পৃথিবীর উপরি ভাগের ভূমিস্তরে যে মৌলগুলি অবস্থান করে তাদের মধ্যে আর্সেনিক ২০তম। আর্সেনিকের আকরিকগুলির মধ্যে Realgar (As4S4বা AsS), Arsenopyrity (FeAsS) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। (ছবি ৬) পরিবেশে আর্সেনিক বিভিন্ন জৈব (MMA, DMA) ও অজৈব (আর্সেনাইট Aso3-3, আর্সেনেট Aso4-3) যৌগ রূপে অবস্থান করে। তবে জৈব যৌগের চেয়ে অজৈব যৌগগুলি বেশি ক্ষতিকর। আবার বিষক্রিয়ার নিরিখে আর্সেনাইট (আর্সেনিকের জারণ সংখ্যা “+3”) যৌগগুলি আর্সেনেট (আর্সেনিকের জারণ সংখ্যা “+5”)- এর চেয়ে অনেকটা বেশি বিষাক্ত। ভূপৃষ্ঠের উপরি ভাগের জলভাগ, যাতে অগভীর ভূগর্ভস্থ জলস্তরের সঙ্গে যোগ নেই তা সাধারণত আর্সেনিকের দূষণমুক্ত হয়। বিষাক্ত আর্সেনিক অগভীর নলকূপ ও পাম্পের দ্বারা ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছয়। বন্যা হলে আর্সেনিক কবলিত অঞ্চলে বন্যার জলে অক্সিজেন কম থাকার দরুন আর্সেনাইট যৌগগুলির আধিক্য ঘটে ও বন্যার জলে প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকাকে দূষিত করতে পারে। অত্যধিক গরম এবং খরার সময়েও জলের অধিক বাষ্পায়নের হারের ফলে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে আর্সেনাইট যৌগগুলিরও পরিমাণ বাড়তে পারে। সাম্প্রতিককালে আর্সেনিক দূষণের মূল উৎস কৃষির প্রয়োজনে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে নলকূপের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ জলে ব্যবহার। স্মর্তব্য এই দেশে ব্যবহৃত জলের শতকরা ৮০ শতাংশ যায় কৃষিতে।
আর্সেনিক যুক্ত জল দ্বারা চাষবাদ করলে খাদ্য শস্যে আর্সেনিক জমা হতে পারে যা আর্সেনিক দূষণ ছড়াতে পারে। পৃথিবীর কিছু কিছু অঞ্চলে সেচের জলে আর্সেনিকের পরিমাণ মাত্রাধিক থাকায় খুব বেশি মাত্রায় আর্সেনিক ঐ অঞ্চলে উৎপাদিত শস্য, ফলমূল, শাকসবজিতে সঞ্চিত হয় যা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই অঞ্চলগুলিকে হিসাবে ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিতকরণ করে খাদ্যদ্রব্য রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জানানো হচ্ছে।
শুধু প্রাকৃতিক ভাবেই নয়, আর্সেনিক কলকারখানা ও খনি থেকেও ছড়াতে পারে। কাঠ সংরক্ষণের জন্য যে আর্সেনিক যুক্ত যৌগ (CCA) ব্যবহৃত হয় তা থেকেও আর্সেনিক দূষণ ছড়াতে পারে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কলকারখানায় আর্সেনিক যুক্ত কয়লার দহনের ফলে আর্সেনিক গ্যাসীয় বা ক্ষুদ্র ভাসমান কণা রূপে বাতাসে মিশে মাটি ও জলে সঞ্চিত হতে পারে। আর্সেনিক যুক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিমাত্রায় ব্যবহারও আর্সেনিক দূষণ ঘটায়।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020