উত্তরে সিঁথি থেকে দক্ষিণে আনোয়ার শাহ রোড। পূর্বে চৌবাগা থেকে পশ্চিমে চিত্পুর। মহানগরের বিভিন্ন এলাকার জলে উদ্বেগজনক মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গেলেও তার মোকাবিলায় কার্যত হাত গুটিয়ে বসে থাকছে রাজ্য সরকার। জেলায় জেলায় গ্রামাঞ্চলে ‘জল ধরো, জল ভরো’ জাতীয় প্রকল্পের মাধ্যমে আর্সেনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হলেও খোদ কলকাতায় আর্সেনিকের থাবা রোখা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছে রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর। এর জন্য পরোক্ষে কলকাতা পুরসভাকে দায়ী করছে তারা। বৃহত্তর কলকাতায় যে রকম লাগামছাড়া ভাবে বহুতল তৈরি হচ্ছে এবং ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে, তাতে আর্সেনিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে মনে করছেন জল সম্পদ দফতরের কর্তারা। মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় কলকাতা পুর এলাকায় যে আর্সেনিক দূষণের চিত্র জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র তুলে ধরেছেন তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। যদিও রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী জলসম্পদ দফতরের এই সমীক্ষাকে গুরুত্ব দিতে চাননি। তিনি এ দিন পুরসভার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই রিপোর্টকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। পুরসভা ইতিমধ্যে নানা প্রকল্প নিয়েছে।’ জনস্বাস্থ্য দফতরের মন্ত্রী গুরুত্ব না দিলেও কলকাতা পুর এলাকার ৩১টি এলাকায় জল সম্পদ উন্নয়ন দফতর যে সমীক্ষা চালিয়েছে তাতে নয়টি এলাকায় জলে আর্সেনিকের মাত্রা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ১১টি এলাকায় আর্সেনিক যে কোনও দিন সহনমাত্রা পেরিয়ে যেতে পারে। বাকি ১১টি এলাকায় জলে আর্সেনিকের উপস্থিতি এখনও নগণ্য হওয়ায় এই এলাকাগুলি আপাতত ‘নিরাপদ’ বলে মনে করছেন সমীক্ষকরা। এ দিন বিধানসভায় কলকাতার যে আর্সেনিক-চিত্র সৌমেনবাবু তুলে ধরেছেন সেখানে গোলাম মহম্মদ শা রোড, আনোয়ার শা রোড, সিঁথি মোড়, বিবেকানন্দ রোড, দরগা রোড, বাবুঘাট এলাকা, চৌবাগা, গড়িয়া, বরানগরের আর কে মুখার্জি রোডে ভূগর্ভস্থ জলে উদ্বেগজনক মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে। যে এলাকাগুলিতে যে কোনও দিন আর্সেনিকের মাত্রা উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে সেই এলাকাগুলি হল আর্মহাস্ট স্ট্রিট, পশ্চিম নারায়ণতলা প্রভৃতি এলাকা। মধ্য কলকাতার এপিসি রোড, কনভেন্ট রোড প্রভৃতি এলাকায় জলের নমুনায় আর্সেনিকের উপস্থিতি নগণ্য। বৃহত্তর কলকাতার তেঘরিয়া, কৈখালি, লেকটাউন, ঘোলাঘাটা এলাকায় যে সমীক্ষা চালানো হয়েছে সেখানে আর্সেনিকের মাত্রা উদ্বেগজনক নয়।
সূত্র : এই সময়, ৪ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020