নাগাল্যান্ড রাজ্যে নাগা উপজাতির অন্তত ষোলটি প্রধান সম্প্রদায় বসবাস করে —আঙ্গামি, আও, চাকেসাং, কোনিয়াক, কুকি, কাচারি, সুমি, চাং, লোথা, প্রচুরি, তাংগুল প্রভৃতি। এই প্রতিটি উপজাতির নিজের নিজের উত্সব রয়েছে। এই উপজাতি গোষ্ঠীগুলির প্রধান প্রধান উত্সবকে একই সময়ে একই জায়গায় অনুষ্ঠিত করার জন্য নাগাল্যান্ড সরকারের উদ্যোগে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে পাঁচ তারিখ কোহিমাতে অনুষ্ঠিত হয় ‘হর্ণবিল উত্সব’। কিছুটা কৃত্রিমতা থাকলেও এই উত্সবের নাগাদের উত্সবের বৈচিত্র্যকে অনুভব করা যায়। প্রায় প্রত্যেক উপজাতি এই উত্সবে তাদের প্রধান উত্সবের সঙ্গে সম্পৃক্ত পোশাকে সজিজ্ত হয়ে সেই উত্সবের নাচ গান পরিবেশন করেন।
আও নাগারা মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই উত্সবে মেতে ওঠেন। মাঠ পরিষ্কার করা, জঙ্গল পুড়িয়ে সাফ করা, বীজ বপন করার মতো পরিশ্রমের কাজের মরশুম শেষ হলে আনন্দের এই তিন দিনের উত্সব অনুষ্ঠিত হয়। নানা রকম আচারঅনুষ্ঠানে ভরা এই উত্সবে আও নাগারা ‘পেপ্পি’ নাচ ও গান করেন। এ ছাড়া একটি প্রতীকী অনুষঠান হয় ‘সাংপাংটু’। এতে আগুন জ্বেলে সেই আগুনকে ঘিরে পুরুষেরা তাদের পরম্পরাগত পোশাকে সজ্জিত হয়ে বসেন আর মেয়েরা মদ ও মাংস পরিবেশন করেন। সেখানে প্রধান জ্ঞানী ব্যক্তি উত্সবকে পর্যবেক্ষণ করে আগামী দিনগুলো গ্রামের মানুষের কেমন যাবে সে বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেন।
আঙ্গামী ক্যালেন্ডারের ‘কেজোই’ মাসের পঁচিশতম দিনে আঙ্গামী নাগা উপজাতি গোষ্ঠী এই উত্সব পালন করেন। উত্সবের প্রথম দিনে পুরুষেরা গ্রামের কুয়োয় স্নান করেন — এর পর কুয়ো পরিষ্কার করা হয়। লক্ষ রাখা হয় কুয়ো পরিষ্কার হওয়ার পর আর তা থেকে যেন জল না তোলা হয়। দ্বিতীয় দিনে শোভাযাত্রা করে গ্রামের যুবকেরা সেই কুয়োয় গিয়ে আনুষ্ঠানিক স্নান করে একটি সাদা ও একটি কালো শাল পরেন। এর পর তাঁদের বুকে, ডান বাহুতে ও হাঁটুতে জল ছেটানো হয় — একে বলা হয় ‘জুসেভা’। কুয়ো থেকে ফেরার পর একটি মুরগিকে বলি দেওয়া হয় এবং তার নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদি বাড়ির বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর পর তিন দিন ধরে চলে নাচ গান। সপ্তম দিনে গ্রামের যুবকেরা শিকারে বের হন। উত্সব চলাকালীন চাষবাস সমেত সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ থাকে।
ফেব্রুয়ারি মাসে, সারা বছরের জন্য চাষ শুরু করার আগে, দশ দিন ধরে পোচুরি নাগা উপজাতি গোষ্ঠী নাজু উত্সব পালন করেন এবং অত্যন্ত জাঁকজমক পূর্ণ ও বর্ণাঢ্য এই উত্সবে নানা রকমের নাচগানে মেতে ওঠেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘খুপাইলিলাই’ নাচ। মহিলারাই এই নাচে অংশ নেন। নাচের জন্য বিশেষ পোশাক আছে — মাথায় পরার জন্য ‘আসকুনাই’, বুক থেকে পা মেখলা’ ‘কীলেনিনাই’, কোমরে মেখলার উপরে হারের মতো গয়না ‘আচুলরে’, বাহু ও হাতে পরার জন্য ‘আখি’ ও ‘আখুসা’ আর গলায় ‘আসকার’ নামক হার। দলবদ্ধ ভাবে গান ও বাজনার ছন্দে নাচ জমে ওঠে। উত্সব শেষ না হওয়া পর্যন্ত চাষের কাজ শুরু হয় না।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/18/2020