মেঘনাদ সাহা এফআরএস (অক্টোবর ৬, ১৮৯৩ – ফেব্রুয়ারি ১৬, ১৯৫৬) ছিলেন একজন জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিজ্ঞানে থার্মাল আয়নাইজেসন তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিখ্যাত। তাঁর আবিষ্কৃত সাহা আয়োনাইজেসন সমীকরণ নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মাবলি ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হয়।
শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয় – সমগ্র বিজ্ঞানের জগতে আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে উঠেছে যে ক’জন মানুষের মৌলিক তত্ত্বের ওপর – অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা তাঁদের অন্যতম। ১৯২০ সালে মেঘনাদ সাহার তাপীয় আয়নায়নের সমীকরণ (আয়নাইজেশান ইকুয়েশান) প্রকাশিত হবার পর থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে যত গবেষণা হয়েছে তাদের প্রায় সবগুলোই সাহার সমীকরণ দ্বারা প্রভাবিত। নরওয়ের বিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী সেভিন রোজল্যান্ড অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত “থিওরেটিক্যাল এস্ট্রোফিজিক্স” বইতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন এ’কথা। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের পারমাণবিক তত্ত্ব থেকে শুরু করে বিগ-ব্যাং তত্ত্বের পরীক্ষণ পর্যন্ত সহজ হয়ে উঠেছে যে যন্ত্রের উদ্ভাবনের ফলে – সেই সাইক্লোট্রনের উদ্ভাবক নোবেল বিজয়ী আর্নেস্ট লরেন্স সহ অসংখ্য বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অর্জন করেছেন মেঘনাদ সাহা তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে।
মেঘনাদ সাহার জন্ম ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার কাছে শ্যাওড়াতলি গ্রামে। গরিব ঘরে জন্ম তাঁর। বাবা জগন্নাথ সাহা ছিলেন মুদি। অর্থাভাবে বহু প্রতিকূলতার মাঝে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে তার স্কুলশিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং পরে ঢাকা কলেজে অধ্যায়ন করেন। তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও প্রশান্তচন্দ্র মহালনবিশের সহপাঠী এবং আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন। ধর্মীয় মতাদর্শে তিনি ছিলেন নাস্তিক।
মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা বিষয়ে গবেষণা করেন। তাপীয় আয়নবাদ (Thermal Ionaisation) সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। মেঘনাদ সাহা সম্পর্কে আলবার্ট আইনস্টাইনের উক্তি: ‘Dr M.N Shaha has won an honoured name in the whole scientific world’
সূত্র : বিশ্বের সেরা ১০১ বিজ্ঞানীর জীবনী, আ. ন. ম. মিজানুর রহমান পাটওয়ারি, মিজান পাবলিশার্স, ঢাকা
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/25/2019