নিজেকে বাঁচাতে কার্বন নিঃসরণ নিয়ে ভারত পাল্টা যুক্তিও পেশ করেছে। ভারতের বক্তব্য, ভারত বিকাশশীল দেশ,একটি দেশ যখন অনুন্নতি থেকে উন্নতির দিকে যায় তখন তার বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধির হার বেশিই হয়, কেন না সে একটা একটা করে সব তৈরি করছে। উন্নত দেশগুলিও এক দিন এই সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। তখন তাদেরও বৃদ্ধির হার বেশি ছিল। বেশি ছিল বলেই বাড়তে বাড়তে একটি উঁচু অঙ্কে গিয়ে থিতু হয়েছে। আর বিকাশের অধিকার যে হেতু সবার আছে সে হেতু বিকাশের এই পর্বে একটু বেশি নিঃসরণের অধিকার ভারতেরও আছে।
অকাট্য যুক্তি। আর এই যুক্তি পাল্টা যুক্তি থেকে বেরিয়ে আসছে অর্থনীতির বিকাশের সঙ্গে পরিবেশের গুণগত অবক্ষয়ের টানাপোড়েনটি। কিন্তু কেন এই টানাপোড়েন? বিদ্যুতের ব্যবহার কেন এই পরিবেশের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে? এই সব প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে কয়েকটি তথ্য জানা থাকলেই। যথা, পৃথিবীর মোট বিদ্যুতের চাহিদার ৬০ শতাংশ মেটে তাপবিদ্যুৎ থেকে; তাপবিদ্যুৎ তৈরি হয় কয়লা, তেল, গ্যাস পুড়িয়ে; কয়লা, তেল বা গ্যাসের দহন থেকে বাতাসে কার্বন মেশে, সেই কার্বন তৈরি করে বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো সমস্যা।
অর্থাৎ যত ময়লা কয়লাতে। কেননা মোট বিদ্যুতের চাহিদার গরিষ্ঠাংশ যেমন মেটে তাপবিদ্যুৎ থেকে, তেমনই তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মূলত কয়লা থেকে। ২০১১ সালে সেন্ট্রাল ইলেকট্রিক অথারিটির তথ্য অনুযায়ী উৎপাদন ক্ষমতার নিরিখে শক্তির উৎসগুলির অবস্থান এইরূপ --- তাপশক্তি (৬৪.৯৮ শতাংশ), জলবিদ্যুৎ (২১.৬৪ শতাংশ), পরমাণু বিদ্যুৎ (২.৭৫ শতাংশ), পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস (১০.৬৩ শতাংশ)। তাপশক্তির মধ্যে কয়লা-নির্ভর শক্তির উৎপাদন কেন্দ্রগুলির ক্ষমতা (৫৪.০৯ শতাংশ), গ্যাস-নির্ভর (১৫.২০ শতাংশ) ও তেল-নির্ভর (০.৬৯ শতাংশ) কেন্দ্রগুলির চেয়ে অনেক বেশি। আর উৎপাদনক্ষমতার হিসাব ছেড়ে যদি প্রকৃত উৎপাদনের হিসাব দেখি তা হলে দেখব কয়লা-নির্ভর কেন্দ্রগুলি ছাড়া অন্য উৎসগুলি তাদের উৎপাদনক্ষমতার চেয়ে অনেক কম উৎপাদন করে। ফলে মোট উৎপাদনের নিরিখে তাপবিদ্যুতের শতকরা অবদান আরও বেড়ে যায়। হিসেব বলছে ভারতের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭০ শতাংশ-এরও বেশি আসে কয়লার দহন থেকে।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/14/2020