সোয়াইন ফ্লু প্রতিষেধকের দরকার আছে কি? আছে বই কি। কিন্তু সকলের জন্য নয়। ইংল্যান্ডের মতো উন্নত দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা এনএইচএস-ও (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) এই প্রতিষেধক সকলের জন্য সুপারিশ করে না। বিলেতের যে এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস)-কে দুনিয়ায় জনস্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে মডেল মানা হয়, তারাও সবাইকে এ প্রতিষেধক দেওয়ার পক্ষে সুপারিশ করে না। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তেমন বয়স্কদের প্রতিষেধক দরকার। সময়ের আগে জন্মানো যে সব শিশুর হৃদদন্ত্র কিংবা ফুসফুসে জন্মগত ত্রুটি রয়েছে, তাদেরও প্রতিষেধক দেওয়া একান্ত জরুরি। এই দুই শ্রেণির বাইরে বাকিদের (১১-৬০ বছর বয়সি) যদি রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত কোনও মারাত্মক শারীরিক সমস্যা না-থাকে, অথবা কোনও কারণে দীর্ঘ দিন যদি কারও স্টেরয়েড চিকিত্সা না-হয়, তা হলে ফ্লু ভ্যাকসিন দরকারই পড়ে না। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রকও একই কথা বলছে। তবে হ্যাঁ, কিছু সিদ্ধান্ত চিকিত্সকের উপর ছাড়াই ভালো। ক্ষেত্রবিশেষে লক্ষণ-উপসর্গ দেখে চিকিত্সক এই তালিকার বাইরের কাউকেও দিতে পারেন এই প্রতিষেধক। তবে বাস্তবে দেখা যায়, এই প্রতিষেধক ছাড়াই কোটি কোটি মানুষের শরীরে সোয়াইন ফ্লুয়ের বিরুদ্ধে ‘ন্যাচারাল ইমিউনিটি’ গড়ে উঠেছে। সে কারণেই আমি-আপনি এখনও এই প্রকোপের মধ্যেও আক্রান্ত হইনি এ রোগে। তবে কি থোড়াই কেয়ার? কোনও অসুখ নিয়ে প্যানিক করব না মানে কিন্তু রোগটাকেই অগ্রাহ্য করব, এমন নয়। যে কোনও রোগের মতো সোয়াইন ফ্লু-কেও অবহেলা করলে ভুগতে হতে পারে। এ রোগের উপসর্গগুলো যে হেতু আর পাঁচটা ভাইরাল জ্বরের মতোই, তাই নিয়মিত হাত ধোয়া, বেশি জনসমাগমের মধ্যে না-যাওয়ার মতো সাধারণ কয়েকটি সতর্কতা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। মোদ্দা কথা, সোয়াইন ফ্লু হলে মানুষ বাঁচবে, এটাই স্বাভাবিক। মারা যাওয়াটা নেহাতই দুর্ভাগ্যজনক ব্যতিক্রম।
যে গণ-উন্মাদনা ও আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছে, তা স্রেফ ভিত্তিহীন। আমাদের দুর্ভাগ্য, এদেশে সোয়াইন ফ্লুয়ের প্রতিষেধক নিয়ে যে প্রচার (সরকারি বিজ্ঞাপন ছাড়া) গণমাধ্যমগুলিতে হয়, তার ১ শতাংশও হয় না যক্ষ্মার চিকিত্সা বা হামের টিকা নিয়ে। এর প্রকৃত কারণ কী, তা মাথা ঘামালেই বুঝতে পারবেন বুদ্ধিমান পাঠক। নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ঘুরপথে না বাণিজ্যের উপভোক্তা হয়ে পড়ি!
সূত্র : এই সময়, ১৭ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020