পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিকে বিশ্ব আবহাওয়া সংকট মোচনের মোক্ষম প্রতিষেধক এবং শক্তি নিরাপত্তার মতো উন্নয়ন সহায়ক সুফলদায়ী হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তার ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ভাণ্ডার বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যপী জীবাশ্ম জ্বালানি সঞ্জাত শক্তি উৎপাদনের তুলনায় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন প্রসারে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৪ সালে সারা বিশ্বে যেখানে এই বিনিয়োগ ছিল ৩৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১১ সালে তা বেড়ে হয় ২৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১২ সালে এই বিনিয়োগ সামান্য কমে দাঁড়িয়েছিল ২৪৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিনিয়োগে এই পড়তির কারণ এই ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির বিনিয়োগ বিমুখতা এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য প্রযুক্তির মূল্য হ্রাস। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কিন্তু প্রতি বছরই বিনিয়োগ বেড়ে চলেছে। ২০১২ সালে সার্বিক বিনিয়োগের নিরিখে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ব্যবধান কমে ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
কমপক্ষে বিশ্বের ১৩৮টি দেশ ২০১২ সালের শেষে তাদের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে ফেলেছে। ২০১৩ সালের প্রারম্ভে ১২৭টি দেশ নিজেদের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি বিকাশ সহায়ক নীতি প্রণয়ন করেছে। এই দেশগুলির মধ্যে বেশির ভাগই বিকাশশীল রাষ্ট্র। যে হেতু এই ক্ষেত্রটি যথেষ্ট পরিণত, তাই বর্তমান পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি নীতি পরিমার্জনা করার প্রবণতাই বেশি। নতুন নীতি ও লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণের প্রবণতা কম।
বিশ্ব প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দৌড়ে ভারত যথেষ্ট সক্রিয়। লক্ষ্য হল, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ভাণ্ডার মজবুত করা। ভারত ২০২২ সালের মধ্যে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা ৭৪ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। এর মধ্যে ২০ গিগাওয়াট আসবে সৌরশক্তি থেকে। ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে ব্যবহার্য বিদ্যুতের ১৫ শতাংশ সংগ্রহ করা হবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসগুলি থেকে। এই লক্ষ্যের মধ্যে শুধুমাত্র গ্রিড–কানেকটেড পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিকে ধরা হয়েছে। যদিও ভারতের অফ-গ্রিড পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যার মধ্যে ২০২২ সালের মধ্যে দুই গিগাওয়াট অফ-গ্রিড সৌরশক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ৩০ গিগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদন ব্যবস্থা স্থাপন করার সুবাদে ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্ব প্রতিযোগিতায় যথেষ্ট এগিয়ে। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে ভারতের লক্ষ্য হল অতিরিক্ত ৩০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিকেন্দ্র স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কেন্দ্রীয় ব্যয় বরাদ্দ করা।
সূত্র : যোজনা, মে ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/22/2020