যদি আমরা কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রকের তথ্য বিশ্লেষণ করি তবে দেখতে পাব কী ভাবে কয়লা উৎপাদন বেড়েছে। ১৯৭০ সালে কয়লাখনির জাতীয়করণের সময় আমাদের দেশে কয়লা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭০ মিলিয়ন টন। ২০১২-১৩ তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫৭.৬৬ মিলিয়ন টন। দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭৯৫ মিলিয়ন টন। আগামী পাঁচ বছরে তবুও দেশে কয়লা চাহিদা-জোগানের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ঘাটতি দেখা দেবে। এই কারণে আগামী দিনে দেশে কয়লা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা হবে এবং বাড়তি চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানিও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে কয়লার অভাব নেই কিন্তু কয়লা অনুসন্ধান এবং নতুন খনির অনুসন্ধান এখনও একটি বড় সমস্যা। দেশে কয়লা, গ্যাস, তেলের খরচ যে ভাবে বেড়ে চলেছে এবং আগামী দিনে বাড়বে, তার বাড়তি চাপ আমাদের সহ্য করতে হবে। আমাদের মজুত ভাণ্ডার সীমিত। নতুন ভাণ্ডারের অনুসন্ধান চলেছে। এই কারণে আমাদের এখন লক্ষ্য পরমাণু শক্তি ও অচিরাচরিত শক্তি। এই দু’ ধরনের শক্তি যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদিত হলে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান করবে। এই জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে। আমাদের দেশ বায়ুশক্তির এক বিরাট বাজার। পৃথিবীর পঞ্চমতম। আগামী দিনে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চলছে। পরমাণু শক্তিকে কয়লা পোড়ানো বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২৫ বছরে পুরোপুরি কয়লা নয়, পরমাণুশক্তি ভারতের বিদ্যুতের চাহিদা অনেকাংশে মেটাবে। এই মুহূর্তে দেশে পাঁচটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে। আরও ১৮টি প্রকল্প অপেক্ষায় রয়েছে। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ আবদুল কালাম বায়োডিজেল উৎপাদনের পক্ষে ছিলেন। বায়োডিজেল, রিনিউয়েবল এবং কার্বন নিউট্রাল বায়োমাস উৎস ফসিল ফুয়েলের বিকল্প হতে পারে। তবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দাম এখনও যথেষ্ট বেশি। সেই কারণে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে চিরাচরিত ও অচিরাচরিত বিদ্যুৎ এক সঙ্গে বণ্টন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে অচিরাচরিত শক্তির ইউনিট পিছু দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। আগামী দিনে গবেষণার মাধ্যমে অচিরাচরিত শক্তির উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
সূত্র : যোজনা মে ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019