হোলির সঙ্গে দানবী হোলিকার সংযোগ নিয়ে আর একটু বলা দরকার। দৈত্য প্রহ্লাদের গল্পে হোলিকার খুবই গুরুত্ব আছে। হোলিকা হিরণ্যকশিপুর বোন, প্রহ্লাদের পিসি। তার পোশাক ছিল ‘ফায়ারপ্রুফ’। শিশু প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে হোলিকা আগুনে প্রবেশ করেছিল, কারণ সে জানত সে পুড়বে না, কিন্তু ভাইপো দগ্ধ হয়ে যাবে। হল অবশ্য উল্টো— তার পোশাকের মাহাত্ম্য অন্তর্হিত হল, আর নারায়ণের করুণায় তাঁর ভক্ত প্রহ্লাদ অক্ষত দেহে আগুন থেকে বেরিয়ে এল। প্রসঙ্গত, হোলিকা বাচ্চাদের খেয়ে ফেলে, শিশুমাংস তার ভারী প্রিয়। পণ্ডিতরা হোলিকা দহনকে প্রতীক রূপে দেখেন। রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের প্রতীক। বছরের এই সময়টাতেই তো যত রকমের রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে এবং তার প্রধান বলি হয় ছোট শিশুরা। অন্য গল্পটা কামদেবকে নিয়ে। শিবের রোষানলে তিনি দগ্ধ হয়েছিলেন। সেই দাহও হয়তো বা প্রতীকী— উদ্দাম হোলিখেলার মধ্যে কামনাবাসনার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, সেটা দমন করার জন্যই আগুনের কল্পনা; যদিও, সত্যি বলতে কী, ঠান্ডা জলেও কাজ হত। মধ্যযুগ থেকে শুরু করে ইউরোপীয় পর্যটকরা পর্যন্ত বাইরের লোকেরা হোলির একটা ব্যাপার নজর করেছেন, সেটা হল অশ্লীল গান গাওয়ার প্রথা। নানা হিন্দু গ্রন্থেও এ নিয়ে স্পষ্ট ভাবে লেখা হয়েছে। ১৮৮০’র দশকে উইলিয়ম ক্রুক কিংবা একশো বছর আগে এম এম আন্ডারহিল এই অশালীন ভাষার কথা উল্লেখ করেছেন। বস্তুত, বিভিন্ন প্রাচীন স্মৃতি’তে বলা হয়েছে, এই উৎসব শ্রীচৈতন্যের কয়েক শতাব্দী আগেও প্রচলিত ছিল, তাতে নিম্নবর্ণের মানুষ ভয়ানক অশ্লীল সব কথাবার্তা বলত। এর থেকে দুটো ব্যাপার বোঝা যায়: এক, এই উৎসবে নিহিত যৌন ইঙ্গিত এবং দুই, এর প্রাগার্য ইতিহাস। আন্ডারহিল লিখেছেন, ‘নিম্নবর্গের পুরুষ ও বালকদের নাচ এই উৎসবের একটা বৈশিষ্ট্য’। একই সঙ্গে তিনি লক্ষ করেছেন যে, হোলি সব বর্ণের মানুষকে এক সঙ্গে আনত। তিনি প্রাচীন শাস্ত্রবচনের সাক্ষ্য দিয়ে লিখেছিলেন, ‘হোলির দ্বিতীয় দিনে নিম্নবর্ণের মানুষের দেহ স্পর্শ করে তার পর স্নান করলে সমস্ত অসুখ দূর হয়ে যায়।’ এটা কি আসলে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা, মানে ইমিউনিটি গড়ে তোলা?
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ৫ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/2/2020