বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করছে। কারণ :
গোটা পৃথিবী জুড়ে ওষুধের অপব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খেয়ে বিপত্তি, ওষুধের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কার্যকারিতা শেষ অর্থাৎ Date expire হওয়া ওষুধ বাজারে অঢেল বিক্রি হওয়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নিষিদ্ধ ওষুধও বাজারে রম-রমিয়ে বিক্রি হওয়া এবং ক্রমবর্ধমান ওষুধের দাম সারা বিশ্বের মানুষের কাছে একটা বড় প্রশ্মবোধক চিহ্ন দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব জুড়ে কত যে ব্যাধি ও রোগ তার সঠিক হদিস মেলা ভার। যেমন ধরুন লম্বা হওয়া, চর্বি কমিয়ে রোগা হওয়া, লিভার ঠিক রাখা, অম্ল-গ্যাস দূর করা, ফর্সা হওয়া, এনার্জি ফিরে পাওয়া, অবসাদ দূর করা, মাথায় চুল বৃদ্ধি করা, টাকে চুল গজানো, শরীর ঠান্ডা রাখা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা, সর্দি-কাশি দূর করা, ত্বকের কোঁচকানো ভাব নিবারণ করা, যৌবনশক্তি ফিরে পাওয়া প্রভৃতির মতো শত শত রোগ-ব্যাধির ওষুধের তালিকায় শত শত ওষুধের নাম আছে । বিলাসবহুল আধুনিক জীবনযাত্রা পদ্ধিতির অবশ্যাম্ভাবী রকমারি প্রাকৃতিক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম হল নব নব রোগ ভোগের বিস্তার এবং পুরাতন রোগের নব বিক্রমে পুনরাবির্ভাবে। রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যানসার, বাত, ডায়াবেটিস, অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, এনকেফেলাইটিস আরও কত কী। উদ্বিগ্ন তথাকথিত উন্নত দেশসমূহ - প্রতিরোধের উৎস চাই – উৎস বলতে উন্নয়নশীল দেশগুলির বনৌষধি এবং অরণ্যবাসী ও আদিবাসীদের শতাব্দীপ্রাচীন লোকায়ত প্রজ্ঞা বা মেধা। খোঁজা আর খোঁজা – হদিস মিলেছে কিছু কিছু। প্রশ্ন উঠছে মেধাস্বত্ব অধিকার (ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট) নিয়ে – মেধাটি আদিবাসীর, পেটেন্ট নেবেন বহুজাতিক কোনও বাণিজ্যিক সংস্থা। ছাড় আছে শতাব্দীপ্রাচীন প্রজ্ঞার ক্ষেত্রে -- লিপিবদ্ধকৃত নথির কল্যাণে ছাড় পেল হলুদ। ভারতীয় বনৌষধির গুণাগুণ এবং অরণ্যবাসী ও আদিবাসীদের প্রজ্ঞা বা মেধার ওপর পেটেন্ট নিয়ে বহুজাতিক বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির প্রচেষ্টা ক্রমবর্ধমান।
মূল বিষয় হল আমাদের দেশের বনৌষধির গুণাগুণ ও তার ব্যবহার এবং প্রাচীন ও লোকায়ত প্রজ্ঞা বা মেধা সম্পর্কে আমরা কোনও তথ্য সংগ্রহ করিনি বা করলেও তা লিপিবদ্ধ করিনি বা পুথিপত্রের লেখাগুলো হাতে কলমে পরীক্ষার মাধ্যমে তুলনামূলক বিচার করে দেখিনি। যার ফলে ভেষজের গুণাগুণ নিয়ে আমরা নিজেরাই সন্দিহান। তাই, গাছগাছড়ার শিকড়-বাকড়ে অসুখ সারার কথা শুনলেই মনে করি ওগুলো সবই কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব আমাদের ধ্যানধারণায় ও কাজে-কর্মে সবর্ত্র দেখা যায়। ফলস্বরূপ অনেক ভারতীয় বনৌষধি এবং তার গুণাগুণের ওপর বহুজাতিক বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি পেটেন্ট করে নিয়েছে। মেধাস্বত্বাধিকারের দাবি আদায়ের জন্য ভেষজ ও তার প্রয়োগ পদ্ধতিতে প্রাচীন ও লোকায়ত প্রজ্ঞা বা মেধা এবং অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সন্ধান ও তার লিপিবদ্ধকরণ বর্তমানে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
সে জন্য আমাদের ভেষজ সম্পদের নথিভুক্তিকরণ চাই, শতাব্দীপ্রাচীন ও লোকায়ত প্রজ্ঞার সন্ধান, লিপিবদ্ধকরণ ও প্রমাণপত্র চাই। সর্বোপরি চাই সংরক্ষণ।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020