপমাত্রা ও ঘনত্বের মধ্যে যে অবস্থায় তা থাকবে তাকে বলা হয় কোয়ার্ক গ্লুয়ন প্লাসমা। যদিও দেখা গেল যে ঐ চরম অবস্থার সৃষ্টি করা বর্তমান বিশ্বে প্রায় অসম্ভব। কিন্তু ‘বিগ ব্যাং’-এর পরে অবশ্যই এ রকম একটা অবস্থা ছিল, যখন আমাদের মহাবিশ্ব ঐ অতি উত্তপ্ত ও চরম ঘনত্বের অবস্থায় ছিল। তাই মনে করা হয় যে ঐ মুহূর্তে মহাবিশ্বে কেবল অস্তিত্ব ছিল কোয়ার্ক গ্লুয়ন প্লাসমার। এখনকার সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে আমরা এত দিনে জেনে গেছি যে ইউরোপের সার্ন (CERN বা European Organization for Nuclear Research) গবেষণাগারে এক বিরাট পরীক্ষা চলছে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার নামক এক যন্ত্রে। কণা পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন না-জানা বিষয়ের ওপর চলছে এই বিশাল কর্মকাণ্ড। ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের সীমানায় মাটির নীচে ২৭ কিলোমিটার পরিধির এক সুড়ঙ্গে মূল ৪টি আলাদা আলাদা detector-এ চলছে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা। এর মধ্যে ALICE বা A Large Ion Collider Experiment নামক detectorটির উদ্দেশ্য মহাবিশ্বের আদিতম অবস্থা কি ছিল তা দেখা। শুনতে খুব আশ্চর্যজনক মনে হলেও এই ঘটনা দেখা সম্ভব বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করেন। লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার-এ প্রায় আলোর গতিবেগের কাছাকাছি বেগে দু’টি ভারী কেন্দ্রকের (যেমন লেড পরমাণুর কেন্দ্রক) মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটিয়ে খুব কম আয়তনে (একটি পরমাণুর কেন্দ্রকের সমান আয়তন) ও খুব কম সময়ের জন্য মহাবিশ্বের ওই চরমতম অবস্থা তৈরি করা সম্ভব যেখানে পাওয়া যাবে কোয়ার্ক গ্লুয়ন প্লাসমা।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/28/2020