এ কথা এখন বহুজনগ্রাহ্য যে, কোনও দেশের জনসাধারণের সার্বিক সুস্থ থাকার বিষয়টি বিশেষ ভাবে নির্ভর করে সেই দেশের সুপেয় জলের সরবরাহ ও যথাযথ নির্মলীকরণের ব্যবস্থার মানের উপর। বলা বাহুল্য যে, একটি দেশ সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হবে যদি তার কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী সুস্থ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল থাকে, কারণ একটি সুস্থ সবল মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা আশা করা যায়, এক জন দুর্বল, অশক্ত, রোগজীর্ণ কর্মীর কাছ থেকে সেই কর্মক্ষমতা আশা করা যায় না। পরিণামে দেশের উন্নয়ন সঠিক মাত্রায় পৌঁছতে পারে না। দেশকে বহু সংখ্যক রুগ্ন ও অশক্ত মানুষের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। নির্মলীকরণের কাজে ব্যবহৃত অর্থ কিন্তু আবার ঘুরপথে দেশকে সমৃদ্ধতর করে তুলতে সাহায্য করে। আর সুস্থ এবং সবল মানুষের কাছে সুপেয় জল অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এ বিষয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মহানির্দেশক মার্গারেট চ্যান বুদাপেস্ট কমফারেন্সে (৯ আগস্ট ২০১৩) যা বলেছিলেন তা বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্য ---
‘‘ব্যবহারিক জীবনে নিচু মানের নির্মলীকরণ ব্যবস্থা, অপরিষ্কার তথা অপরিশুদ্ধ জলের ব্যবহার এবং সার্বিক অপরিচ্ছন্নতা মানুষের স্বাস্থ্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে — মানুষকে নির্জীব, নিস্তেজ ও বলহীন করে। পরিবেশের অন্য কোনও কিছুই এগুলির মতো এত ব্যাপক ক্ষতিসাধক নয়। স্বাস্থ্যের ওপর এর ফালফল পরিমাপযোগ্য, এমনকী এর দাম হিসাব করা যায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, মানুষকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও উৎপাদনশীল রাখার জন্য এবং শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য যদি এক ডলার খরচ করা হয়, তবে ওই খরচের প্রতিদান হিসাবে দেশের অর্থনীতিতে সাড়ে পাঁচ ডলার ফেরত আসবে।’’ অর্থাৎ ডবলুএইচও-র এই নির্দেশিকা স্পষ্ট বলে দিচ্ছে স্বচ্ছতার উপর দেশের আর্থিক বৃদ্ধির পরোক্ষ যোগ রয়েছে। মান্যতা দিয়েই ভারতে স্বচ্ছতা অভিযান শুরু হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ কমানো এবং আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে নাগরিকদের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করা।
সুত্রঃ যোজনা জানুয়ারী ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020