১৮০০ সালের গোড়ার দিকে জাপানের উত্তর প্রান্তের কিছু প্রদেশে বৌদ্ধভিক্ষুদের নির্বাণ লাভের একটি অভিনব প্রথা অনুযায়ী এঁরা সজ্ঞানে বহু দিন স্বল্পাহারে ও মাত্রাধিক পরিমাণ আর্সেনিকযুক্ত খাবার খেয়ে দীর্ঘ কৃচ্ছসাধন করতেন যত দিন পর্যন্ত না হয় মৃত্যু হয়। যাঁদের দেহে অতিমাত্রায় আর্সেনিক জমা হত, মৃত্যুর পরেও তাঁদের দেহ একেবারে নষ্ট হত না, মমিতে পরিণত হত। এই পদ্ধতিকে ‘সোকুশিনবুতসু’ বলা হয়। অবশ্য শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষুকের মধ্যে মাত্র ২৪ জনই এই প্রক্রিয়ায় সফল হয়েছিলেন ও তাঁদের দেহ অত্যন্ত সন্মানের সাথে স্থান পেয়েছিল বিভিন্ন মন্দিরে। ইতিহাসে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু ও মৃতদেহের মমিকরণের সব চেয়ে চাঞ্চল্যকর কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক চিত্রটি পাওয়া গিয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার ‘চিলি’তে। এই দেশে প্রায় ২০০টি মমি পাওয়া যায় যাদের আজ থেকে ৭০০০-৬০০০ বছর আগে মমিকৃত করা হয়েছিল।
এই মমিগুলির দেহে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি এই অঞ্চলের হতভাগ্য মানুষগুলির মৃত্যুর কারণ বলে মনে করা হয়। শুধু তাই নয়। গবেষণার ফলে চিলির বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পানীয় জলে আর্সেনিকের উপস্থিতির তথ্য উৎঘাটিত হয় যার ফলে প্রাচীন যুগ থেকে ঐ অঞ্চলে বিপুল হারে শিশুমৃত্যু ঘটে আসছে।
ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের মাত্রাধিক উপস্থিতির ফলে চিলির বিশাল অঞ্চল জুড়ে লক্ষাধিক মানুষের জীবনে এই দুর্যোগ কিন্তু আজ কোনও বিক্ষপ্ত ঘটনা নয়। পৃথিবীর ২০টিরও বেশি দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ জ্ঞাত বা অজ্ঞাত ভাবে এই সমস্যায় জর্জরিত।
এই দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ পরিস্থিতি আজ এশিয়া মহাদেশের বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, চিন ও তাইওয়ানে। আর্সেনিক দূষণের কবল থেকে রেহাই পায়নি কম্বোডিয়া, মায়ানমার, পাকিস্তান এবং নেপালও। খুব স্বাভাবিক ভাবে এই পরিস্থিতি কপালে ভাঁজ ফেলার মতো। অথচ আমাদের দেশে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার অব্যাহত। ফলে ক্রমশ আমাদের দেশে আর্সেনিকপ্রবণ এলাকার সংখ্যা বাড়ছে।ফলে বাড়ছে আর্সেনিক জনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা।
সূত্র : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংসদ ও দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020