দূষিত মাটি ও ভূগর্ভস্থ জল শোধনে মাইক্রোব ব্যবহার করাকে বলে বায়োরেমিডিয়েশন। ব্যাকটিরিয়ার মতো জীবাণুকে মাইক্রোব বলা হয়। দূষণকারী পদার্থ কিছু মাইক্রোবের খাদ্য। এদের শক্তির উত্সও বটে। বায়োরেমিডিয়েশনের মাধ্যমে এ সব মাইক্রোবের সংখ্যা বাড়ানো হয়। তেল অন্যান্য পেট্রো পদার্থ, দ্রাবক (সলভেন্ট) ও কীটনাশক পদার্থ খেয়ে ফেলে ব্যাকটিরিয়া এ সবের দূষণ থেকে পরিবেশ বাঁচায়। মানুষের কোনও ক্ষতি হয় না এ সব ব্যাকটিরিয়া থেকে। এরা ধাতু ধ্বংস করতে পারে না বটে। তবে এক তাজ্জব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ধাতুর রাসায়নিক ধর্ম বদলে দিতে পারে এ সব অতি সূক্ষ্ম জীবাণু। বায়োরেমিডিয়েশনের সময় ধাতু ও মাইক্রোবের পারস্পরিক ক্রিয়ার (ইনট্রাঅ্যাকশন) বিভিন্ন পদ্ধতিতে নীচে দেওয়া হল।
এখন গবেষণায় বৈদ্যুতিন বর্জ্য দূষিত মাটিতে ভারী ধাতু জমার পরিমাণ, সেই মাটির ভৌত রাসায়নিক গঠন ও দূষিত মাটি শোধনে সক্ষম জীবাণুর শ্রেণিবিভাগের দিকে নজর পড়েছে। দূষিত জমি শোধনের জন্য ব্যবহৃত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুর চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়েছে ১৬এস আরডিএনএ পদ্ধতি। নিয়ন্ত্রিত পারিপার্শ্বিক অবস্থায় ভারী ধাতু মিশ্রিত মাটি ব্যাকটিরিয়ার মাধ্যমে দূষণ মুক্ত করা হয়েছে। ইনকিউবেটর (জীবাণু বৃদ্ধিকারী যন্ত্র) শেকারে বিভিন্ন মাইক্রোবকে সিসে, তামা, ক্যাডমিয়াম ও দস্তার মতো ভারী ধাতুর মধ্যে রেখে পরীক্ষা চলে। ১৬এস আরডিএনএ টেকনিক ব্লাস্ট অ্যান্ড ফাইলোজেনেটিক অ্যানালাসিসের সাহায্যে এ সব ধাতুর মাঝেও দিব্যি বেঁচে বর্তে থাকে মাইক্রোঅর্গানিজমগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শনাক্ত করা গেছে বৈদ্যুতিন বর্জ্য শোধনে করিৎকর্মা স্থানীয় জীবাণুগুলিকে (ইনডিজিনাস মাইক্রোঅরগানিজম)।
পরিবেশে ভারী ধাতু সেঁধালে জীবাণু ও তাদের ক্রিয়াকর্মে যথেষ্ট রদবদল হতে পারে (ডয়েলম্যান ও অন্যান্য, ১৯৯৪; হিরোকি, ১৯৯৪)। আবশ্যক ধাতব আয়ন সরিয়ে দিয়ে বা জৈব মৌলের গঠনে হেরফের করে ভারী ধাতু সাধারণত জীবাণুদের পক্ষে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে (ডয়েলম্যান ও অন্যান্য, ১৯৯৪; গ্যাড ও গ্রিফিথস, ১৯৭৮; উড এবং ওয়াং, ১৯৮৩)। তবে কোবাল্ট, তামা, দস্তা ও নিকেলের মতো কিছু ভারী ধাতু সামান্য মাত্রায় থাকাটা জীবাণুর পক্ষে আবশ্যক।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সামুদ্রিক আগাছা (অ্যালগা) ও ব্যাকটিরিয়া অপেক্ষাকৃত বৃহৎ পরিমাণ ধনাত্মক ধাতব আয়নকে রাসায়নিক কমপ্লেক্সে পরিণত করে (স্ট্রান্ডবার্গ ও অন্যান্য, ১৯৮১)। পরিশোষণ আন্ত:ক্রিয়ার পাশাপাশি জীবাণুসমাজ ধাতব আয়ন বাড়াতে সমর্থ (সিলভার, ১৯৯৬)। ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক, সামুদ্রিক আগাছা ও অ্যাকটিনোমাইসিটিজ-এর মতো মাইক্রোব ভারী ধাতু অপসারণ করতে খুব কাজের। কৃত্রিম উপায়ে দূষিত মাটি থেকে ক্যাডমিয়াম, কোবাল্ট, ক্রোমিয়াম, তামা, ম্যাঙ্গানিজ ও নিকেল ধাতু নিষ্কাশন করা হয়। মাটির খনিজ পদার্থ থেকে নিষ্কাশিত ধাতুর মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল দস্তা। ম্যাঙ্গানিজ ও নিকেল বের করা গিয়েছিল খুব অল্প। লোহা, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ উপাদানও নিষ্কাশিত করা হয়। এত সব সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত মাটির ভর কমে মাত্র দশ শতাংশ। শিল্প বর্জ্য দূষিত মাটি নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা চলে। প্রধান তিন বিষাক্ত ধাতু তামা, ম্যাঙ্গানিজ ও নিকেলের মোটামুটি ৬৯ শতাংশ ১৭৫ দিনে অপসারণ কর সম্ভব হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/20/2019