অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

বাদুড়ের বাঁদরামি

বাদুড়ের বাঁদরামি

পশুজগতের অনেক প্রাণীর শ্রবণশক্তি আমাদের তুলনায় প্রখর, কিন্তু বাদুড়ের কেসটা একেবারেই আলাদা। সে নিজের ডাকের প্রতিধ্বনি শুনে ঠাওর করতে পারে, মক্কেল কত দূরে, কী তার গতি। আলোর দৌলতে আমরা যতটা স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করি, বাদুড় ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে এই প্রতিধ্বনির সাহায্যে হয়ত একটু বেশিই করতে পারে। ছোঁ মেরে পোকা ধরতে পারে নিমেষের মধ্যে, এতটাই নিখুঁত তাদের দিশা-নির্ধারণ ক্ষমতা। শ্রবণ, দৃষ্টি — এই কথাগুলো গুলিয়ে যায় বাদুড়দের কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলে।

এদ্দূর শুনে খোকন নিশ্চই এ বার প্রশ্ন করবে — সে তো হল, কিন্তু এক জাতের অনেকগুলো বাদুড় এসে জুটলে তখন ? রামবাদুড় ডাক ছাড়ল আর শ্যামবাদুড় তার প্রতিধ্বনি শুনে বুঝে গেল লক্ষ্য কোথায়, এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। শ্যামকে অন্তত নিজের ডাক ফেরত পেতে হবে। কিন্তু শ্যাম বোঝে কী করে কোনটা নিজের ডাক আর কোনটা রামের ? এক জাত হলেও সবার ডাক কি তা হলে আলাদা আলাদা ?

দেখা যায়, ঠিক তা নয়। একটা বাদুড় নিজের ডাকের মাপজোখ — বিভিন্ন কম্পাঙ্কে (ফ্রিকোয়েন্সি) কতটা প্রসার (অ্যামপ্লিচ্যুড) — সেটা পালটাতে পারে যাতে জাতভাইয়ের সাথে তার ডাক ঘেঁটে না যায়। এই নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। একে বিজ্ঞানীদের ভাষায় বলে, ‘jamming avoidance response’। সেলফোনের সিগনাল যেমন জ্যাম করে দিলে সেটা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে যায়, বাদুড়ের-ও সেই দশা। তাই বিবর্তনের সাথে সাথে তাদের জ্যামিং এড়ানোর ক্ষমতাও গজিয়েছে।

এ বার প্রশ্ন হল, স্বেচ্ছায় বাদুড় যখন নিজের ডাক পালটাতে পারে জ্যামিং এড়াতে, তখন উল্টোটা হতেই বা বাধা কোথায় ? ইচ্ছে করে অন্য বাদুড়ের ডাক ঘেঁটে দিয়ে তাকে শিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজে থাবা বসাতেই বা দোষ কী ?

দুই বিজ্ঞানী — অ্যারন করকোরান ও উইলিয়াম কনার — এই প্রশ্নটা তুললেন। একটা বিশেষ প্রজাতির বাদুড় — মেক্সিকান ফ্রি-টেলড বাদুড় (T. Brasiliensis) — নিয়ে তাঁরা গবেষণা করছিলেন। এই প্রজাতির বিশেষত্ব হল : প্রতিধ্বনি-ভিত্তিক দিশা-নির্ধারণ ক্ষমতা আছে এমন প্রজাতির মধ্যে এদের কলোনিতেই বাদুড়সংখ্যা সব থেকে বেশি। তাই বাদুড়দের সামাজিক আচরণগুলি লক্ষ করার সুযোগ-ও বেশি।

অন্তত খান পনেরোটা আলাদা ধরনের ডাক এই প্রজাতির মধ্যে তাঁরা সনাক্ত করতে পারলেন। তার মধ্যে বিশেষ একটা ডাক নিয়ে আগে পড়াশোনা হয়নি। এর বর্ণচ্ছটার চরিত্র দেখে এর নাম দেওয়া হলো sinFM ডাক। প্রাথমিক কিছু পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেল — এই ডাকটা তখনই বার হয় যখন অন্য কোনও বাদুড় খুব দ্রুত একের পর এক ডাক ছাড়ছে। অর্থাৎ শিকারের পেছনে ধাওয়া করছে। এই দ্রুত ডাক ছাড়া কে বলে ‘ফিডিং বাজ’। বিজ্ঞানীদের মনে প্রশ্ন জাগল — এই sinFM ডাক-এর উদ্দেশ্য কী? প্রতিযোগী বাদুড়কে চমকে দেওয়া? ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা ? নাকি এই sinFM ডাক প্রতিযোগী বাদুড়ের ‘ফিডিং বাজ’-কে ঘেঁটে দিতে পারে?

অনেকগুলো জিনিস লক্ষ করা গেল, যাতে মনে হয় শেষেরটাই। sinFM ডাক আর প্রতিযোগী বাদুড়ের ‘ফিডিং বাজ’, একে অপরের সাথে তাল মিলিয়ে চলে। যেমন, sinFM ডাকের একটা পুরো চক্কর প্রতিযোগী বাদুড়ের ডাক ছাড়া আর প্রতিধ্বনি শোনা, এই সময়টুকুর মধ্যে গুঁজে দেওয়া যায়। তার পর sinFM ডাকের বর্ণচ্ছটার চরিত্র প্রতিযোগী বাদুড়ের ডাক জ্যাম করে দেওয়ার জন্য আদর্শ।

এর পর বিজ্ঞানীরা একটা মজার পরীক্ষা করলেন। sinFM ডাক রেকর্ড করে বাদুড়ের শিকারকালে চালিয়ে দেখলেন কী হয়। দেখা গেল, বাদুড়ের ‘ফিডিং বাজ’-এ কোনও ফারাক হয় না sinFM ডাক চালালে। অথচ শিকার ধরার সাফল্য কমে যায় প্রায় ৭০ শতাংশ। অর্থাৎ ওই ডাকে বাদুড় ভয় পায় না, ঘাবড়েও যায় না। ক্রমাগত ডাক ছেড়ে যায়, অথচ প্রতিধ্বনি ঘেঁটে যাওয়ায় শিকার ঠাওর করতে পারে না।

আর একটা পরীক্ষা করলেন বিজ্ঞানীরা। sinFM-এর বদলে একই কম্পাঙ্কের শব্দ এবং সব কম্পাঙ্কের খিচুড়ি একটা কোলাহল-মার্কা শব্দ, এই দুটো চালালেন বাদুড়ের শিকার ভাঙতে। শিকারের সাফল্যে কোনও হেরফের হল না। অর্থাৎ sinFM ডাক শুধু চমকে ধ্যানভঙ্গ করে তা-ই নয়। তা হলে ধ্যানভঙ্গ এতেও হত। শিকার ধরার সাফল্য কমতো।

সব মিলিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন তারা যে মেক্সিকান ফ্রি-টেলড প্রজাতির বাদুড় জেনেবুঝে তার জাতভাইয়ের ভাত মারার তোড়জোড় করে। তার সিগনাল জ্যাম করে পারতপক্ষে কিছুক্ষণের জন্য অন্ধই করে দেয় তাকে। আরও গবেষণার প্রয়োজন। তবে এই সিদ্ধান্ত যদি ঠিক হয়, তা হলে পশুসমাজে এই ভাবে প্রতিযোগীর ইন্দ্রিয়ের সাথে ছিনিমিনি খেলার উদাহরণ বোধহয় এই প্রথম।

ছবি: National Geographic

সূত্র: অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়, ম্যাথওয়ার্কস (ম্যাসাচুসেটস), bigyan.org.in

সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/14/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate